মে, ১৯, ২০২৫
দেশলাই
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্পসরগম
    • উপন্যাস
    • অণুগল্প ও অণুগল্প বিষয়ক
  • গদ্যধারা
  • উড়ন্তডুবুরী
    • সাক্ষাৎকার
    • রিভিউ
  • এক্সিবিশন
  • শিল্প
    • নাটক
    • চলচ্চিত্র
  • ধারাবাহিক
  • বিশেষ সংখ্যা
  • ডিরেক্টরি
    • মেলা
    • নাটক দল
    • বাউল দল
    • সাংস্কৃতিক সংগঠন
    • পাঠাগার
    • থিয়েটার
    • স্মরণ
    • প্রত্নতত্ত্ব
    • সাহিত্য পুরস্কার
    • প্রকাশনা সংস্থা
  • কেনাকাটা
    • বই : গদ্য
    • বই : গল্প
    • বই : কবিতা
    • বই : উপন্যাস
    • বই : দেড়ফর্মা
    • বই : নাটক ও চলচ্চিত্র
    • বই : ছড়া
    • লিটলম্যাগ
দেশলাই
দেশলাই
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্পসরগম
    • উপন্যাস
    • অণুগল্প ও অণুগল্প বিষয়ক
  • গদ্যধারা
  • উড়ন্তডুবুরী
    • সাক্ষাৎকার
    • রিভিউ
  • এক্সিবিশন
  • শিল্প
    • নাটক
    • চলচ্চিত্র
  • ধারাবাহিক
  • বিশেষ সংখ্যা
  • ডিরেক্টরি
    • মেলা
    • নাটক দল
    • বাউল দল
    • সাংস্কৃতিক সংগঠন
    • পাঠাগার
    • থিয়েটার
    • স্মরণ
    • প্রত্নতত্ত্ব
    • সাহিত্য পুরস্কার
    • প্রকাশনা সংস্থা
  • কেনাকাটা
    • বই : গদ্য
    • বই : গল্প
    • বই : কবিতা
    • বই : উপন্যাস
    • বই : দেড়ফর্মা
    • বই : নাটক ও চলচ্চিত্র
    • বই : ছড়া
    • লিটলম্যাগ
টাইপ করা শুরু করুন এবং বন্ধ করতে "এন্টার" বা "ESC" টিপুন
  1. আপনি দেখছেন: হোম >> অরুণরাগের লগ্নে ...

অরুণরাগের লগ্নে

হাসিন এহ্সাস লগ্ন

মে, ২৩, ২০২৪
অলংকরন: সুমন দীপ

জন্মদিন

কিছু বিলো এভারেজ কবিতা
এখন তোমার পড়তে হবে।
অনুপ্রাসের মতো তোমার ভালো লাগে না কিছুই।
পড়ো, প’ড়ে প’ড়ে চলে যাও
অনন্ত কুহু কুহু মহড়ার দিকে।
আর যথারীতি উৎপিপাসু প্রাণের দিকে
মেলে ধরো উৎপ্রাস।
তারপর ক্রমাগত ভ্রমাকুল ভুলে
কুরুশ-কাঁটা বুনে দিই তোমার চুলে।


পূর্বরাগ

“আমার প্রস্তাবনা, আমরা আজকে হাঁটবো না। একজায়গায় বসে থেকে গল্প-টল্প করি।
আর কাগজিলেবুর শরবত-টরবত খাই।”
কাগজিলেবুর শরবত? কী সেটা?
কাগজিলেবুর শরবত হ’লো কাগজিলেবুর শরবত।
হুম, খাই... আর ঢুকে পড়ি ভ্রমজালের মুহুর্মুহুতায়। 
(‘বিড়ি... আমরা খাবো, তবে তার আগে... চুমু খাই!’)
তারপর অন্ধ প্রিজমের মাঝে আয়নায় ছবি তোলা।
(ইশ্, আমাদের কারোর ফোনে ভালো ক্যামেরা ছিলোনা!)
সেই ফাঁকে কখন পোকামাকড় কাটে ইরেজার,
সরোবরে ফুলবিস্ফার,
প্রেম-প্রমিতাক্ষর, শৃঙ্গার।
তুমি, একটা ছোট্ট ক্যারাভান।
কোনোপ্রকার শঙ্খের প্রয়োজন ছাড়া শোনা যায় সমুদ্র-শোর।
লিরিক্যাল লেইসফিতার মতো অপ্রাপনীয় সুন্দর অবসিত হয়ে আসে।
হয়তো থেকে যাবে বিড়ালের গলার ঘণ্টারেশের মতো।
এখন চলো বিড়ি খাই, আর ভাবি,
কীভাবে এইসব বৈশাখ-বর্ষা-আশ্বিন-ভাদর
শুধু হাতে হাত রেখে পেরোবে আমার বৃষস্যন্তী-বাসনারা...


পরত পরত ঘুমহীনতা

স্বপ্নে পাওয়া তোমাকে হারাতে দিয়ে গিলে ফেলা হ’লো আইসক্রিমের সাথে।
চকলেট সিরাপের ঔদ্ধত্যের কাছে হেরেই যাবে?
তবুও তারপর...
অ্যানটিক্সের ধোঁয়া ধোঁয়া প্রলেপের মাঝেই হয়তো তোমাকে পাওয়া যাবে সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতর।
তুমি কতগুলো আপেল বীজ, স্ফটিক-রুদ্রাক্ষ,
হুটহাট অমৃত-স্বাদের আশ্বাস, সকাল-সন্ধ্যা স্নান ম্রিয়মান,
কেবল গ্রাইন্ডারে লেগে থাকা বাড়তি মশলার গা থেকে প্রত্যহ আসে পৌরুষের ঘ্রাণ।


সান-ট্যুইস-থার্স

তারে দেখতে থাকো, প্রিয় সাবান গলতে সময় নেয় যতটুকু।
তারে দেখতে থাকো, ফেস পাওডার তলানিতে পৌঁছোনো পর্যন্ত।
‘পরভৃৎ’ থেকে ‘পরভৃত’ হবার সময়কালটুকু তারে দ্যাখো।
‘পরিবর্তন চাই’ থেকে ‘পরিবর্তন সম্ভব’ এই বিশ্বাসের ভেতর তারে রাখো।
তুমি নিশ্চয়ই জানো, শুয়োরের প্রসববেদনা থাকে কতক্ষণ।
ঐটুকু সময় তারে দ্যাখো।
সূর্যের মধ্যে কালো-সাদা-লাল ছড়ায়ে তারে দ্যাখো।
যতক্ষণে তোমার বিড়ি ধরানো, টানা এবং ধোঁয়া ছাড়ারে মনে হবে ‘পিওর আর্ট’, ততক্ষণ অবধি দ্যাখো।
তোমার এখন আর ইউটিউব ঘেঁটে ‘সুফি হোয়ার্লিং’ দেখতে হয়না, তুমি তো শুনতে পাও তার স্বর!
কীভাবে তা ধীরলয়ে ঘুরে তোমার কাছে আসে।
তুমি দ্যাখো।
বাচ্চার হাতে বেলুনের অস্তিত্ব যতক্ষণ,
কিংবা বাবলওয়ান্ড থেকে ছোড়া বাবলের,
ততক্ষণ হলেও।
তারপর মিশায়ে দিতে পারো, ‘বাষ্পের সহিত বাতাসের মতো’।


পড়ছে গলে ব্লু

সন্ধ্যার আজানের মতো উদ্বেল এলোমেলোমি নিয়ে এসো।
কিংবা দুপুর-ঘুমের পরের কূলাতিক্রান্ত বিষাদ।
তখন ভরসন্ধ্যাকে সকাল বলে ভ্রম হয়।
তুমি কি শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল!
পুকুরে চাঁদের ছায়া?
জলবৎ হও, জোন বায়েজের গানের মতো।
তুমিও তো বলেছিলে, আমার পোয়েট্রি ‘লাউজি’।
কৃষ্ণচূড়ার তল থেকে ডাকে ঘিয়ারঙের কুকুর,
বাষ্পীভূত চুমুরা ঘনীভূত হতে থাকে আর
ওপারে হয় রেভল্যুশনারি স্পিরিটের বিসর্জন
শুধু দাঁড়ায়ে আছো তুমি ঠায়, আনওয়াশড্ ফেনোমেনন।


ভাসা-ভাসা ট্যারান্টুলা

অকস্মাৎ পড়ে থাকা লেবুপাতার পাখায় করে উড়ে বেড়াও তুমি।
আর তোমাকে ভেসে থাকতে দেখেছি সাদা ক্রিমের কৌটায়।
স্ট্যাপলারের শেষ পিনটা ধরে ঝুলে থাকতে
খুব ভালো লাগে তোমার।
কিন্তু তোমাকে দেয়ালিকার আলপিনে বিঁধিয়েছে কে?
হরবোলা যুবক, তুমি তো জানো সঞ্চারিত মেঘের পুনঃসঞ্চার হচ্ছে তোমার জন্য।
মন্থর মন্থর জমাও বকুল কোরক,
মেশাও সরোবরে।
চার বিলিয়ন কত অল্প সময়!
এই যে তুমি, বন্দি একটা হুঁকোর খোলে।
কেমন লাগে?
কিসমিসে রোজ জল দাও তুমি?
কিসমিস আছে?
বলো এখন তুমি কি করবে!
শসার স্লাইসে চিলি ফ্লেক্সের মতো মিশবে? অ্যাম্ফেটামিনের বৃষ্টি নামাবে?
শহরের উপান্তে তোমায় দেখে গিমিকমাখা উচ্ছ্বাস আসে।
‘গোপন চিঠিই কি তোমার লিরিক?’
যার কোনো মানে নেই, তা নিয়ে এত ভয় পাও কেন তুমি?
রেডিয়েটারের ওপর ভুল করে ফেলে রাখা পোস্টকার্ড।
‘যা ঘটবার তা ঘটতে থাকে
আমরা প্রতিবাদ করি
করতে করতে ঘুমোই
ঘুমোতে ঘুমোতে কথা বলি
যা ঘটবার ঘটতে থাকে।’


দুপুরে

এইরকম অর্ডিনারি নস্টালজিক দুপুরে
বারান্দা থেকে ব্যাগ ঝুলায়ে গোলাপিরঙা দড়ি টাইনা আইসক্রিম খাইতেসি।
সজনে পাতার ওপর একটুখানি রোদ পড়সে।
পুঁইয়ের ডাটায় নতুন কুঁড়ি আসে,
বেগুনি বাড়ির ছাদটাতে কোকিল ডাইকা উঠলো পুনর্বার।
গলায় সুর আসে, ‘দূর শাখে পিক ডাকে বিরামবিহীন...’
‘চলে যায় মরি হায় বসন্তের দিন’ গানটা আজকের মতো দুপুরের জন্যেই।
দূরে কোথাও লাল দালানের ইট খইসা পড়লো।
এলোমেলো ভাবতেসি বিকেলে চুল কাটতে গেলে কোন কাটটা দেবো।
ইলেকট্রিসিটির তারে সাদাকালো পাখা মেইলা ধরলো দোয়েল।
এমন সুন্দর দুপুরেও তোমার অস্বাভাবিক মুখ আছে ভাইসা।
তুমি যেন নাইন্টিজের বিয়ের ভিডিওগুলোর মতো, সিডির মধ্যে বন্দি।
আগলায়ে রাখার সে কী চেষ্টা!
অথচ কম্পিউটারে দেয়া হয় কদাচিৎ।
ভাবি, এই কবিতার নাম ‘দুপুরে’।
আর পোস্ট করার পর হয়তো ট্যাগ দেবো ‘ফিলিং লস্ট’।
পরক্ষণেই মনে পড়ে,
এই নামে ভাস্করের কবিতা আছে তো!
‘সব দূরে গেছে আজ— উপমাও যায় দূরে— উৎকীর্ণ দিন!’


জাগ্যুলার

তোমার জাগ্যুলার শিরাগুলোর ওপর
এঁকেবেঁকে, বেঁকেএঁকে সাইকেল ঘোরাতে ভালো লাগে।
কখনও কখনও সেগুলোয় ক্যাডবেরি-রঙ ধরে।
কৈবর্তজীবনের অস্তিত্ব-সংকট হাতে রেখে
ইচ্ছে করে একটুখানি সাঁতার কাটি।
এখানে চলা দাঁশাই পরবে দেখি বৃত্তাকারে-অর্ধবৃত্তাকারে ঘোরার নান্দনিক-সৌকর্য।
কিংবা মাটি-পাথরের ন্যাড়া পাহাড়।
কোথাও-কোথাও দু’এক প্রস্থ জেদি একগুঁয়ে ঘাসের চাঁই মাটি কামড়ে রয়ে গিয়েছে তখনও।
ঘাট-আঘাটার প্রান্তে একলা ভেজে কাকতাড়ুয়া।
আবার ‘শান্ত এই বনভূমির ভিতরে ঢুকে শৃঙ্গারে শৃঙ্গারে সঙ্গমে সঙ্গমে অভুক্ত উদগার নিয়ে মিশে যাই... আমাদের হৃদশক্তি কেঁপে কেঁপে ওঠে, আমাদের চিৎশক্তি কেঁপে কেঁপে ওঠে।’
সাঁড়াশি অভিযানের পর বাকি থাকে কিছু?
তারা তো পালায়।
দিগ্বিদিক ছুটে ছুটে অতলান্ত পায়।
তোমার জাগ্যুলার শিরাগুলো উপড়ে ফেলা হলো,
আর একটা কবিতার নিষ্পত্তি।


নির্ভার জলমগ্নতা

কেন বাতাসে ভাসা তুলোদের পেছনে দৌড়ে যাওয়া,
টায়ার ঘোরানো ছেলেটার উদ্যম... সব তোমাকে দেখাতে ইচ্ছে করে!
ওই যে বেড়াল ঠোঁটে এঁটেছে কাঁটা, ধ’নের গাছে এসেছে নতুন ঘ্রাণ, মাড়াইয়ের পর ধান কত ভালো লাগে...
কেন বলবো তোমাকেই?
রাস্তায় রোদে ভিজলাম আড়াই ঘণ্টা, বাসায় পানি নেই কোত্থাও, ঘনঘন গিলছি কাশির সিরাপ... সেসবও বলবো।
কেন একটু না বললেই শ্বাস ফেলতে হয় কচুরিপানার ফাঁপরে?
নিজেকে মনে হয় ঢোলকলমিবদ্ধ জলাশয়!
কামারের ক্লান্ত খটখটাখট, মুদি দোকানের ভ্যাপসা মনোটোনাস উষ্ণতা... সব বোঝাবো তোমাকে।
তুমি দেখতে পাও আমার চোখ দিয়ে?
পৃথিবীর সব সমুদ্রভরা চোখ নিয়ে?
নেবো কি তোমাকে অক্ষিকোটরে পুরে!
সাইবেরিয় শীতল শীতে উড়ে!
আহা আহা!
ভ্রম ঠেলে দেখি, কোথায় আমি! সমস্তকিছু বন্ধক।
তুমি হ্যাপি প্রিন্স, আর আমি তার চাতক।


অস্তিত্বসংকটে ক্যাটারপিলার

তোমার ঘুমজড়ানো গলা—
রঙিন ফিতের মেয়েটা স্কুলে যাচ্ছে।
তুমি ঘুমোচ্ছো—শব্দের ঘ্রাণগুলো তখনও সতেজ।
আর দিনের ক্লান্তি শেষে হাঁসেরা ফিরছে খোঁয়াড়ে।
তুমি কথা বলছো—
কর্টেক্সগুলোয় লেগেছে শনগাছের হাওয়া,
দুলছে তারা মৃদুমন্দ।
তুমি বলছো—
নিজস্ব কিছু উপমা জমাট বেঁধে ফেললো।
আর্টারিরা রক্ত নিয়ে ফিরছে,
মধ্যরাত্রে দোকানে পড়ছে শাটার,
পুকুরে পড়া ছেলেটা ছটফট করছে,
তৃষ্ণার্ত চারাগুলোয় পানি ছড়াচ্ছে কেউ,
যখন তুমি বলছো!
তুমি ঘুমোচ্ছো, তুমি কথা বলছো।
হলুদ হলুদ ছানারা পাচ্ছে মায়ের ওম।
তোমার ঘুমজড়ানো গলা—
চরাচর এইমাত্র নিবেদিত হ’লো!


আহ্-হা!

এমন সৌকর্যমাখা, ধাঁধাঁলো আলোয় চোখজোড়া কীভাবে খুঁজে ফেরে অশ্বত্থের কোটরাগত আঁধার!
ইঞ্জিনে চলা রিকশার ভীড়ে খোঁজে হাওয়ায় চালিত ত্রিচক্রযান!
বাদল-বারিষের দিনে গর্ত থেকে বেরোনো কালো পিঁপড়ার সারির দিকে চেয়ে থাকা মেয়েটার মতো তোমার দিকে দেখতে ইচ্ছে করে।
তুমি কলতলায় কাকের ফেলে যাওয়া হলুদ সাবান,
তবুও তোমায় আগলে রাখি টুপির ভেতর সেফটিপিনে আটকে রাখা টাকার মতো।
ঢ্যাপের মোয়া আর পোকাধরা বরইয়ের আচারের মতো আমার প্রাকপুরাণিক বাল্যবন্ধু তুমি।
মাঝে-সাঝে কচুরিপানার নোঙর-পারে প’রে থেকো পেয়ারা-পাতার সবুজ টোপর।
ইচ্ছে হ’লে পাতার ’পরে পঙক্তি প্রভৃতি যায় লেখা,
নিদারুণ বিচিত্রতায় চিকাদের কাছে তোমার সমস্ত কবিত্বশক্তি বন্ধক রাখা।


এগারোটার পর

রাতের প্রারম্ভে,
কেরোসিন-কেরোসিন আঁধার
প্যারাফিন অয়েলে ডোবানো ফুলের মতো ঘ্রাণ ছড়ায়
কোথাও কেউ নেই, (তবুও) আছে।
তৎক্ষণাৎ ভ্রম লেপ্টে দেখি তুমি হেঁটে যাচ্ছো।
ঠিক সাইনবোর্ডটার নিচেই তুমি।
আর তুমি, ওই টঙদোকানের কাছে।
ওখানে ব’সে আছো রিকশার হুড তুলে।
এই যে, এখনই রাস্তার বাঁক পেরোলে।
ঝ’ড়ো বাতাস, লাইটার ধরাবার চেষ্টা করছো এলোমেলো।
আর একটু দূরে কেউ বসে ভাবছে, ‘কী হবে আমার?’
সেটাও তুমি।
প্রতিরাতে মাত্র ইলেকট্রোপ্লেটিং করা সাইকেলের মতো সবখানেই আছো।
অথচ কোথাও কোনোরকম ঘ্রাণ নেই, শব্দ নেই, রঙ নেই।


নাইটমেয়ার

ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করে যে ছেলেটা,
হরদম ডুবিয়ে রাখে নিজেকে,
পাটিসাপটার পুরের ভেতর।
ছিটরুটি তার খুব প্রিয়।
অনির্বচনীয় আনন্দে মাখে কেকের ক্রিম।
অতঃপর স্টেশনের প্লাটফর্মে কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুম।
আর ওই যে ছেলেটা, আলোচনার মধ্যমণি যে, চোখভর্তি কবিতা যার,
মাঝরাতে বৃষ্টির জলে ঘুম ভেঙে যায় তার।
শিল্পীসত্তার মধুরতম উদ্বোধনের ক্ষণে অবাক
হতে হতে মুগ্ধ হয়ে যাবে কখন,
এই চাওয়াই তার পরম চাওয়া।
সূর্যের সপ্তরঙে ছবি এঁকে, ক’টা দিন বাঁচতে চায় সে।
প্রতিবাদ হয়ে বাঁচতে চায়।
ওকে রঙ ছড়াতে সাহায্য করো।
প্লাটফর্মের ছেলেটাকে সে সত্যিই পাটিসাপটা দেখাবে।
ছিটরুটি, আর কেকের বৃষ্টি নামাবে। চায়ে ভিজিয়ে খাবে।
দু’জনেই খুব খুশি। সে কী হাসি তাদের!
তোমার চোখ এরচেয়ে সুন্দর কিছু কখনও দ্যাখেনি।
মন্ত্রমুগ্ধের মতো বলবে, ‘নিশ্চয়ই দীর্ঘজীবী হবে, তার রেভল্যুশনারি স্পিরিট’।


সহজপাঠের কবিতা

অরুণ, তুমি হালকা ভোরে আমলকির ওই ফলটার মতো চাও, খুব চাও।
হোক রোদ, তবু নীলরঙা ওই ছাতাটাই নিয়ে নাও,
সাথে নাও।
বিকেল যখন পাঁচটা, রোদেরা যাচ্ছে ঘুরতে
শহর ভাঙছে আড়মোড়া আর
ফুলের ক্লিশে তোড়া
যাবে নাইতে আর ফিরতে
হঠাৎ দেখবে তখন
আকাশ ভাঙা বৃষ্টি।
ছাতা?
এ-ই তো! আমি দিচ্ছি।
কিন্তু জানো তো, খুব সহজে
ওই পুতুল-মেয়ে প্রকৃতি
এইসব দিতে চায়না
শুধু সাধে
নানান কত্ত বায়না!
তাই বলি কী, তুমি নাহয়
রেখেই দাও না ছাতাটা!
আর টুকটুক পায়ে চলো যাই
ঐ প্লাস্টার করা ফুটপাতে
চড়াই-পাতার সাথে সাথে
ভিজবো, খুব ভিজবো!
বাচ্চা-বাবল-আতশবাজি
বুদ্বুদ হয়ে উবে যায়
আর কটন ফ্লসরা মিশে যায়
এইসব দেখে দেখে
ভেজা টগরের পাপড়ি হাতেই
অলি-গলি ভীড়ে
হারাই, চলো হারাই।


শঙ্কা

ওই দ্যাখো, পোড়াচিনির বর্জ্যে কর্ণফুলীতে ভাসছে মরা মাছ।
তোমারে আজকাল খুব উইরি লাগে।
স্বাভাবিক হও।
(কিংবা গিলে ফ্যালো পিঙ্কিশ নেইল রিমোভার)
প্লিজ!

মন্তব্য, এখানে...

হাসিন এহ্সাস লগ্ন

জন্ম পদ্মাপাড়ের রাজশাহীতে, চৈত্ররাতে। কবিতা লেখে। ভালো লাগে কবিতা, গান, পুরাণ, প্রত্নতত্ত্ব। আর ভালো লাগে ভাবতে, ভনেগাটের কথামতো যেকোনো একটা আর্টের মধ্যে ডুবে থাকতে।

আরোও লেখা পড়ুন


অরুণরাগের লগ্নে

হাসিন এহ্সাস লগ্ন
মে, ২৩, ২০২৪

অলংকরন: সুমন দীপ

জন্মদিন

কিছু বিলো এভারেজ কবিতা
এখন তোমার পড়তে হবে।
অনুপ্রাসের মতো তোমার ভালো লাগে না কিছুই।
পড়ো, প’ড়ে প’ড়ে চলে যাও
অনন্ত কুহু কুহু মহড়ার দিকে।
আর যথারীতি উৎপিপাসু প্রাণের দিকে
মেলে ধরো উৎপ্রাস।
তারপর ক্রমাগত ভ্রমাকুল ভুলে
কুরুশ-কাঁটা বুনে দিই তোমার চুলে।


পূর্বরাগ

“আমার প্রস্তাবনা, আমরা আজকে হাঁটবো না। একজায়গায় বসে থেকে গল্প-টল্প করি।
আর কাগজিলেবুর শরবত-টরবত খাই।”
কাগজিলেবুর শরবত? কী সেটা?
কাগজিলেবুর শরবত হ’লো কাগজিলেবুর শরবত।
হুম, খাই... আর ঢুকে পড়ি ভ্রমজালের মুহুর্মুহুতায়। 
(‘বিড়ি... আমরা খাবো, তবে তার আগে... চুমু খাই!’)
তারপর অন্ধ প্রিজমের মাঝে আয়নায় ছবি তোলা।
(ইশ্, আমাদের কারোর ফোনে ভালো ক্যামেরা ছিলোনা!)
সেই ফাঁকে কখন পোকামাকড় কাটে ইরেজার,
সরোবরে ফুলবিস্ফার,
প্রেম-প্রমিতাক্ষর, শৃঙ্গার।
তুমি, একটা ছোট্ট ক্যারাভান।
কোনোপ্রকার শঙ্খের প্রয়োজন ছাড়া শোনা যায় সমুদ্র-শোর।
লিরিক্যাল লেইসফিতার মতো অপ্রাপনীয় সুন্দর অবসিত হয়ে আসে।
হয়তো থেকে যাবে বিড়ালের গলার ঘণ্টারেশের মতো।
এখন চলো বিড়ি খাই, আর ভাবি,
কীভাবে এইসব বৈশাখ-বর্ষা-আশ্বিন-ভাদর
শুধু হাতে হাত রেখে পেরোবে আমার বৃষস্যন্তী-বাসনারা...


পরত পরত ঘুমহীনতা

স্বপ্নে পাওয়া তোমাকে হারাতে দিয়ে গিলে ফেলা হ’লো আইসক্রিমের সাথে।
চকলেট সিরাপের ঔদ্ধত্যের কাছে হেরেই যাবে?
তবুও তারপর...
অ্যানটিক্সের ধোঁয়া ধোঁয়া প্রলেপের মাঝেই হয়তো তোমাকে পাওয়া যাবে সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতর।
তুমি কতগুলো আপেল বীজ, স্ফটিক-রুদ্রাক্ষ,
হুটহাট অমৃত-স্বাদের আশ্বাস, সকাল-সন্ধ্যা স্নান ম্রিয়মান,
কেবল গ্রাইন্ডারে লেগে থাকা বাড়তি মশলার গা থেকে প্রত্যহ আসে পৌরুষের ঘ্রাণ।


সান-ট্যুইস-থার্স

তারে দেখতে থাকো, প্রিয় সাবান গলতে সময় নেয় যতটুকু।
তারে দেখতে থাকো, ফেস পাওডার তলানিতে পৌঁছোনো পর্যন্ত।
‘পরভৃৎ’ থেকে ‘পরভৃত’ হবার সময়কালটুকু তারে দ্যাখো।
‘পরিবর্তন চাই’ থেকে ‘পরিবর্তন সম্ভব’ এই বিশ্বাসের ভেতর তারে রাখো।
তুমি নিশ্চয়ই জানো, শুয়োরের প্রসববেদনা থাকে কতক্ষণ।
ঐটুকু সময় তারে দ্যাখো।
সূর্যের মধ্যে কালো-সাদা-লাল ছড়ায়ে তারে দ্যাখো।
যতক্ষণে তোমার বিড়ি ধরানো, টানা এবং ধোঁয়া ছাড়ারে মনে হবে ‘পিওর আর্ট’, ততক্ষণ অবধি দ্যাখো।
তোমার এখন আর ইউটিউব ঘেঁটে ‘সুফি হোয়ার্লিং’ দেখতে হয়না, তুমি তো শুনতে পাও তার স্বর!
কীভাবে তা ধীরলয়ে ঘুরে তোমার কাছে আসে।
তুমি দ্যাখো।
বাচ্চার হাতে বেলুনের অস্তিত্ব যতক্ষণ,
কিংবা বাবলওয়ান্ড থেকে ছোড়া বাবলের,
ততক্ষণ হলেও।
তারপর মিশায়ে দিতে পারো, ‘বাষ্পের সহিত বাতাসের মতো’।


পড়ছে গলে ব্লু

সন্ধ্যার আজানের মতো উদ্বেল এলোমেলোমি নিয়ে এসো।
কিংবা দুপুর-ঘুমের পরের কূলাতিক্রান্ত বিষাদ।
তখন ভরসন্ধ্যাকে সকাল বলে ভ্রম হয়।
তুমি কি শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল!
পুকুরে চাঁদের ছায়া?
জলবৎ হও, জোন বায়েজের গানের মতো।
তুমিও তো বলেছিলে, আমার পোয়েট্রি ‘লাউজি’।
কৃষ্ণচূড়ার তল থেকে ডাকে ঘিয়ারঙের কুকুর,
বাষ্পীভূত চুমুরা ঘনীভূত হতে থাকে আর
ওপারে হয় রেভল্যুশনারি স্পিরিটের বিসর্জন
শুধু দাঁড়ায়ে আছো তুমি ঠায়, আনওয়াশড্ ফেনোমেনন।


ভাসা-ভাসা ট্যারান্টুলা

অকস্মাৎ পড়ে থাকা লেবুপাতার পাখায় করে উড়ে বেড়াও তুমি।
আর তোমাকে ভেসে থাকতে দেখেছি সাদা ক্রিমের কৌটায়।
স্ট্যাপলারের শেষ পিনটা ধরে ঝুলে থাকতে
খুব ভালো লাগে তোমার।
কিন্তু তোমাকে দেয়ালিকার আলপিনে বিঁধিয়েছে কে?
হরবোলা যুবক, তুমি তো জানো সঞ্চারিত মেঘের পুনঃসঞ্চার হচ্ছে তোমার জন্য।
মন্থর মন্থর জমাও বকুল কোরক,
মেশাও সরোবরে।
চার বিলিয়ন কত অল্প সময়!
এই যে তুমি, বন্দি একটা হুঁকোর খোলে।
কেমন লাগে?
কিসমিসে রোজ জল দাও তুমি?
কিসমিস আছে?
বলো এখন তুমি কি করবে!
শসার স্লাইসে চিলি ফ্লেক্সের মতো মিশবে? অ্যাম্ফেটামিনের বৃষ্টি নামাবে?
শহরের উপান্তে তোমায় দেখে গিমিকমাখা উচ্ছ্বাস আসে।
‘গোপন চিঠিই কি তোমার লিরিক?’
যার কোনো মানে নেই, তা নিয়ে এত ভয় পাও কেন তুমি?
রেডিয়েটারের ওপর ভুল করে ফেলে রাখা পোস্টকার্ড।
‘যা ঘটবার তা ঘটতে থাকে
আমরা প্রতিবাদ করি
করতে করতে ঘুমোই
ঘুমোতে ঘুমোতে কথা বলি
যা ঘটবার ঘটতে থাকে।’


দুপুরে

এইরকম অর্ডিনারি নস্টালজিক দুপুরে
বারান্দা থেকে ব্যাগ ঝুলায়ে গোলাপিরঙা দড়ি টাইনা আইসক্রিম খাইতেসি।
সজনে পাতার ওপর একটুখানি রোদ পড়সে।
পুঁইয়ের ডাটায় নতুন কুঁড়ি আসে,
বেগুনি বাড়ির ছাদটাতে কোকিল ডাইকা উঠলো পুনর্বার।
গলায় সুর আসে, ‘দূর শাখে পিক ডাকে বিরামবিহীন...’
‘চলে যায় মরি হায় বসন্তের দিন’ গানটা আজকের মতো দুপুরের জন্যেই।
দূরে কোথাও লাল দালানের ইট খইসা পড়লো।
এলোমেলো ভাবতেসি বিকেলে চুল কাটতে গেলে কোন কাটটা দেবো।
ইলেকট্রিসিটির তারে সাদাকালো পাখা মেইলা ধরলো দোয়েল।
এমন সুন্দর দুপুরেও তোমার অস্বাভাবিক মুখ আছে ভাইসা।
তুমি যেন নাইন্টিজের বিয়ের ভিডিওগুলোর মতো, সিডির মধ্যে বন্দি।
আগলায়ে রাখার সে কী চেষ্টা!
অথচ কম্পিউটারে দেয়া হয় কদাচিৎ।
ভাবি, এই কবিতার নাম ‘দুপুরে’।
আর পোস্ট করার পর হয়তো ট্যাগ দেবো ‘ফিলিং লস্ট’।
পরক্ষণেই মনে পড়ে,
এই নামে ভাস্করের কবিতা আছে তো!
‘সব দূরে গেছে আজ— উপমাও যায় দূরে— উৎকীর্ণ দিন!’


জাগ্যুলার

তোমার জাগ্যুলার শিরাগুলোর ওপর
এঁকেবেঁকে, বেঁকেএঁকে সাইকেল ঘোরাতে ভালো লাগে।
কখনও কখনও সেগুলোয় ক্যাডবেরি-রঙ ধরে।
কৈবর্তজীবনের অস্তিত্ব-সংকট হাতে রেখে
ইচ্ছে করে একটুখানি সাঁতার কাটি।
এখানে চলা দাঁশাই পরবে দেখি বৃত্তাকারে-অর্ধবৃত্তাকারে ঘোরার নান্দনিক-সৌকর্য।
কিংবা মাটি-পাথরের ন্যাড়া পাহাড়।
কোথাও-কোথাও দু’এক প্রস্থ জেদি একগুঁয়ে ঘাসের চাঁই মাটি কামড়ে রয়ে গিয়েছে তখনও।
ঘাট-আঘাটার প্রান্তে একলা ভেজে কাকতাড়ুয়া।
আবার ‘শান্ত এই বনভূমির ভিতরে ঢুকে শৃঙ্গারে শৃঙ্গারে সঙ্গমে সঙ্গমে অভুক্ত উদগার নিয়ে মিশে যাই... আমাদের হৃদশক্তি কেঁপে কেঁপে ওঠে, আমাদের চিৎশক্তি কেঁপে কেঁপে ওঠে।’
সাঁড়াশি অভিযানের পর বাকি থাকে কিছু?
তারা তো পালায়।
দিগ্বিদিক ছুটে ছুটে অতলান্ত পায়।
তোমার জাগ্যুলার শিরাগুলো উপড়ে ফেলা হলো,
আর একটা কবিতার নিষ্পত্তি।


নির্ভার জলমগ্নতা

কেন বাতাসে ভাসা তুলোদের পেছনে দৌড়ে যাওয়া,
টায়ার ঘোরানো ছেলেটার উদ্যম... সব তোমাকে দেখাতে ইচ্ছে করে!
ওই যে বেড়াল ঠোঁটে এঁটেছে কাঁটা, ধ’নের গাছে এসেছে নতুন ঘ্রাণ, মাড়াইয়ের পর ধান কত ভালো লাগে...
কেন বলবো তোমাকেই?
রাস্তায় রোদে ভিজলাম আড়াই ঘণ্টা, বাসায় পানি নেই কোত্থাও, ঘনঘন গিলছি কাশির সিরাপ... সেসবও বলবো।
কেন একটু না বললেই শ্বাস ফেলতে হয় কচুরিপানার ফাঁপরে?
নিজেকে মনে হয় ঢোলকলমিবদ্ধ জলাশয়!
কামারের ক্লান্ত খটখটাখট, মুদি দোকানের ভ্যাপসা মনোটোনাস উষ্ণতা... সব বোঝাবো তোমাকে।
তুমি দেখতে পাও আমার চোখ দিয়ে?
পৃথিবীর সব সমুদ্রভরা চোখ নিয়ে?
নেবো কি তোমাকে অক্ষিকোটরে পুরে!
সাইবেরিয় শীতল শীতে উড়ে!
আহা আহা!
ভ্রম ঠেলে দেখি, কোথায় আমি! সমস্তকিছু বন্ধক।
তুমি হ্যাপি প্রিন্স, আর আমি তার চাতক।


অস্তিত্বসংকটে ক্যাটারপিলার

তোমার ঘুমজড়ানো গলা—
রঙিন ফিতের মেয়েটা স্কুলে যাচ্ছে।
তুমি ঘুমোচ্ছো—শব্দের ঘ্রাণগুলো তখনও সতেজ।
আর দিনের ক্লান্তি শেষে হাঁসেরা ফিরছে খোঁয়াড়ে।
তুমি কথা বলছো—
কর্টেক্সগুলোয় লেগেছে শনগাছের হাওয়া,
দুলছে তারা মৃদুমন্দ।
তুমি বলছো—
নিজস্ব কিছু উপমা জমাট বেঁধে ফেললো।
আর্টারিরা রক্ত নিয়ে ফিরছে,
মধ্যরাত্রে দোকানে পড়ছে শাটার,
পুকুরে পড়া ছেলেটা ছটফট করছে,
তৃষ্ণার্ত চারাগুলোয় পানি ছড়াচ্ছে কেউ,
যখন তুমি বলছো!
তুমি ঘুমোচ্ছো, তুমি কথা বলছো।
হলুদ হলুদ ছানারা পাচ্ছে মায়ের ওম।
তোমার ঘুমজড়ানো গলা—
চরাচর এইমাত্র নিবেদিত হ’লো!


আহ্-হা!

এমন সৌকর্যমাখা, ধাঁধাঁলো আলোয় চোখজোড়া কীভাবে খুঁজে ফেরে অশ্বত্থের কোটরাগত আঁধার!
ইঞ্জিনে চলা রিকশার ভীড়ে খোঁজে হাওয়ায় চালিত ত্রিচক্রযান!
বাদল-বারিষের দিনে গর্ত থেকে বেরোনো কালো পিঁপড়ার সারির দিকে চেয়ে থাকা মেয়েটার মতো তোমার দিকে দেখতে ইচ্ছে করে।
তুমি কলতলায় কাকের ফেলে যাওয়া হলুদ সাবান,
তবুও তোমায় আগলে রাখি টুপির ভেতর সেফটিপিনে আটকে রাখা টাকার মতো।
ঢ্যাপের মোয়া আর পোকাধরা বরইয়ের আচারের মতো আমার প্রাকপুরাণিক বাল্যবন্ধু তুমি।
মাঝে-সাঝে কচুরিপানার নোঙর-পারে প’রে থেকো পেয়ারা-পাতার সবুজ টোপর।
ইচ্ছে হ’লে পাতার ’পরে পঙক্তি প্রভৃতি যায় লেখা,
নিদারুণ বিচিত্রতায় চিকাদের কাছে তোমার সমস্ত কবিত্বশক্তি বন্ধক রাখা।


এগারোটার পর

রাতের প্রারম্ভে,
কেরোসিন-কেরোসিন আঁধার
প্যারাফিন অয়েলে ডোবানো ফুলের মতো ঘ্রাণ ছড়ায়
কোথাও কেউ নেই, (তবুও) আছে।
তৎক্ষণাৎ ভ্রম লেপ্টে দেখি তুমি হেঁটে যাচ্ছো।
ঠিক সাইনবোর্ডটার নিচেই তুমি।
আর তুমি, ওই টঙদোকানের কাছে।
ওখানে ব’সে আছো রিকশার হুড তুলে।
এই যে, এখনই রাস্তার বাঁক পেরোলে।
ঝ’ড়ো বাতাস, লাইটার ধরাবার চেষ্টা করছো এলোমেলো।
আর একটু দূরে কেউ বসে ভাবছে, ‘কী হবে আমার?’
সেটাও তুমি।
প্রতিরাতে মাত্র ইলেকট্রোপ্লেটিং করা সাইকেলের মতো সবখানেই আছো।
অথচ কোথাও কোনোরকম ঘ্রাণ নেই, শব্দ নেই, রঙ নেই।


নাইটমেয়ার

ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করে যে ছেলেটা,
হরদম ডুবিয়ে রাখে নিজেকে,
পাটিসাপটার পুরের ভেতর।
ছিটরুটি তার খুব প্রিয়।
অনির্বচনীয় আনন্দে মাখে কেকের ক্রিম।
অতঃপর স্টেশনের প্লাটফর্মে কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুম।
আর ওই যে ছেলেটা, আলোচনার মধ্যমণি যে, চোখভর্তি কবিতা যার,
মাঝরাতে বৃষ্টির জলে ঘুম ভেঙে যায় তার।
শিল্পীসত্তার মধুরতম উদ্বোধনের ক্ষণে অবাক
হতে হতে মুগ্ধ হয়ে যাবে কখন,
এই চাওয়াই তার পরম চাওয়া।
সূর্যের সপ্তরঙে ছবি এঁকে, ক’টা দিন বাঁচতে চায় সে।
প্রতিবাদ হয়ে বাঁচতে চায়।
ওকে রঙ ছড়াতে সাহায্য করো।
প্লাটফর্মের ছেলেটাকে সে সত্যিই পাটিসাপটা দেখাবে।
ছিটরুটি, আর কেকের বৃষ্টি নামাবে। চায়ে ভিজিয়ে খাবে।
দু’জনেই খুব খুশি। সে কী হাসি তাদের!
তোমার চোখ এরচেয়ে সুন্দর কিছু কখনও দ্যাখেনি।
মন্ত্রমুগ্ধের মতো বলবে, ‘নিশ্চয়ই দীর্ঘজীবী হবে, তার রেভল্যুশনারি স্পিরিট’।


সহজপাঠের কবিতা

অরুণ, তুমি হালকা ভোরে আমলকির ওই ফলটার মতো চাও, খুব চাও।
হোক রোদ, তবু নীলরঙা ওই ছাতাটাই নিয়ে নাও,
সাথে নাও।
বিকেল যখন পাঁচটা, রোদেরা যাচ্ছে ঘুরতে
শহর ভাঙছে আড়মোড়া আর
ফুলের ক্লিশে তোড়া
যাবে নাইতে আর ফিরতে
হঠাৎ দেখবে তখন
আকাশ ভাঙা বৃষ্টি।
ছাতা?
এ-ই তো! আমি দিচ্ছি।
কিন্তু জানো তো, খুব সহজে
ওই পুতুল-মেয়ে প্রকৃতি
এইসব দিতে চায়না
শুধু সাধে
নানান কত্ত বায়না!
তাই বলি কী, তুমি নাহয়
রেখেই দাও না ছাতাটা!
আর টুকটুক পায়ে চলো যাই
ঐ প্লাস্টার করা ফুটপাতে
চড়াই-পাতার সাথে সাথে
ভিজবো, খুব ভিজবো!
বাচ্চা-বাবল-আতশবাজি
বুদ্বুদ হয়ে উবে যায়
আর কটন ফ্লসরা মিশে যায়
এইসব দেখে দেখে
ভেজা টগরের পাপড়ি হাতেই
অলি-গলি ভীড়ে
হারাই, চলো হারাই।


শঙ্কা

ওই দ্যাখো, পোড়াচিনির বর্জ্যে কর্ণফুলীতে ভাসছে মরা মাছ।
তোমারে আজকাল খুব উইরি লাগে।
স্বাভাবিক হও।
(কিংবা গিলে ফ্যালো পিঙ্কিশ নেইল রিমোভার)
প্লিজ!

মন্তব্য, এখানে...

হাসিন এহ্সাস লগ্ন

জন্ম পদ্মাপাড়ের রাজশাহীতে, চৈত্ররাতে। কবিতা লেখে। ভালো লাগে কবিতা, গান, পুরাণ, প্রত্নতত্ত্ব। আর ভালো লাগে ভাবতে, ভনেগাটের কথামতো যেকোনো একটা আর্টের মধ্যে ডুবে থাকতে।

আরোও লেখা পড়ুন

কবিতা

বৈশাখের কবিতা : বাবুই পাখির রাফখাতা ...: বদরুজ্জামান আলমগীর

বদরুজ্জামান আলমগীর এপ্রিল, ১৪, ২০২২

বাবুই পাখির রাফখাতাপথ সবসময় মাটিতে শুয়ে থাকে নামাঝেমধ্যে পথ উঠে যায় আকাশের দিকেআকাশের দিকে উঠে গেলে পথকে আমরা আর পথ বলি না,নাম দিই গম্ভীর অয়োময় অট্টালিকা প্রাসাদনিউইয়র্কের ম্যানহাটনে ওয়া

কবিতা

বৈশাখের কবিতা : কোভিডের পর বৈশাখ ...: কাজল শাহনেওয়াজ

কাজল শাহনেওয়াজ এপ্রিল, ১৪, ২০২২

কোভিডের পর বৈশাখদীর্ঘ অবিস্মরণীয় সময় কাটিয়ে অপেক্ষা থেকে মুক্তি পেলাম।বিগত দুই বছর যথাসম্ভব নিবৃত করে রেখেছিলাম অনেক রকম বাসনা থেকে। সপ্তাহর পর সপ্তাহ একা একা দিনগুলি ঘুম পাড়িয়ে ছোট ছোট �

কবিতা

বৈশাখের কবিতা : নক্ষত্র নীলের গান ...: সুস্মিতা চক্রবর্তী

সুস্মিতা চক্রবর্তী এপ্রিল, ১৪, ২০২২

নক্ষত্র নীলের গানআবার বৃষ্টি গর্জনে মহাকালবৃত্ত ভাঙার অবারিত ধারাপাতআমিও শিখছি শিখছো তুমিও বেশচারিদিকে দেখো চিহ্নের সমাহারএ ঘোর সময় দুর্যোগ মারীকালপুড়ছে মানুষ মানুষের সংসারশ্রাবণ ধার

কবিতা

বৈশাখের কবিতা : বৈশাখ যেমন... ...: পাতা কুড়ানি

পাতা কুড়ানি এপ্রিল, ১৪, ২০২২

বৈশাখ যেমন..চৈত্রের কঠিন সর্বনাশ স্তিমিত করে বৈশাখ আসেশিলাবৃষ্টিটিষ্টি নিয়ে অনেক বেশি প্রাকৃতিকহয়ে উঠি; আমের মুকুল ঘিরে তুঙ্গে ওঠে ব্যস্ততাসমগ্র চিন্তা ও মননকে নিজের দিকে টেনে নেয়বালি চি

কবিতা

বৈশাখের কবিতা : বিদায়ী চুমুর প্রতিভাত ...: মাহফুজ সজল

মাহফুজ সজল এপ্রিল, ১৪, ২০২২

মঙ্গল মহতিমনের মর্জি ধরেবন এসে চোখে জুড়ে আসন্ন রঙের মুকুলবদলি হাওয়ায় আসে গ্রহণ এক ধান-দুর্বাকুল;রঙ লাগলেই রাঙা তুমি নতুন নিহিত চুমিজেনে যাবে দিন থেকে পরবর্তী দিনের উসুল-সময়-তো বিদায়ী চুমু’

কবিতা

বৈশাখের কবিতা : একটি টিপের জন্যে ...: আবুল এহসান

আবুল এহসান এপ্রিল, ১৪, ২০২২

একটি টিপের জন্যেবিশ্ব থেকে বহুবিশ্ব অসীমেরে দিয়েছি ঠাঁইএ হৃদয় তবু ফাঁকা পড়ে থাকে।কল্পনার যা কিছু আছে বাকিদুঃখ যদি দাও তারও বেশি এঁটে যাবে সবই।নক্ষত্রেরা জাগে ক্ষয়ে ক্ষয়ে মরেও যায়,সাগরের �

logo

বিষয়সমূহ >
কবিতা গল্পসরগম উপন্যাস অণুগল্প ও অণুগল্প বিষয়ক গদ্যধারা সাক্ষাৎকার রিভিউ এক্সিবিশন নাটক চলচ্চিত্র ধারাবাহিক বিশেষ-সংখ্যা বই নাটক দল

সাম্প্রতিক পোস্ট >

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্প

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্...

কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর

মে, ২৪, ২০২৪

অরুণরাগের লগ্নে

অরুণরাগের লগ্নে

হাসিন এহ্সাস লগ্ন

মে, ২৩, ২০২৪

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ ঢেউ

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ...

নাঈম আহমেদ

জুলাই, ২৮, ২০২৩

সর্বাধিক পঠিত >

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্প

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্...

কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর

মে, ২৪, ২০২৪

অরুণরাগের লগ্নে

অরুণরাগের লগ্নে

হাসিন এহ্সাস লগ্ন

মে, ২৩, ২০২৪

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ ঢেউ

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ...

নাঈম আহমেদ

জুলাই, ২৮, ২০২৩

সর্বাধিক পঠিত >

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্প

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্...

কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর

মে, ২৪, ২০২৪

অরুণরাগের লগ্নে

অরুণরাগের লগ্নে

হাসিন এহ্সাস লগ্ন

মে, ২৩, ২০২৪

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ ঢেউ

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ...

নাঈম আহমেদ

জুলাই, ২৮, ২০২৩

সাম্প্রতিক পোস্ট >

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্প

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্...

কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর

মে, ২৪, ২০২৪

অরুণরাগের লগ্নে

অরুণরাগের লগ্নে

হাসিন এহ্সাস লগ্ন

মে, ২৩, ২০২৪

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ ঢেউ

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ...

নাঈম আহমেদ

জুলাই, ২৮, ২০২৩

বিষয়সমূহ >

কবিতা গল্পসরগম উপন্যাস অণুগল্প ও অণুগল্প বিষয়ক গদ্যধারা সাক্ষাৎকার রিভিউ এক্সিবিশন নাটক চলচ্চিত্র ধারাবাহিক বিশেষ-সংখ্যা বই নাটক দল

logo

  • স্বত্ব© দেশলাই ২০২৩
  • কারিগরি সহযোগিতায় হুমায়ুন কবির
  • লেখা পাঠাতে
  • বিজ্ঞাপন
  • ডোনেশন
  • ইবুক
  • যোগাযোগ
  • স্বত্ব© দেশলাই ২০২৩
  • কারিগরি সহযোগিতায় হুমায়ুন কবির
  • লেখা পাঠাতে
  • বিজ্ঞাপন
  • ডোনেশন
  • ইবুক
  • যোগাযোগ