স্রোত
“অবস্থা দেখছেন নি? চল্লিশ টেকা চায় কলার হালি!
কোন দেশে যে আছি! ”
“ঐ সাদ্দাম, একটা ফিরিস্তি দিয়ে যা, তাড়াতাড়ি করিস
নবাবের বাচ্চা! ”
“হ্যালো, ভাই, আজকে তিন নাম্বার কোর্ট নাই, আসতে হবেনা।”
“সব শালা বাটপার, কাউরেই বিশ্বাস নাই।”
“ধুর! এমন প্যাঁচপ্যাঁচে কাঁদা! এইসব রাস্তায় হাঁটা যায়! ”
“একদাম একশো টাকা, একদাম একশো টাকা, একদাম…”
এরই মাঝে সতীনাথ বাজে!
এমন মেঘলা দিনে-
ঘরে তার মন নাহি থাকে।
জনতার স্রোতে ঘোরপাঁকে কেবা মেয়ে ডুবে আর ভাসে।
আমরাও বৃষ্টির মত
প্রয়োজন নেই, বৃষ্টি তবু ঝরে যায়- নিলাজ।
তাকে যে পেয়েছে নেশা প্রদর্শনবাদিতার;
গৌণ সব মদিরাই- তার সেই বাসনার পাশে।
বৃষ্টিকে ভালোবেসে, বৃষ্টির সাথে
আরও বেশি সামাজিক হতে
আমরাও দিয়েছি তুলে জনতার কাছে-
যা কিছু ব্যক্তিগত, যা কিছু নিজের।
ভেজা ভেজা দিন জুড়ে আর গূঢ় রাতে-
আমরাও যাচ্ছি ঝরে অবিরাম; হাইস্পিড ইন্টারনেটে।
আমাদের আকুতিগুলো
এমন যখন রাত্তির বলে কথা-
সম্মোহনের অদ্ভুত নীরবতা!
যেন বা পিয়াস মিটে নিঃশেষ মত
অথবা চেনে না তৃষ্ণারা জল কোন!
যেভাবে বুঝেছে পাখিরা গাছের মন,
সুরেতে ভরেছে বন-পাহাড়ের ঘর
যেমন সুদূর সাগরে এসেছে ঢেউ
প্লাবিত করেছে উপকূলটার সব;
তেমনই নীরবে-নিভৃতে মনে মনে
গেয়েছে নিরালা-নিঃস্বর এক প্রাণ।
বলেছে জীবন যদি হয় অপরূপা
ভুলো না এ নাম, ভুলো না আমার গান।
মূলত দৃশ্যই সব
আমি যখন দেখলাম আমি আসলে কিছুই দেখছিনা, তখন আমি সত্যি সত্যি দেখলাম; দৃষ্টিসীমার চারপাশ।
মূলত
দৃশ্যই সব; তবুও অদৃশ্যের ফেরে অথবা নিজ নিজ ইচ্ছের জোরে সব্বাই ঘুরছে,
থামছে, বকছে অথবা কিছুই নয়, চুপ হয়ে আছে।। মনোমুগ্ধকর নয় কিছু।
লেজনাড়া
কুকুর একটি বা দু’টি হাঁটছে যে পথে, সেই পথে অকারণে মানুষেরা থুথু ফেলে
গেছে। মানুষ তো জুতো পায়ে হাঁটে, কুকুরের জুতো নেই–এইসব অবান্তর ভাবনার দল
চমকিত হয়, হয় যেন কার চিৎকারে!
চিৎকার করে কিছু কাক; যেন বা ঘটনা গুরুতর! পথচারী, বাস-লরী, ক্রেতা-বিক্রেতা, সব্বাই কোলাহলপ্রিয়। চিৎকার তাই শুধু বাড়ে।
গোধূলির
রঙ নেই, বাজেনা সান্ধ্য-ঘণ্টাধ্বনি। পিচঢালা পথজুড়ে অকস্মাৎ রাত নেমে এলে,
তরুণের দল যায় বিনোদন-হাটে। তরুণীরা ফের স্বপনেতে। সকলেই স্বমেহনপ্রিয়।
বুঝিবা বাধ্যবাধকতা; আফ্রোদিতিকে ভালোবাসা! এ শহর ঘোরচোখে কেন যেন সারারাত
জাগে!
সমকাল
এই যে আমি বুঝে যাই-
জলের উপরিতলে সুচতুর বাতাসের ফাঁকি,
জেনে যাই ফুলেদের প্রীতিলতা রাত-
সে নিয়ে সকল কথা থাক!
বরং কুশল বলো;
উড়ে যাওয়া পাখিটি কী এখনও খাঁচায় ফিরে আসে?
জবাফুল ভালো লাগে তার?
গায় কী সে গান নিরিবিলি?
এখানে আকাশ কিছু নীল,
মেঘেরা যেমন খুশি সাজে।
ভিখিরিও আসে কোন দিন-
কারও ঘরে জগজিৎ বাজে।
হেমন্ত নামের ঋতুটি
হেমন্ত নাম নিয়ে-
বহুদিন কোন ঋতু আসেনি আমাদের ফেলে আসা ঘরে।
আমরা ভুলতে চাই আশ্বিনা ঝড়ে ভাঙা
চৌচালা ঘরটির স্মৃতি।
আমাদের বাবা, ভাই, আমাদের চাষের জমি
সময়ের স্রোতে ভেসে কী জানি কি দেশে চলে গেছে-
ঠিকানা যায়নি লিখে কার্তিকের মাঠে।
নবান্ন চুরি করে আমরা এনেছি ঢের আলোকিত রাত;
তবুও কোথায় বাজে অকস্মাৎ ধানভানা গীত-
আমাদের আলো যায় নিভে। ঘুম ভেঙে দেখি সব মিছে;
আমাদের উৎসব, আমাদের বিষম পীরিত।
স্বপনে যে এসেছিল ভুলে- আমাদের কানে বাজে সেই ভোলা শ্রুতি; অবিরত, ক্রমাগত।
আমরা স্থাণুর মত বসি।
‘গেছে দিন ভালো আর এসেছে খারাপ’-
পুরনো এ বিলাপেতে আমরা যে যার মত
আবার, আরেকবার অভ্যাসবশে বসে কাঁদি।
একেকটা মুখ ও আমি
একেকটা মুখ যে কেমন!
যার যার মুখ যেন তার তার নয়!
টিপু সুলতান রোডে
খুঁজে সবে পেয়েছে কি
মনমতো মুখোশের ছবি?
বলধা গার্ডেনে ওরা কারা-
ইবলিশ? লিলিথ? নাকি এ্যাডাম আর ঈভ?
বিকেলের স্নিগ্ধ ছায়ায় যারা বসে রোজ
ভিক্টোরিয়া পার্কের ভেতর
উদ্যমহীন, স্থবির;
তাদেরও কি ঘর আছে, আনন্দময় কোন স্মৃতি?
ডানেবামে দেখে নিয়ে রাস্তাটি পার হয়ে আসি।
কে যেন ডাকছে ত্রাসে, নিরুপমা নিরুপমা,
সাবধানে যেও!
আশেপাশে কেউ নেই মেয়েলি গড়ন;
তবে কী আমার মুখও!
কার মুখ বয়ে নিয়ে চলেছি যে আমি এতো ক্ষণ!