আগন্তুক
আমার
দু'চোখে রাজ্যের বিস্ময়-
আকাশচুম্বী
দালানের পর মানুষের তৈরী তুষার কণার মেঘ
সৌরীয়
বায়ু ও সূর্যরশ্মি থামিয়ে দিয়েছে
মেঘচ্ছায়া
দিয়েছে নগরে
তারই
নিচে অভিজাত উড়ু ট্যাক্সি
আমি
এসেছি অনেক উত্তরে অবস্থিত কৃষিপল্লী থেকে
যেখানে
এখনো চাষ করতে মাটি আর আলো প্রয়োজন পড়ে
এতোসব
স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক যান , জেনেটিক্যালি মডিফায়েড সুপার হিউম্যান,
বায়োনিক
আর্মি-
এদের-ই করতল থেকে আমি আজ পিছলে পিছলে পড়ে যাচ্ছি।
নিঃসঙ্গ ব্ল্যাকহোল
কিভাবে
নিমগ্ন হতে হয় পর্যবেক্ষকের টেলিস্কোপ, লেন্স ও দৃষ্টি থেকে
তা
জানে বামন পালসার, হাইড্রোজেন মেঘের মধ্যে সাঁতরাতে থাকা কৃষ্ণবিবর -
তাকে
ডুবতে হয় কেননা ভেতরে তার সৃষ্টি ও ধ্বংসের উন্মত্ত ফিউশন চলে
তাকে
ভেঙে চুরে নতুন মুর্তিতে বের করে আনে । দিনের আলোয় দেখতে
কেউ
কেউ ডার্ক-নক্ষত্রের মতো ডুবে থাকে অদৃশ্য হবার আগে
বর্ণ
থেকে বর্ণহীনতায় লীন হয়ে। তারা নিজের অন্তঃস্থ মেলানিনকে
যাচ্ছেতাই
রুপ দিতে পারে। যেরকমভাবে একটা বাদামী টিকটিকি
সাদা
হয়ে সাদা দেয়ালে দেয়ালে মিশে যায়।
কাদা
ছুড়াছুড়ি হলে বুঝা যায় নিজেকে অদৃশ্য করার কিযে লাভ,
নিজেকে
অদৃশ্য করার কি যে লাভ ধ্যানে।
প্রবাস যাত্রা
সত্তুর
হাজার বছর অতীতে বরফআর্তধরা
মানুষকে
ছড়িয়ে দিয়েছিলো পৃথিবীতে
উষ্ণমন্ডলীয়
বৃক্ষপুঞ্জ, নদী ও গুহার খুঁজে।
কোনো
কোনো মাইগ্রেশান ছয় সাতশ অথবা হাজার বছরের ঘুম
টাইট্রন
থেকে ইউটোপা
ইউটোপা
থেকে ট্রাপিস্ট১
অস্তিত্ব
টিকিয়ে রাখার লড়াই
সব
মাইগ্রেটরি মহাকাশচারীর থাকে নির্ধারিত স্লিপিং কফিন,
যাযাবর
প্রবৃত্তি ও জিনের ভেতর অভিপ্রয়াণের ছাপচিত্র।
বসন্ত বাতাসে
হঠাৎ
কখন একটা ফাল্গুনী বাওয়ার এলো, শুকনো পাতা শীর্ণ খড় তছ্- নছ হয়ে যেতে থাকল, ঈনফিনিটি
দিগ থেকে উঠে আসলো উর্ট ক্লাউড, হাওয়ায় হাওয়ায় উলুকাশের বন খেলল লুটোপুটি আর আমার বুকের
ভেতর শূন্য- শূন্য, খালি- খালি হয়ে যেতে লাগল... সেখানে অনেক ডার্ক এনার্জি, ডার্ক
ম্যাটার, কোয়ার্ক - লেপ্টন , পার্টিকল – এন্টিপার্টিকল।
ভয়াবহ এক্সপ্লোশান!
এই অপার্থিব শূন্যতা হেলিওপজ প্রক্সিমা সেন্টরি ছাড়িয়ে আরো দূরের। বিবর্ণ সময় উল্টোরথ
হয়ে একদম স্পেসটাইমের আদিতে গেলে যে শূন্যতা পাওয়া যাবে সেই রহস্যময় অন্ধকারাচ্ছন্ন
শূন্যতা। অথবা মনুষ্য শরীর ফুঁড়ে কোটি কোটি নিউট্রিনো চলে গেলে যে শুন্যতা, প্রোটনের
ভেতর দিয়ে ইলেকট্রন চলে গেলে যে শূন্যতা প্রকাশ লাভ করে।
কবি
যে এক্সোপ্লানেট আবিষ্কৃত হয়েছে দূরবীণে
অথবা ফ্যান্টাসি ভরা গল্পে সেটি সবুজমগ্ন, সেটি ধরিত্রীর বোন। প্রক্সিমা সেন্চুরি থেকে
অনুমান করা দূরে ঘূর্ণমান। পাঁচ ছয়টি জোছনা লাগা চাঁদ তার পড়শি আর জলের সাগর নিয়ে স্বচ্ছল
সে। আমাদের মুমূর্ষু পৃথিবী। ফলে এক প্রকান্ড স্পেসশিপ সেই ধরিত্রী বোনের দিকে যাবে।
যাত্রী হিসেবে দশজন ডাক্তার, বিশজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী, পনেরোজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট
আর কিছু রোবট শ্রমিক ছাড়পত্র পেয়ে গেলেও একজন কবি তার গ্রিন পাশ পাচ্ছেনা; সে হয় দীন পথের ফকির, আধাশিশু,
আধাপাগল অথবা সে তার ডি.এন. এ. তে বহন করছে দুরারোগ্য ত্রুটি। গাভর্তি ভাইরাস। এইসব
বলতে কবিকে স্ক্যানও করা লাগছে না। অধিকন্তু কবির জন্য স্পেসশিপের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে।
আশা
এখনো
বৃষ্টির শব্দে আনন্দিত-বিষাদিত হতে পারি,
ক্রমশ
আচ্ছন্ন হতে হতে উচ্চমাত্রার জগতে ঢুকে যাই
এখনো ফলদায়ী গাছ
ফুলের উপর অভ্রকুট প্রজাপতি বসে
আকাশে উড়ুক্কু পাখি উড়ে
পৃথিবীর নির্মল নদীতে ডুবে ডুবে কাঠ-কয়লা তুলে আনতে পারে
শ্রমজীবী মানুষ
এখনো বায়ুমন্ডল ধূসর ছাই ও ধূলিকণায় ঢেকে যায়নি যে অনির্দিষ্টকাল রোদ্দুর আসবে না
সভ্যতা জঞ্জালে পরিণত হয়নি? ছিঁড়ে যায়নি তেজস্ক্রিয় বাস্তুতন্ত্র?
এত যুদ্ধ, লাল খুন, প্লুটোনিয়ামের চেইন রিএ্যাকশন তবু ভূগর্ভস্থ ল্যাবে
মানুষের
ভ্রূণ সংরক্ষিত হয়নি!
চোরাসুড়ঙ্গ
এই
যে চারপাশে রাতারাতি মহাকর্ষ বেড়ে যাচ্ছে এ কিসের আলামত? সেই ইনভিজিবল রহস্যপথ, লোকে
যাকে ওয়ার্মহোল বলে তা- কি বেরিয়ে পড়েছে? আর এর মধ্যে পড়ে কিস্তি ডুবে যাচ্ছে। গাপ
হয়ে যাচ্ছে এরোপ্লেন, স্যাটেলাইট, ব্যাঙ্ক থেকে টাকা উড়ে যাচ্ছে মহাকাশে, লোক গুম হচ্ছে;
তবুও আমরা আমাদের সুখ - স্বপ্ন, নাগরিক ভোট, অসংখ্য সার্ভার ওয়ার্মহোলের নিকটে ফেলে
রেখেছি। যেকোনো সময় বিচূর্ণ হয়ে যাবে! ওয়ার্মহোলের
ভেতর দিয়ে অন্য কোথাও পাচার হয়ে যাচ্ছে দুর্নীতির রেকর্ডপত্র। আবার অনেক কিছু ফিরে
ফিরে আসছে। ফিরে আসছে স্মৃতিভ্রষ্ট লোক, কখনোই বাস্তবায়িত না হওয়া নির্বাচনী ইশতেহার
_ চক্র পূর্ণ করে ফিরে ফিরে আসছে।
ব্যাথাচিকিৎসা
সবচিকিৎসা
শেষ হলে অশ্রুচিকিৎসার কাছে যাওয়া যায়। ছোটছোট রক্তকণা জমে যার হার্ট-ব্লক, শুধু হার্ট-ব্লক
কেন মন থেকে বেদনাপাথর গলে যাবে যদি সে মুষল কাঁদে। ব্যাথা এক স্বচিকিৎসা, কষ্ট এক
স্বচিকিৎসা। তাই রোদে যাই আল্ট্রাভায়োলেট রোদে, তেজস্ক্রিয় রোদে। বিপদজনক রোদেই কেন?
যত রোদ তত রোদে আমি কি প্রজাপতির ডানা থেকে বিচ্ছুরিত রঙ রুপ দেখি? নাকি রোদে পুঁড়তে
যাই? পুঁড়তে পুঁড়তে ত্বক-কোষ ভেঙে যেতে থাকে, কালো হতে থাকে। আমি ব্যাথা অনুভব করতে
থাকি, ব্যাথা চেখে দেখি। তারপর অশেষ শান্তি।
ইবোলা-ভাইরাস-মরা
গরম চা হলে আর কি চাই! সে আগুন গরম চা খেতে খেতে আহাউহু করি। আহাউহু করা ভালো লাগে
বলে। কে জানে এসিড বৃষ্টি হলে সে এসিড বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মরতে যাই কিনা সকল বাধা নিষেধ
ঠেলে পরিবেশবাদীর। আশুরার দিন যারা হায় হোসেন হায় হাসান বলে চাবুকে বিক্ষত করে নিজ
নিজ পিঠ আনন্দের জন্য। তারা অনুভব করে নসিসেপ্টর স্পাইনাল কর্ড হয়ে তাদের মাথায় ব্যাথা
চড়ে যাচ্ছে। সুখ হচ্ছে সুখ।
দেহঘড়ি
সেই যে স্বদেশী
হাঁসের দলে মিশে কিছু পরদেশী বালিহাঁস বিল থেকে বাড়ি চলে এলো। তারপর একসাথেই আছে, একসাথেই
গুগলি শামুক কুঁড়ায়। পিঠের উপর চড়ে। আর সন্ধ্যা হলে খোপে এসে ঢুকে। যেন এমনটাই হবার
কথা ছিল। আগুন - সূর্য যখন পাটে নামতে বসেছে তখন সূর্যের সম্মুখে উড়ে এলো রাশি রাশি
পরিযায়ী হাঁস। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য! প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলা অন্ধপ্রায় বাঁদুড় দলবেঁধে
থানার ঘাটে হাওয়া খেতে আসে, ঈশা খাঁ ব্রিজের পর দিয়ে ক্রমশ মেঘের নীলিমায় উড়ে যায়।
প্রতিদিন মাগরিব-ওয়াক্তে একঝাঁক ধবল বক, কালো শরীর পানকৌড়ি মাছ ধরা শেষ করে। তার মানে
মানুষের মতো প্রাণীরাও বিভিন্ন প্রহর সন্ধ্যা, রাত, ভোর বুঝতে পারে। আমি কি সন্ধ্যা
সারাটা বুঝতে পারি? অথবা তুফান, নিন্মচাপ, রঙমাখা গোধূলি? মেঘ থেকে অদৃশ্য সুঁতোগুলি
সংগ্রহ করতে পারি নিজের চরকায়? অনুভূতি - স্কেলে মানুষ না ধবল বলাকা কাদের পারদ বেশি
চড়ে যায় সন্ধ্যা হলে, ভোর হলে, ঝড় হলে, বৃষ্টি হলে. . .
সারভাইভ
ছেলেটি পুরুষ হয়ে উঠছে রৌদ্র ও বৃষ্টিতে
ধান রুয়ে রুয়ে। মোরগের বাঙ-ভোরে প্রতিদিন লাঙল ও মই কাঁধে মাঠে যায়। ক্রমশ উত্তপ্ত
পৃথিবীতে মেয়েটিও ক্রমে নারী হয়ে উঠছে। বৈশাখে-হেমন্তে ধান ঝাড়ে, ধান উড়ায়; বর্ষায়
সূচিকর্ম করে। পুরুষ ও নারী হয়ে উঠা ছাড়া অন্যগতি নাই! আগেতো মেঘাধিপতি চোখ রাঙান তারপর
না গমগম কথা কন! যেদিন শুধুই বৃষ্টি হবে; অথবা যেদিন ভেকপ্রজাতি বন্ধ করে দিবে বৃষ্টি-আবাহন-গান।
একটি রক্তিম গ্রহের ফেরে নারীকুল বন্ধ্যা হবে, পুরুষেরা বৃদ্ধ। কিংবা উল্কাপাতে উদবর্তন
হবে কিছু
প্রাণ! সেদিনের জন্য পুরুষেরা ক্রমশ পূরুষ হয়ে উঠো নেনেট-পুরুষ; নারীরা ক্রমশ বেদুঈন-নারী।
যেখানে শীতকাল চিরকাল, তুন্দ্রাঞ্চল, দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে নয়নাভিরাম মেরুপ্রভা; সেখানেই
বয়ে যাচ্ছে হাড়কনকনে হাওয়া, মাইনাস ৪৫ডিগ্রি শীত। একটা সবুজ রেনডিয়ার -চারণভূমি, বরফের
নিচে শ্যাওলাস্তর খুঁজছে নেনেট-পুরুষ। আর অন্যদিকে উত্তপ্ত মরুর বুকে, বালু ঝড় আর প্রখর
প্রচণ্ড সূর্যালোর প্রতি বেদুঈন নারীও বিপ্লবী।
উত্তরাধিকারী
এই যে ডি.এন.এ-ভাঙা- দুপুর, চড়া রোদ, পিচগলা পথ, ব্যাকটেরিয়াদের কবরস্থানে কণ্ঠিঘুঘুদের ডাক। এসবই কি বর্তমান থেকে ভবিষ্যতে উচ্চহারে অগ্রসর হবে? এই মধ্যাহ্ন- হাওয়ায় বুকের কন্দরে ঝরে যায় তরল মিউকাস যেন অসুখের। গাছেদের চিঠি, উড়ন্ত উদ্বায়ী যৌগ হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ে যায়। যেন গাছেদের ঘর্মাক্ত শরীর সাংকেতিক যন্ত্রণায় আমাদের মনোজগতের মতো। কাদার ভেতরে মাছ, মাটির ভেতরে মানুষ কার্বন- হাওয়ায় ১০ অথবা ২০ গ্রে রোদ্দুরে আমাদের নাভিশ্বাস। যে তুমি রেডিয়েশনে নষ্ট, ধ্বংস সেন্সর নিজেই পুনরুৎপাদন করে নিতে পারো সেই সুপার, উত্তর অধিকারী পৃথিবীর। তেলাপোকা? সেতো কবেই সবংশে মল ও শক্তির সাথে বের হয়ে গেছে মানুষের। আর