জুন, ০৮, ২০২৫
দেশলাই
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্পসরগম
    • উপন্যাস
    • অণুগল্প ও অণুগল্প বিষয়ক
  • গদ্যধারা
  • উড়ন্তডুবুরী
    • সাক্ষাৎকার
    • রিভিউ
  • এক্সিবিশন
  • শিল্প
    • নাটক
    • চলচ্চিত্র
  • ধারাবাহিক
  • বিশেষ সংখ্যা
  • ডিরেক্টরি
    • মেলা
    • নাটক দল
    • বাউল দল
    • সাংস্কৃতিক সংগঠন
    • পাঠাগার
    • থিয়েটার
    • স্মরণ
    • প্রত্নতত্ত্ব
    • সাহিত্য পুরস্কার
    • প্রকাশনা সংস্থা
  • কেনাকাটা
    • বই : গদ্য
    • বই : গল্প
    • বই : কবিতা
    • বই : উপন্যাস
    • বই : দেড়ফর্মা
    • বই : নাটক ও চলচ্চিত্র
    • বই : ছড়া
    • লিটলম্যাগ
দেশলাই
দেশলাই
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্পসরগম
    • উপন্যাস
    • অণুগল্প ও অণুগল্প বিষয়ক
  • গদ্যধারা
  • উড়ন্তডুবুরী
    • সাক্ষাৎকার
    • রিভিউ
  • এক্সিবিশন
  • শিল্প
    • নাটক
    • চলচ্চিত্র
  • ধারাবাহিক
  • বিশেষ সংখ্যা
  • ডিরেক্টরি
    • মেলা
    • নাটক দল
    • বাউল দল
    • সাংস্কৃতিক সংগঠন
    • পাঠাগার
    • থিয়েটার
    • স্মরণ
    • প্রত্নতত্ত্ব
    • সাহিত্য পুরস্কার
    • প্রকাশনা সংস্থা
  • কেনাকাটা
    • বই : গদ্য
    • বই : গল্প
    • বই : কবিতা
    • বই : উপন্যাস
    • বই : দেড়ফর্মা
    • বই : নাটক ও চলচ্চিত্র
    • বই : ছড়া
    • লিটলম্যাগ
টাইপ করা শুরু করুন এবং বন্ধ করতে "এন্টার" বা "ESC" টিপুন
  1. আপনি দেখছেন: হোম >> ধারাবাহিক : লোকের কথা মুখের কথা (পর্ব- এক) ...

ধারাবাহিক : লোকের কথা মুখের কথা (পর্ব- এক)

নাজির আহমেদ

জানুয়ারী, ১৩, ২০২৩
অলংকরন: সুমন দীপ

পর্ব: ০১

নদীতীর এবং চরাঞ্চলে আমাদের বসতির শুরু। প্রাচীনকালে এভাবে বসতি গড়ে উঠে। নদীর জলরাশি, বিস্তৃত মাঠ এবং বন বাদাড় নিয়ে আদি বসবাসের সূচনা। বৈবাহিক বন্ধন এবং এর থেকে জনসংখ্যার বিস্তার। এভাবে আত্মীয়তা গড়ে ওঠে এ গাঁয়ে ও গাঁয়ে। এক গাঁয়ের মেয়ে ভিন গাঁয়ের বউ। অন্য ঘরে যায়। ঘর সাজায়। নিজের সাজে। চেনাজানা পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। অন্তরের বন্ধন থেকে ছিন্ন হয়ে যায় না। কোন না কোন সময় বাপের বাড়িতে আসার জন্য অধীর হয়ে থাকে। এই অপেক্ষা এবং ব্যাকুলতা নায়রের। এই প্রতীক্ষা কখনো সুখের কখনো বা বেদনায় ভরা। নায়র নিতে আসে বাবা কিংবা ভাই। নায়র প্রত্যাশী কোন এক নারীর আকুলতা আমরা নিচের গীতটিতে পাই।

এইলা কেলা যাওগো

বাডির গাং বায়া

টাহু বাইরে কয়ো গিয়া

নায়র নিতো আয়া।

 

তাহ তাহ বইন গো

কিল মুড়া কায়া

আষাঢ় মাসো নিতাম আয়াম

ফাকনা ধানডি দায়া।

 

ফাক্না ধানের জড় মড়

বিন্নি ধানের কই

বিন্নি ধানের কই নারে

 

ভাটির গাঙ বেয়ে আসা মাঝিকে লক্ষ করে তার আকুতি। হয়তোবা তার বাপের বাড়িও মাঝির গমন পথের দিকে। নারীর এই সরলতাকে মাঝি নিরাশ করে না। ভাইয়ের আদর দিয়ে এই নারীকে সান্ত্বনা দেয়। আশ্বস্ত করে।

বাঙালির হৃদয় চিরকালই এমন। আত্মীয়বৎসল বাংলার লোকসমাজ। নায়রপ্রথা আজও আছে। পৈতৃক ভিটায় কয়েকটা দিন কাটানোর জন্য আসে। সঙ্গে স্বামী সন্তান আসে। সুখ হোক দুখ হোক মা বাবা ভাই বোনদের সাথে ভাগাভাগি করে কয়েকটা দিন কাটিয়ে যায়। সাধ্যমতো আদর যত্নও হয়। মেহমানদের আপ্যায়নে আন্তরিকতা থাকে প্রচুর। ব্যাক্তিগত খোঁজখবর থেকে খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত সবই।

নায়র আসা একাধিক গৃহস্থ কন্যার স্বামীদের একজনকে খোঁজ করতে গিয়ে নিচের ছড়াটি।

আরি ভরা কই

মটকা ভরা দই

হগ্গল জামাই খাইতো বইসে

লেংরা জামাই কই?

 

লেংরা জামাই আলঅ

গাই ফর অইসে কালঅ

গাইয়ের নাম দনী

বাছ্রের নাম ফেনী।

 

এইসব গীতি বা ছড়ায় সমাজ জীবনের চিত্র ও কথা আড়াল হয়ে আছে। আঞ্চলিক কথার টানে শব্দের গাঁথুনিতে এমন অনেক কথা গ্রাম গ্রামান্তরে পড়ে আছে। অযত্ন অবহেলায় এখন এসব মুখ লুকাতে শুরু করেছে। দিন দিন নিজের ঘর এবং উঠান থেকে সরে যাচ্ছে। যাদের পদচারণায় একসময় পাড়া গাঁ গমগম করত, তারা আজ কোনঠাসা। নীরব নিভৃতে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মহাপ্রস্থানের পথে হাঁটছে। যার খোঁজ অনেকেই রাখি না। খোঁজ না রাখলেও স্বভাবকে তো অস্বীকার করা যায় না। রক্তমাংসের মতোই এগুলো মিশে আছে দেহ এবং মননে। সেকালকে আমরা ধারণ করে আছি একালে। এ দুইই আমাদের মাঝে একাকার হয়ে আছে। এর কারণ জনপদের যাপিত জীবনের বহিঃপ্রকাশ। আমরা এমনিতেই প্রকৃতির উদারতায় জন্মেছি। বেড়ে উঠেছি ভাবের বিশালতায়। সব মিলিয়ে আমাদের চারপাশে ছড়া আর সঙ্গীতে দুলে উঠে প্রতিদিন। তবে কাব্যময় দোলাচলে সুখের সাথে দুঃখও আছে। যদিও বলে থাকি আধুনিকতায় আমরা গা ভাসিয়েছি। স্বীকার করি। তবে শিকড়কে অস্বীকার করে নয়। যদি তাই হতো তবে মনের গহীন থেকে বেড়িয়ে আসতো না-

সাইকেল দৌড়াই

সাইকেল দৌড়াই

লেচুর বাগানে

আলের বলদ

বেইচ্চে কাইলাম

মাগির কারণে

হায় মাগির কারণে।

 

এখানে কেতাদুরস্ত জীবনে ছবিটাই ফুটে উঠেছে। কোনো আধুনিকা কিংবা বেহিসেবি জীবন অতিবাহনে অভ্যন্ত নারীর সাংসারিক জীবনকে তিরস্কার করে স্বামী প্রবনের মনস্তাপ। যা প্রকাশ পেয়েছে ছড়ার ছন্দে। হাল আমলের জীবনব্যবস্থায় তা আমরা কীভাবে মূল্যায়ন করব।

কন্যাকে নায়র আনতে গেলেন পিতা। নায়রের আনন্দের মাঝে এক ফাঁকে মায়ের কুশলটা জেনে নিতে সে ব্যাকুল হয়ে উঠে। কন্যার জিজ্ঞাসা এবং পিতার জবাবের ভেতর দিয়ে ছড়াটিতে মায়ের অবস্থা জানা যায়।

ওই দেহা যায় মডর গাড়ি

জিলমিল জিলমিল করে

মডর গাড়ি কুইল্লে দেহি

বাবা বইয়া রইচে।

বাবাগো বাবাগো মায়া কিতা করে।

তুমার মায়ার কানদনে

দুক্কের ফাতা জরে

তুমার মায়ার কানদনে

মাথা বিষ করে।

উক কেতের ফানি দে

মাতা টাণ্ডা করে।

 

গ্রামীণ জীবন খুব হিসেবি। সেকালের প্রেক্ষাপটে তাই মনে হয়। প্রাচুর্যের গড়াগড়ি ছিল সত্য, কিন্তু হিসেবের অলসতা ছিল না। টাকা আনা পাই এই ছিল হিসেব। তখনকার পাই পয়সার গুরুত্ব এখনকার সময়ে পরিমাপ করা কষ্টকর। সেকালে এক পয়সা তেলে যে কাজ সমাধা করা যেত, একালে তা করা যায় না। এক পয়সার তেল দূরে থাক তেল নিয়েই যত বিড়ম্বনা। গৃহস্থালীর কাজে এক পয়সার তেল কেনা হল। তখনকার দিনে পাই পয়সার হিসেবে এক পয়সার গুরুত্ব কম ছিল না। এই তেলটুকু কীভাবে খরচ করা হলো তার হিসেব চাইতে গিয়ে গৃহকর্তা গৃহিণীর কাছ থেকে যে জবাব পেল তারই বর্ণনানির্ভর এই ছড়াটি।

এক ফয়সার তৈল

কিসে করচ অইল

তর দাড়ি মুর পায়

আর দিলাম চেরার গায়।

ছেরা ছেরির বে অইলো

সাত রাইত গান অইলো

কুন আবাগি গরো আইলো

বাহি তেলডা ডাইল্লে নিলো।

 

সরল জীবনের এই গতি সংসার তথা সমাজজীবনেও ছিল। আমাদের চলমান জীবন সরল নয়, জটিল। অতীতকে যখন কল্পনা করি তখন কেবলই মনে হয় সেই বোধ হয় ভাল ছিল। এই ভালোর বেদনা বাতাসে মিলায়। কথার কথা হয়ে উড়ে যায়। একটুখানি জ্বলে উঠে নিবে যায়। মনে রাখার, ধরে রাখার তাগিদ বোধ করি না।

এক পোয়া চালের ভাত বেঁধে পুত্রবধূকে দিয়ে শাশুড়ি পরিবেশনের হুকুম দিল। ভাতগুলো কোথায় কোথায় পরিবেশন করতে হবে তারও খাত নির্দেশ করে দিল। আমরা ছড়াটিতে তারই ফিরিস্তি দেখতে পাই।

এক ফোয়া চাউলের বাত

নাতির শ ফাত

নে গো বউ কাইন্নে

ফানি দেও তইন্নে।

 

পল্লীর আদরে, প্রকৃতির লালনে যে সন্তানেরা জন্মেছিল তারা শিক্ষা নিয়েছিল প্রকৃতি থেকে জীবনের প্রতিটি অধ্যায়। সেই সব অধ্যায়ের পাঠগুলো আজও আমাদের কানে বাজে। আমরা বলি। আমরা শুনি।

শিশু ঘুমায় মা স্বস্তি পায়। পুরো বাড়ি, এমনকি পাড়াও জুড়ায়। মা কাজে মন দেয়। গৃহস্থালি সেড়ে বিশ্রাম নেয়। শিশুর মর্জি রক্ষার্থে মা, ঝি’দের যত্নের শেষ নেই। মেজাজ বিগড়ালেই ঝামেলা। যদি এমনটি হয় তবে শান্ত করার চেষ্টার ত্রুটি থাকে না। কত ফন্দি ফিকির। শোনাতে হয় গান কখনও বা ছড়া এমনকি কল্পকথার গল্পও বাদ যায় না। কোনো এক দেশের রাজা বা বাদশা, রাণী, রাজকন্যা, রাজপুত্র, রাক্ষস খোক্ষসের কাহিনীও আছে। শিশুরা শুনে খলখলিয়ে হাসে। ভয়ও পায়। ভয় আনন্দ নিয়েই একসময় তারা ঘুমিয়ে পড়ে। পল্লী বাংলার আমেজ বরাবর এরকমই। শিশুদের প্রতি স্নেহ ভালবাসা থেকেই এরকম ধারার সৃষ্টি। মায়ের নাওয়া খাওয়া, সাংসারিক কাজ নিয়েও শিশুর সাথে কিছুটা ফারাক ঘটে। এ ফারাকটুকু একান্তই মা ও শিশুর। মায়ের দৈনন্দিন কাজে শিশুর কান্না ব্যাঘাত ঘটে। এই ব্যাঘাতকে ঘিরেই ঘুমপাড়ানির এত আয়োজন।

আবু লতি কাইনদো না

মায়া লতি গাডঅ গেসে

আইয়ে না।

আতুরে বাতু কায়া যা

নাইল্লে খেতঅ বাগুনি

তাইরে লইয়া যা।

 

কাজের ব্যস্ততায় মায়ের সাথে শিশুর যতটা বিচ্ছেদ তৈরি হয়, তার চেয়ে বেশি জন্ম নেয় মমতা। আদর দিয়ে চুমো দিয়ে সন্তানকে কোলে তুলে নেয়। ভুলে যায় কান্না। ভুলে যায় ক্লান্তি। শিশু হাঁটতে শিখে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগোয়। দাঁড়াতে চায় পড়ে যায়। মা তাকে সাহসের বাণী শোনায়। সামনে ডাকে।

আব্ব নারে নারে

ধেনু গাঙের ফারে

আব্ব কইয়া ডাক দিলে

উইরে আয়া ফরে।

আয়রে চান লইড়ে চইড়ে

কলা গাচা ফইরে

কলা অইসে বাত্তি

আবুর কফালো সুনার ছাত্তি।

 

মায়া গো মায়া কাইন্দোওনা

শামের গলা বাইংগোওনা

শাম গেচে নদীর কূল

কিইন্নে আনবো চাম্পা ফুল

চাম্পা ফুলের গন্দে

জামাই আইচে আনন্দে

 

কাওগো জামাই বাড্ডার ফান

সুন্দুরীরে করবো দান

সুন্দুরী আইচে গাইম্মে

চাত্তি দরো নাইম্মে

 

চাত্তির উফরে বেবুলা

নাচে বিবি কমলা

কমলারে সাজায়া

টেহা লইয়াম বাজায়া।

 

ওলি ললি মায়াগো

আমরার বাড়িত জায়ো

খাট নাই ফিড়ি নাই

আবুর চোক্কো বয়ো

আবুর চোক খালি

কচু কেতো যাও

কচু কেতো গতা বেং

দইরে দইরে খাও।

 

সন্ধ্যা কিংবা রাতের প্রথম প্রহরে গ্রামের কোন না কোন কুঠির থেকে আজো আমাদের কানে দাদু, নানি, মা ও বুবুদের আদুরে গলার সুরেলা কণ্ঠ এসে ধাক্কা খায়।

আবুর হোওর আইয়ে রে

লাডিত্ ভর দিয়া

গাঙের ফাড়ের গতা বেং

খাইলো রে টুহায়া

টুহায়া টাহায়া কায়া হালার

না ভরিলো ফেট বারির সামনে গিয়া হালা

করে কেত্ কেত্।

 

শিশুকে শান্ত করতে কত প্রলোভন দিতে হয়। শিশুরা তা বোঝে না। বারবার বলা কথাগুলোর সুরে সে আকৃষ্ট হয়। মোহিত হয়। হাঁটুর উপর বসে দোল খেতে খেতে কান্না থামে।

গুংগি লা গুংগি

কই গেচ্লে

দানডি দেকতাম

দানডি কিমুন

ছড়ার ছড়া

চাউলডি কিমুন

বগার ফাক

কোন গাংগো ফড়বে?

উত্তরের গাংগো না দক্ষিণের গাংগো?

মন্তব্য, এখানে...

নাজির আহমেদ

জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায়।

আরোও লেখা পড়ুন


ধারাবাহিক : লোকের কথা মুখের কথা (পর্ব- এক)

নাজির আহমেদ
জানুয়ারী, ১৩, ২০২৩

অলংকরন: সুমন দীপ

পর্ব: ০১

নদীতীর এবং চরাঞ্চলে আমাদের বসতির শুরু। প্রাচীনকালে এভাবে বসতি গড়ে উঠে। নদীর জলরাশি, বিস্তৃত মাঠ এবং বন বাদাড় নিয়ে আদি বসবাসের সূচনা। বৈবাহিক বন্ধন এবং এর থেকে জনসংখ্যার বিস্তার। এভাবে আত্মীয়তা গড়ে ওঠে এ গাঁয়ে ও গাঁয়ে। এক গাঁয়ের মেয়ে ভিন গাঁয়ের বউ। অন্য ঘরে যায়। ঘর সাজায়। নিজের সাজে। চেনাজানা পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। অন্তরের বন্ধন থেকে ছিন্ন হয়ে যায় না। কোন না কোন সময় বাপের বাড়িতে আসার জন্য অধীর হয়ে থাকে। এই অপেক্ষা এবং ব্যাকুলতা নায়রের। এই প্রতীক্ষা কখনো সুখের কখনো বা বেদনায় ভরা। নায়র নিতে আসে বাবা কিংবা ভাই। নায়র প্রত্যাশী কোন এক নারীর আকুলতা আমরা নিচের গীতটিতে পাই।

এইলা কেলা যাওগো

বাডির গাং বায়া

টাহু বাইরে কয়ো গিয়া

নায়র নিতো আয়া।

 

তাহ তাহ বইন গো

কিল মুড়া কায়া

আষাঢ় মাসো নিতাম আয়াম

ফাকনা ধানডি দায়া।

 

ফাক্না ধানের জড় মড়

বিন্নি ধানের কই

বিন্নি ধানের কই নারে

 

ভাটির গাঙ বেয়ে আসা মাঝিকে লক্ষ করে তার আকুতি। হয়তোবা তার বাপের বাড়িও মাঝির গমন পথের দিকে। নারীর এই সরলতাকে মাঝি নিরাশ করে না। ভাইয়ের আদর দিয়ে এই নারীকে সান্ত্বনা দেয়। আশ্বস্ত করে।

বাঙালির হৃদয় চিরকালই এমন। আত্মীয়বৎসল বাংলার লোকসমাজ। নায়রপ্রথা আজও আছে। পৈতৃক ভিটায় কয়েকটা দিন কাটানোর জন্য আসে। সঙ্গে স্বামী সন্তান আসে। সুখ হোক দুখ হোক মা বাবা ভাই বোনদের সাথে ভাগাভাগি করে কয়েকটা দিন কাটিয়ে যায়। সাধ্যমতো আদর যত্নও হয়। মেহমানদের আপ্যায়নে আন্তরিকতা থাকে প্রচুর। ব্যাক্তিগত খোঁজখবর থেকে খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত সবই।

নায়র আসা একাধিক গৃহস্থ কন্যার স্বামীদের একজনকে খোঁজ করতে গিয়ে নিচের ছড়াটি।

আরি ভরা কই

মটকা ভরা দই

হগ্গল জামাই খাইতো বইসে

লেংরা জামাই কই?

 

লেংরা জামাই আলঅ

গাই ফর অইসে কালঅ

গাইয়ের নাম দনী

বাছ্রের নাম ফেনী।

 

এইসব গীতি বা ছড়ায় সমাজ জীবনের চিত্র ও কথা আড়াল হয়ে আছে। আঞ্চলিক কথার টানে শব্দের গাঁথুনিতে এমন অনেক কথা গ্রাম গ্রামান্তরে পড়ে আছে। অযত্ন অবহেলায় এখন এসব মুখ লুকাতে শুরু করেছে। দিন দিন নিজের ঘর এবং উঠান থেকে সরে যাচ্ছে। যাদের পদচারণায় একসময় পাড়া গাঁ গমগম করত, তারা আজ কোনঠাসা। নীরব নিভৃতে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মহাপ্রস্থানের পথে হাঁটছে। যার খোঁজ অনেকেই রাখি না। খোঁজ না রাখলেও স্বভাবকে তো অস্বীকার করা যায় না। রক্তমাংসের মতোই এগুলো মিশে আছে দেহ এবং মননে। সেকালকে আমরা ধারণ করে আছি একালে। এ দুইই আমাদের মাঝে একাকার হয়ে আছে। এর কারণ জনপদের যাপিত জীবনের বহিঃপ্রকাশ। আমরা এমনিতেই প্রকৃতির উদারতায় জন্মেছি। বেড়ে উঠেছি ভাবের বিশালতায়। সব মিলিয়ে আমাদের চারপাশে ছড়া আর সঙ্গীতে দুলে উঠে প্রতিদিন। তবে কাব্যময় দোলাচলে সুখের সাথে দুঃখও আছে। যদিও বলে থাকি আধুনিকতায় আমরা গা ভাসিয়েছি। স্বীকার করি। তবে শিকড়কে অস্বীকার করে নয়। যদি তাই হতো তবে মনের গহীন থেকে বেড়িয়ে আসতো না-

সাইকেল দৌড়াই

সাইকেল দৌড়াই

লেচুর বাগানে

আলের বলদ

বেইচ্চে কাইলাম

মাগির কারণে

হায় মাগির কারণে।

 

এখানে কেতাদুরস্ত জীবনে ছবিটাই ফুটে উঠেছে। কোনো আধুনিকা কিংবা বেহিসেবি জীবন অতিবাহনে অভ্যন্ত নারীর সাংসারিক জীবনকে তিরস্কার করে স্বামী প্রবনের মনস্তাপ। যা প্রকাশ পেয়েছে ছড়ার ছন্দে। হাল আমলের জীবনব্যবস্থায় তা আমরা কীভাবে মূল্যায়ন করব।

কন্যাকে নায়র আনতে গেলেন পিতা। নায়রের আনন্দের মাঝে এক ফাঁকে মায়ের কুশলটা জেনে নিতে সে ব্যাকুল হয়ে উঠে। কন্যার জিজ্ঞাসা এবং পিতার জবাবের ভেতর দিয়ে ছড়াটিতে মায়ের অবস্থা জানা যায়।

ওই দেহা যায় মডর গাড়ি

জিলমিল জিলমিল করে

মডর গাড়ি কুইল্লে দেহি

বাবা বইয়া রইচে।

বাবাগো বাবাগো মায়া কিতা করে।

তুমার মায়ার কানদনে

দুক্কের ফাতা জরে

তুমার মায়ার কানদনে

মাথা বিষ করে।

উক কেতের ফানি দে

মাতা টাণ্ডা করে।

 

গ্রামীণ জীবন খুব হিসেবি। সেকালের প্রেক্ষাপটে তাই মনে হয়। প্রাচুর্যের গড়াগড়ি ছিল সত্য, কিন্তু হিসেবের অলসতা ছিল না। টাকা আনা পাই এই ছিল হিসেব। তখনকার পাই পয়সার গুরুত্ব এখনকার সময়ে পরিমাপ করা কষ্টকর। সেকালে এক পয়সা তেলে যে কাজ সমাধা করা যেত, একালে তা করা যায় না। এক পয়সার তেল দূরে থাক তেল নিয়েই যত বিড়ম্বনা। গৃহস্থালীর কাজে এক পয়সার তেল কেনা হল। তখনকার দিনে পাই পয়সার হিসেবে এক পয়সার গুরুত্ব কম ছিল না। এই তেলটুকু কীভাবে খরচ করা হলো তার হিসেব চাইতে গিয়ে গৃহকর্তা গৃহিণীর কাছ থেকে যে জবাব পেল তারই বর্ণনানির্ভর এই ছড়াটি।

এক ফয়সার তৈল

কিসে করচ অইল

তর দাড়ি মুর পায়

আর দিলাম চেরার গায়।

ছেরা ছেরির বে অইলো

সাত রাইত গান অইলো

কুন আবাগি গরো আইলো

বাহি তেলডা ডাইল্লে নিলো।

 

সরল জীবনের এই গতি সংসার তথা সমাজজীবনেও ছিল। আমাদের চলমান জীবন সরল নয়, জটিল। অতীতকে যখন কল্পনা করি তখন কেবলই মনে হয় সেই বোধ হয় ভাল ছিল। এই ভালোর বেদনা বাতাসে মিলায়। কথার কথা হয়ে উড়ে যায়। একটুখানি জ্বলে উঠে নিবে যায়। মনে রাখার, ধরে রাখার তাগিদ বোধ করি না।

এক পোয়া চালের ভাত বেঁধে পুত্রবধূকে দিয়ে শাশুড়ি পরিবেশনের হুকুম দিল। ভাতগুলো কোথায় কোথায় পরিবেশন করতে হবে তারও খাত নির্দেশ করে দিল। আমরা ছড়াটিতে তারই ফিরিস্তি দেখতে পাই।

এক ফোয়া চাউলের বাত

নাতির শ ফাত

নে গো বউ কাইন্নে

ফানি দেও তইন্নে।

 

পল্লীর আদরে, প্রকৃতির লালনে যে সন্তানেরা জন্মেছিল তারা শিক্ষা নিয়েছিল প্রকৃতি থেকে জীবনের প্রতিটি অধ্যায়। সেই সব অধ্যায়ের পাঠগুলো আজও আমাদের কানে বাজে। আমরা বলি। আমরা শুনি।

শিশু ঘুমায় মা স্বস্তি পায়। পুরো বাড়ি, এমনকি পাড়াও জুড়ায়। মা কাজে মন দেয়। গৃহস্থালি সেড়ে বিশ্রাম নেয়। শিশুর মর্জি রক্ষার্থে মা, ঝি’দের যত্নের শেষ নেই। মেজাজ বিগড়ালেই ঝামেলা। যদি এমনটি হয় তবে শান্ত করার চেষ্টার ত্রুটি থাকে না। কত ফন্দি ফিকির। শোনাতে হয় গান কখনও বা ছড়া এমনকি কল্পকথার গল্পও বাদ যায় না। কোনো এক দেশের রাজা বা বাদশা, রাণী, রাজকন্যা, রাজপুত্র, রাক্ষস খোক্ষসের কাহিনীও আছে। শিশুরা শুনে খলখলিয়ে হাসে। ভয়ও পায়। ভয় আনন্দ নিয়েই একসময় তারা ঘুমিয়ে পড়ে। পল্লী বাংলার আমেজ বরাবর এরকমই। শিশুদের প্রতি স্নেহ ভালবাসা থেকেই এরকম ধারার সৃষ্টি। মায়ের নাওয়া খাওয়া, সাংসারিক কাজ নিয়েও শিশুর সাথে কিছুটা ফারাক ঘটে। এ ফারাকটুকু একান্তই মা ও শিশুর। মায়ের দৈনন্দিন কাজে শিশুর কান্না ব্যাঘাত ঘটে। এই ব্যাঘাতকে ঘিরেই ঘুমপাড়ানির এত আয়োজন।

আবু লতি কাইনদো না

মায়া লতি গাডঅ গেসে

আইয়ে না।

আতুরে বাতু কায়া যা

নাইল্লে খেতঅ বাগুনি

তাইরে লইয়া যা।

 

কাজের ব্যস্ততায় মায়ের সাথে শিশুর যতটা বিচ্ছেদ তৈরি হয়, তার চেয়ে বেশি জন্ম নেয় মমতা। আদর দিয়ে চুমো দিয়ে সন্তানকে কোলে তুলে নেয়। ভুলে যায় কান্না। ভুলে যায় ক্লান্তি। শিশু হাঁটতে শিখে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগোয়। দাঁড়াতে চায় পড়ে যায়। মা তাকে সাহসের বাণী শোনায়। সামনে ডাকে।

আব্ব নারে নারে

ধেনু গাঙের ফারে

আব্ব কইয়া ডাক দিলে

উইরে আয়া ফরে।

আয়রে চান লইড়ে চইড়ে

কলা গাচা ফইরে

কলা অইসে বাত্তি

আবুর কফালো সুনার ছাত্তি।

 

মায়া গো মায়া কাইন্দোওনা

শামের গলা বাইংগোওনা

শাম গেচে নদীর কূল

কিইন্নে আনবো চাম্পা ফুল

চাম্পা ফুলের গন্দে

জামাই আইচে আনন্দে

 

কাওগো জামাই বাড্ডার ফান

সুন্দুরীরে করবো দান

সুন্দুরী আইচে গাইম্মে

চাত্তি দরো নাইম্মে

 

চাত্তির উফরে বেবুলা

নাচে বিবি কমলা

কমলারে সাজায়া

টেহা লইয়াম বাজায়া।

 

ওলি ললি মায়াগো

আমরার বাড়িত জায়ো

খাট নাই ফিড়ি নাই

আবুর চোক্কো বয়ো

আবুর চোক খালি

কচু কেতো যাও

কচু কেতো গতা বেং

দইরে দইরে খাও।

 

সন্ধ্যা কিংবা রাতের প্রথম প্রহরে গ্রামের কোন না কোন কুঠির থেকে আজো আমাদের কানে দাদু, নানি, মা ও বুবুদের আদুরে গলার সুরেলা কণ্ঠ এসে ধাক্কা খায়।

আবুর হোওর আইয়ে রে

লাডিত্ ভর দিয়া

গাঙের ফাড়ের গতা বেং

খাইলো রে টুহায়া

টুহায়া টাহায়া কায়া হালার

না ভরিলো ফেট বারির সামনে গিয়া হালা

করে কেত্ কেত্।

 

শিশুকে শান্ত করতে কত প্রলোভন দিতে হয়। শিশুরা তা বোঝে না। বারবার বলা কথাগুলোর সুরে সে আকৃষ্ট হয়। মোহিত হয়। হাঁটুর উপর বসে দোল খেতে খেতে কান্না থামে।

গুংগি লা গুংগি

কই গেচ্লে

দানডি দেকতাম

দানডি কিমুন

ছড়ার ছড়া

চাউলডি কিমুন

বগার ফাক

কোন গাংগো ফড়বে?

উত্তরের গাংগো না দক্ষিণের গাংগো?

মন্তব্য, এখানে...

নাজির আহমেদ

জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায়।

আরোও লেখা পড়ুন

ধারাবাহিক

ধারাবাহিক : ঢেউয়াফলের ইরেজার (পর্ব- এক) ...: বদরুজ্জামান আলমগীর

বদরুজ্জামান আলমগীর জানুয়ারী, ১৩, ২০২৩

বাঙলার মূলব্যাপারটা কিন্তু আশ্চর্য লাগে। দুই বাঙলা ভাষাভাষী অঞ্চল দুইরকমভাবে বিকাশ লাভ করে, পিছনে পড়ে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে ধরে নিতে হর্ষ হয় এমন ভেবে যে, কোথাও ঘন্টাধ্বনি বেজে চলে।প্রথমত প

ধারাবাহিক

উপন্যাস : খুন বর্ণের ওম (পর্ব- এক) ...: কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর

কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর জানুয়ারী, ১৩, ২০২৩

পর্ব এক.শাওনের মেঘ জলস্তম্ভের মতো আকাশে ঘুরপাক খায়; ঘষে ঘষে ওড়ে। তখনো মাঠটি কাদায়, জলে আর মানুষের হুড়াহুড়ির দাপটে এলোমেলো হয়ে আছে। মিহি-তরিকার বৃষ্টি আর প্যাক-কাদার গন্ধের ভিতরই লাইন �

logo

বিষয়সমূহ >
কবিতা গল্পসরগম উপন্যাস অণুগল্প ও অণুগল্প বিষয়ক গদ্যধারা সাক্ষাৎকার রিভিউ এক্সিবিশন নাটক চলচ্চিত্র ধারাবাহিক বিশেষ-সংখ্যা বই নাটক দল

সাম্প্রতিক পোস্ট >

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্প

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্...

কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর

মে, ২৪, ২০২৪

অরুণরাগের লগ্নে

অরুণরাগের লগ্নে

হাসিন এহ্সাস লগ্ন

মে, ২৩, ২০২৪

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ ঢেউ

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ...

নাঈম আহমেদ

জুলাই, ২৮, ২০২৩

সর্বাধিক পঠিত >

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্প

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্...

কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর

মে, ২৪, ২০২৪

অরুণরাগের লগ্নে

অরুণরাগের লগ্নে

হাসিন এহ্সাস লগ্ন

মে, ২৩, ২০২৪

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ ঢেউ

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ...

নাঈম আহমেদ

জুলাই, ২৮, ২০২৩

সর্বাধিক পঠিত >

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্প

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্...

কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর

মে, ২৪, ২০২৪

অরুণরাগের লগ্নে

অরুণরাগের লগ্নে

হাসিন এহ্সাস লগ্ন

মে, ২৩, ২০২৪

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ ঢেউ

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ...

নাঈম আহমেদ

জুলাই, ২৮, ২০২৩

সাম্প্রতিক পোস্ট >

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্প

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্...

কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর

মে, ২৪, ২০২৪

অরুণরাগের লগ্নে

অরুণরাগের লগ্নে

হাসিন এহ্সাস লগ্ন

মে, ২৩, ২০২৪

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ ঢেউ

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ...

নাঈম আহমেদ

জুলাই, ২৮, ২০২৩

বিষয়সমূহ >

কবিতা গল্পসরগম উপন্যাস অণুগল্প ও অণুগল্প বিষয়ক গদ্যধারা সাক্ষাৎকার রিভিউ এক্সিবিশন নাটক চলচ্চিত্র ধারাবাহিক বিশেষ-সংখ্যা বই নাটক দল

logo

  • স্বত্ব© দেশলাই ২০২৩
  • কারিগরি সহযোগিতায় হুমায়ুন কবির
  • লেখা পাঠাতে
  • বিজ্ঞাপন
  • ডোনেশন
  • ইবুক
  • যোগাযোগ
  • স্বত্ব© দেশলাই ২০২৩
  • কারিগরি সহযোগিতায় হুমায়ুন কবির
  • লেখা পাঠাতে
  • বিজ্ঞাপন
  • ডোনেশন
  • ইবুক
  • যোগাযোগ