এই গল্পের পুরোটা আমার জানা নাই।
শুরুটা জানা নাই। শেষটাও জানা নাই। তবে কিছুটা জানি।
কিছুটা আপনারা জানেন। সবকিছু মিলিয়ে একটা কিছু কাউন্ট করা যেতে পারে। কাউন্টআপ করতে
হবে। না হয় ভারসাম্য নষ্ট হবে। আর ভারসাম্য নষ্ট হলে শুরু হয় ধ্বংস। ভরকেন্দ্র হারিয়ে
যায়। এই শহরের যা হয়েছে। শহরের ভর কেন্দ্র কোথায় থাকে। রেডিও স্টেশনে। টেলিভিশন সেন্টারে।
পত্রিকা অফিসে। গোয়েন্দা দপ্তরে। বইমেলায়। বাণিজ্যমেলায়। মাংস বিতান। মৎস বিভাগ। আমদানি
রপ্তানি চিকিৎসা না শিক্ষায়। কোথাও সাম্য নেই। নেই ভারসাম্য। যে শহর বেদখল হয়ে আছে।
যে শহর বেসামাল হয়ে আছে। যে শহর বহিরাগতের দখলে। পঞ্চাশ বছর। পচাত্তর বছর। আড়াইশ বছর।
চারশত বছর। হাজার হাজার বছর। যে শহর লুট হয় শুধু। সে শহরের গল্প কারও একার গল্প নয়।
আমাদের একটা শহর ছিল। শহরটা ভোগে গেছে। কার ভোগে। ইতিহাসের
ভোগে। রাজনীতির ভোগে। আমলার ভোগে। মামলার ভোগে। সে শহরে পুকুর ছিল। খাল ছিল। খালের
উপর কাঠের পুল ছিল। পুলের ওপারে অন্ধ ভিখারি ছিল। জুতা সেলাই করার মুচি ছিল। গাদা ফুলের
মালা পরা পাগলি ছিল। মেট্রিক ফেল পাগল ছিল। পাগলের নীল জাঙ্গিয়া ছিল। আব্দুল জব্বারের
গান ছিল। রাতের বেলায় কান্দুপট্টি ফেরত অসভ্য চিৎকার ছিল। শহরটা এখন লিমিটেড কোম্পানি।
শহরের কোনও ভারসাম্য নাই। না শ্রেণিতে। না সংস্কৃতিতে। না জীবনে। না যাপনে। খালের ভিতর
কচুরি পানা ছিল। কচুরি পানা ঠেলে ঠেলে নৌকা যেত। বাড়ির উঠানে সবরিআম গাছ ছিল। একপাশে
আতাফল গাছ। সজনে গাছ। এমনকি কোনও কোনও বাড়িতে তালগাছ পর্যন্ত ছিল।
ছেলেমেয়েরা এক্কাদোক্কা, চু-কিতকিত, চূড়িভাঙা আর মার্বেল
খেলত। পাড়ায় পাড়ায় টুর্নামেন্ট হতো। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলত। এক আধখানা সাংবাদিক বা
অর্ধেক কবি হলেই উদ্বোধন হয়ে যেত। রবীন্দ্রনাথ আর নজরুল সমানে সমান উপস্থিত থাকত। পাড়ায়
পাড়ায় ছিল ক্লাব কালচার। ক্লাবে ক্লাবে ছিল খেলার লড়াই। এই নিয়ে ছুরি চাকু চেইন স্টিকের
লড়াইও শুরু হয়ে যেত। সব ক্লাবের প্রধান পান্ডারাই ছিল পাড়ার মা বাপ। তাদের আহ্বানে
পাড়ায় দু একবার ছোট গামা, বড় গামা, আকবর শেঠ বা বাবা গণেশের আগমন ঘটত।
এরা এখন আর নাই। শহর ঘিরে একটা নদী ছিল। নদী পরে খাল
হলো। ক্ষুধার্ত মানুষ খাল চিবিয়ে খেয়ে ফেলল। পড়ে রইল নালা। নালার উপর উন্নয়নের কালভার্ট।
ড্রেনের পচা দুর্গন্ধ নিয়েই গা ঘেষাঘেষি করে মনুষ্য পদবাচ্য ছোটলোকেরা বেঁচেবর্তে থাকে।
এদের পাইলিং এর উপর ভর করেই চলতে থাকে শতবর্ষের আলোক সজ্জা। আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয়
রঙ বেরঙের শব্দ তরঙ্গ। আলো অন্ধকারকে মুছে দিতে পারে না। অন্ধকার তেকোণা চৌকোণা গোল্লা
হয়ে আলোর পাশে থেকে যায়।
অন্ধকার চিৎকার করে বলে।
-এ শহর আমার শহর নয়। এটা অভিমানের কথা। এই শহর আমার
শহর। এখানে যেমন আছে থোকা থোকা আলো। আছে তাল তাল অন্ধকার। যেমন আছে বোকা বোকা শিল্পপিয়াসু।
তেমনি আছে ড্যাবা ড্যাবা রক্তপিপাসু। সাংস্কৃতিক হায়ানারা উত্তরীয় উর্দি পরে প্রতিদিন
শিল্প জবাই করে। মিডিয়া ছাপাখানা সে মাংস বিক্রি করে। পাঠক দর্শক চোখ দিয়ে কান দিয়ে
সে সব খেয়ে নিয়ে দণ্ডায়মান ঘুমিয়ে যায়। নিজেদের যকৃৎ হৃৎপিণ্ড জিহ্বা নিজেরা চিনতে
পারে না। একশহর মানুষের অতীত বর্তমান ভবিষৎ বিক্রি করে দেয়া চক্রের আশেপাশে আমরা মাঝে
মাঝে ঘুরব। তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তবু মাঝে মাঝে ধরার চেষ্টা করব।
আমরা ম্যাণ্ডা ভেণ্ডা আর পুইত্তা। মহল্লায় এই দলটাকে
ডাকা হয় ঘ্যাঙাল। বাঙাল থেকে ঘ্যাঙাল। না কি এদের ঘ্যান ঘ্যান স্বভাবের জন্য ঘ্যাঙাল।
শব্দটির বুৎপত্তি নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও শব্দটি চালু হয়ে যায়। ঘ্যাঙাল। এই দলে আবার বিভিন্ন
মহল্লার সংমিশ্রণ রয়েছে। কুলু টোলার পইদ্যা। রাজার দেউড়ির গোল্লা। ভিতর বাড়ি লেনের
দণ্ডি এ দলের অন্যতম সদস্য। এছাড়া কাউয়ার টেকের কৌড়া মাঝেমাঝে দেশি মালামাল সাপ্লাই
দেয়। এই যেমন টিনের কৌটা। বারুদের গুড়া। পাইপ কাটা বন্দুকের নল। চুতরা পাতা বা ছেঙগা
বা বৃদ্ধ বিছার হলুদ হয়ে যাওয়া লোম। এ সবের কোথায় কি পাওয়া যায় কৌড়ার ভালো করে জানা।
বিলাইচ্ছিম জোগাড় করে খ্রীষ্টানদের সতের শতকের পুরনো কবরের পাশের বড় বড়ই গাছের ডাল
থেকে। আর চৈত্রা পাতার জন্য কবরের ভিতর খুঁজতে হয় না। ফুলতলা ডাক্তারের পনের ইঞ্চি
সুরকির দেয়ালের ক্ষয় হওয়া ফাটলে কয়েকটা গাছ বেরিয়ে আসছে। প্রয়োজনে সেখান থেকে নেয়া
যায়। বিপদ কালে এসব বেশ কাজে দেয়। কৌড়া সব কাজ একা করে না। তাকে সাহায্য করে গুড্ডু
আর চিকা। ইদানিং এরা রাবারের বল পেটে চেপে উপরে উঠে যাওয়ার কৌশল বার করেছে। ভেণ্ডা
এদের মধ্যে সাইজে ছোট বলে ওকে দিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
॥হুলু বুলু চৈত্রা চুলু
নিদ্রা কদম সস্তা কুলু
ফেলে রেখে প্যাঙাল
উড়ে যায় ঘ্যাঙাল॥
ভেণ্ডা স্কুল মাঠের মাঝখান থেকে উড়ে গিয়ে পাশের তিন
তলার কার্ণিশে গিয়ে পড়ে। ভয় আর আনন্দে শিহরিত হয়ে আঙুরিদের জানালার গ্রিল শক্ত করে
ধরে। আঙুরির মা তখন সাধক বাবার সামনে ঊর্ধ্বাঙ্গ নাঙ্গা হয়ে দমবন্ধ করে মুখোমুখি বসে
আছে। দুজনের মাঝখানে ধূপকাঠি আগরবাতি দুটোই জ্বলছে। আঙুরি দূরে দাঁড়িয়ে হাত লম্বা করে
ময়ূরের পাখা দিয়ে মাটির মালসায় বাতাস করছে। ভেণ্ডা যিশু খ্রীষ্টের মতো দুহাত ছড়িয়ে
আনন্দিত চোখে তাকিয়ে আছে। আঙুরির মা না কি সাধক বাবা না আঙুরি কার দিকে তাকাবে ঠিক
করতে না করতেই আঙুরি মুহুর্তের মধ্যে তীরের মতো করে ময়ূরপাখা ছুড়ে মারে। ভেণ্ডা লাফিয়ে
পড়ে।
॥উল্টে গেলে খুল্লে খালাস
চোখ দুটো যে রক্তপলাশ
ঘ্যাচ ঘ্যাচ ঘ্যাঙাল
উড়ে যায় ব্যাঙাল॥
ভেণ্ডা গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়া বেলুনের মতো ধীরে ধীরে মাঠের
মাঝে নেমে আসে। সেই থেকে এরা লোকের সম্মুখে এবং লোকচক্ষুর আড়ালে সহজেই চলে যেতে পারে।
আগে মতিঝিল পর্যন্ত ছিল এদের গতিসীমা। এখন হাতিরঝিল পর্যন্ত গতায়াত। চাই কি এর চেয়ে
অনেক দূরে দূরেও মাঝে মাঝে চলে যায়। নগর বড় হয়ে যাওয়ায় নগরের এখন দুই পিতা। উত্তরপিতা
আর দক্ষিণপিতা। ঘ্যাঙাল দল নানান বিষয়ে মাথা ঘামাবে। এর জন্য এদের কেউ নিয়োগ করেনি।
এরা কোনও পেমেন্ট পায় না। মনানন্দে এরা এদের কাজ করে যায়। নিজেদের মতো নথিপত্তর যোগাড়
করে। আবার সেই নথি পুড়িয়ে তামাকের মুখাগ্নি করে।
বইমেলার পুথি। নাট্য উৎসবের চিঠি। কবিতা উৎসবের খিস্তি।
নারীর বলানয়ন। আন্তর্জাতিক সুরাপান। দেশীয় কাচকলা। কাঁঠাল সম্মেলন। বিদগ্ধ বিধবা শোকসভা।
চিত্রকলার ঊর্ধ্ব চিন্তা, ‘ভাত চাই’ মৌণমিছিল। ‘টাই’ নাই গণমিছিল। ভর্তা ছিদ্দত। ধান্দাবাজের স্মরণকান্না। বিব্রত বিবৃতি।
সবটাতেই ঘ্যাঙালদের কেউ না কেউ উপস্থিত থাকে। ঘাপটি মেরে থাকে। ছোট ছোট নোট নেয়। পরে
আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নথি তৈরি হয়। সেই নথি পেটিকোটের লাল ফিতায় বন্দি হয়। এদের কয়েকজন
নারী সদস্যও মাঝে মাঝে সক্রিয় হয়। এদের মধ্যে বেদানা আর পুদুনি খুবই একটিভ। আঙুরি আর
নাটকিকে মাঝে মাঝে পাব। পুদুনিকে প্রায়ই ফেসবুক লাইভে পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে পেটিকোট
খুলে- না না পেটিকোটের ফিতা খুলে এদের নথিপত্র এবং ফেইজবুক লাইভ আমরা দেখব। একটা নথি
খুলে শুরু করা যাক।
নথি নং ৪৭/২১/৭১/০১
মিডিয়া এল
ইহা উত্তর নগর পিতার ত্রিসীমার অধীন। এর পূর্বে প্রসাধনের
সুঘ্রাণ। পশ্চিমে রেললাইনের লোহালক্কর। দক্ষিণে সুউচ্চ ওভার ব্রীজ। উত্তরে ভাসমান বিস্কিটের
প্রোটিন। এই চৌহদ্দির ভিতর তিন বিঘা জমির উপর সাতখানা দালান নিয়া এই মিডিয়ার কার্যাদি
চলে। এখান থেকেই তারা সারা দেশে ছড়িয়ে থাকে। এমনকি দেশের বাইরেও।
এদের কয়েক পার্টনারের মধ্যে অন্যতম পাহাড়ি হক আর চেরাগ
আলি। বাকিরা মিডিয়ার ব্যাপারে সরাসরি নাক গলায় না। পাহাড়ি হক দেখতে অনেকটা বড় রাজহাঁসের
সিদ্ধ ডিমের মতো। ফুটবলের ব্লাডারের মতো দুই গালে হাসি ঝুলে থাকায় চেহারাটা কুমিরের
মতো লাগে। আর চেরাগ আলি দেখতে অনেকটা ফজলি আমের মতো। শীত গরম ঠা-ায় ছাই রঙের সাফারি
স্যুট পরে থাকে। গলা থেকে পা পর্যন্ত আগাপাশতলা সমান। নব্বই কেজি ওজনের বাদামের উপর
একটা আমের মুখ বসানো। চেরাগ শিল্প সাহিত্য সিনেমা নিয়ে বেশি মাথা ঘামায় না। মাটি বীজ
স্বাস্থ্য খাদ্য এসব নিয়ে বিশেষ আগ্রহ। এরা দুজন নগরের দুই পার্টিকে সামাল দেয়। বর্তমান
রুলিং পার্টি দীর্ঘদিন থেকে যাওয়ায় পাহাড়ি হক এখন নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারি।
পাহাড়ি হক কিন্তু বেশ ছোটবেলা থেকেই শিল্প সাহিত্যের
সংস্পর্শে আসে। মা বাবার কল্যাণে কিশোর বয়সেই নাটক সিনেমার টেকনিকেল বিষয়গুলো বুঝে
যায়। মায়ের বন্ধুরা চেয়ে নিয়ে বিভিন্ন সাপ্তাহিক পাক্ষিক মাসিক পত্রিকায় লেখা ছাপিয়ে
উৎসাহ দিত। তাতে করে কৈশোর থেকেই নিজেকে সে একজন শিল্পবোদ্ধা মনে করে আসছে। সে এখন
মিডিয়া এলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মাথার টাকের ব্যাপ্তি হিসাব করে তাকে টাইকুন বললে
কিছুটা কমই বলা হয়। পাবলিক প্লেসে তাকে দেখা যায় সফেদ পাজামা পাঞ্জাবি পড়া। আভিজাত্যের
ভারে সামান্য তিন ডিগ্রি সামনে ঝুকে কথা বলেন। কথায় যেন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া আমিত্তির
রস চুইয়ে পড়ে। অবশ্য জাতীয় বিশেষ বিশেষ দিবস বা ইস্যু কিংবা বিশেষ ব্যক্তিত্বের মৃত্যু
ছাড়া উনি আর এখন বাইট দেন না। মানে সবকিছুতে আর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন না।
টাইকুন বসে আছে তার ডেনের ভিতর। দুপাশে পরিচালক প্রযোজক
স্ক্রিপ্টরাইটার ফটোগ্রাফার ক্যামেরাম্যান এডিটর সম্পাদক সব লাইন ধরে বসে আছে। এদের
মধ্যে আমাদের ম্যাণ্ডা ভেণ্ডা আর পুইত্তা ঢুকে পড়ে। ঢুকে বেশ দূরত্ব রেখে আলাদা আলাদা
চেয়ারে বসে।
ঘ্যাঙালদের ঢুকতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। মেইন গেটে তেমন
কষ্ট হয়নি। একজন আটিস। আর একজন সাপ্লায়ার। অন্যজন স্ক্রিপ্ট জমা দিবে বলে ঢুকে পড়েছে।
রুলটানা খাতায় ঠিকানা তারিখ লিখতে হয়েছে।
॥ঘোৎ ঘোৎ লঙ লঙ
ঠিকানাটা লেখ বঙ॥
কিন্তু টাইকুন কোথায় বসে কিভাবে বুঝবে। তিনজন এক হয়ে
আম গাছের নীচে সিগারেট ধরায়। ভেণ্ডা লাইটার চাইতে গিয়ে ঝাড়ুদারকে সেট করে ফেলে।
বড় সাহেব কোথায় বসে
কত বড়
একদম বড়
আমি জানুম কেমনে
সবচেয়ে দামি গাড়িতে যে আসে
ও বুঝছি। তিন নম্বর দালানে। সব ঐ দিকে যাইতেছে।
মিটিং হইব কয় তলায়
উপরের তলায়। চাইর দিক গেলাস দেওয়া
এখানে বেশি দেরি করা যাবে না। সিগারেট খেতে খেতেই পরামর্শ
শেষ করতে হবে। নীচের দরজায় প্রথমেই মেশিনের ভিতর দিয়ে যেতে হবে। তারপর পেট পিঠ জুতা
পকেট চেক। তারপর আইডি কার্ড। বড় বাঁধা টাইকুনের পি.এস। তার চোখ এড়িয়ে টাইকুনের সাক্ষাৎ
পাওয়া অসম্ভব।
এর চেয়ে তিনজন কাধে হাত রাখে।
॥গুম ঘুম চাপ চাপ
পড়ে যায় ভয় ছাপ
ঘ্যাচ ঘ্যাচ ঘ্যাঙাল
কাচের ছাদে ব্যাঙাল॥
কি সর্বনাশ। টাইকুন যদি মাথার উপর তাকায় তো ঘ্যাঙালদের
দেখতে পাবে। দ্রুত এরা গোল গোল বিরাট ছত্রাকের মতো চাকতির আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়। হাতের
তালুতে হালকা ভর দিয়ে ছাদ বারান্দায় নেমে আসে। এখান থেকে ছোট দরজা দিয়ে সোজা মিটিং
রুম। টাইকুন কথা শুরু করেছে।
শুভ সন্ধ্যা।
সকলকে সময় মত উপস্থিত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ। দু একটা মুখ
এখনও দেখতে পাচ্ছি না। আশাকরি কথা বলতে বলতে চলে আসবে।
ঠিক এ সময় ঘ্যাঙাল তিনজন স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ঢুকে। নিজেদের
মধ্যে একবার চোখাচোখি করে তিনজন তিন চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ে।
আমরা এখন আগের চেয়ে অনেক বড় এবং গোছানো। ব্যক্তিগতভাবে
আলাদা সকলের মুখ হয়তো আমার মনে রাখা সম্ভব নয়। তবু আমি চেষ্টা করি। দেখতে দেখতে আমরা
এখন একটা ইনস্টিটিউশনে পরিণত হয়েছি। আমাদের আর আগের মতন মদনবিড়ি আর ঐ যে কি যেন বলে
চাম্পিয়ান কনডমের বিজ্ঞাপন চালাতে হয় না।
ম্যাণ্ডা কাগজ টেনে নিয়ে খসখস করে কি যেন লিখে রাখে।
ভেণ্ডা প্রায় দাঁড়িয়ে ঝুকে দেখার চেষ্টা করে।
॥যত কর লড়ালড়ি
খেয়ে নিও মায়াবড়ি
জমে যাবে খেলা
দিবে না আর ঠেলা॥
ম্যাণ্ডা আর ভেণ্ডার দৃষ্টি বিনিময় হয়। ম্যাণ্ডা দাঁতমুখ
খিচে ফিসফিস করে। বিজ্ঞাপনের ম্যাটার। চলবে না। চলবে।
না চললে এটা দিব। দেখ-
॥বিয়োয় যদি গুষ্টি গুষ্টি
পাবে কোথায় এত পুষ্টি
এর চেয়ে ভাই রাতে
কনডম রেখো হাতে॥
টাইকুন পেপারওয়েট দিয়ে ঠক ঠক আওয়াজ করে।
পুরনোদের মনে থাকার কথা। রাতের পর রাত আমরা সিনেমার
আকর্ষনীয় অংশ মানে চুম্বক দৃশ্য চালাতাম। সে জায়গা থেকে উঠে এসে আমরা এখন জাতীয় শিল্প
সংস্কৃতির লিড দিচ্ছি। এ তো আর এমনি এমনি তৈরি হয়নি। একটা সময় ছিল ভোর বেলায় লেখাপড়া।
দুপুর বিকাল সভা সমাবেশ। সন্ধ্যায় রিহার্সেল অনুষ্ঠান নয়তো পার্টি অফিসে হাজিরা দেয়া।
আর রাতভর টেলিফোন ইনডেক্স নিয়ে বসে দুধেল গাইদের সঙ্গে কুশল জিজ্ঞাসা করা।
ম্যাণ্ডা এক গালে হাত দিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। মুখ
ফসকে বেরিয়ে পড়ে।
॥অফিস এখন বার
নিজেই দুধেল ষাড়॥
কেউ কিছু বললে।
॥পাহাড়ি বাক্য ডলার সমমান
চ্যালারা শুনে হয় গর্ভবান॥
টাইকুন কথা শুরু করে। ম্যাণ্ডা আবার কাগজে লিখে রাখে।
॥হামারা সব বাচ্চা লোক
হাতে ধরা ফিডার
আপকা করেন গুঁতাগুঁতি
আপহি ষাড়ের লিডার॥
শোনো আমি দিনে বিশ ঘন্টা কাজ করার লোক। এমনি এমনি লোকে
আমাকে টাইকুন ভাবে না। মন্ত্র জানতে হয়। কোন কিছু গায়ে মাখলে হবে না। প্রতিদিনের অপমান
গোসলের সঙ্গে ধুয়ে ফেলবে। না হলে জীবনে কিচ্ছু হতে পারবা না। লোকে আমাকে ধান্দাবাজ
দালাল স্বৈরাচারী বলে গালাগাল করে। কি আসে যায় তাতে। মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করতে হবে।
কোনও কিছু পার্সোনালি নেয়া যাবে না। এই যে আমাদের মিডিয়া এল পরিবার। বেঁচে আছে কিসের
উপর। ঔষধ কোম্পানির ভর্তুকির উপর। হোয়াইট পেপারের ব্যবসা করে এই ভর্তুকি দেয়া সম্ভব
নয়। ওষুধের কাচামাল হিসেবে অতিরিক্ত ড্রাগ ঢুকে যেতেই পারে। ইকরান তো এখানে আছে। কী
অবস্থা ইকরান।
ইয়েস স্যার। নিউজে আমরা এককের ঘরেই আছি।
ভোক্তা কি এখনও চল্লিশটা চ্যানেলের মধ্যেই ঘোরাঘুরি
করে। টেলিভিশনে জনপ্রতি চল্লিশের অনেক কম চ্যানেল সাবস্ক্রাইব হয়। ব্যাপক একটা গ্রুপ
বিশেষ করে ইয়ং জেনারেশান নেটের দিকে ঝুকে পড়েছে। হু। মুহূর্তের মধ্যে দাবানলের মতো
সব ছড়িয়ে যায়। সাদমানের ঘটনাটা ভালোভাবে চাপা দেয়া গেছে।
মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। সে নিউজ আমরা করেছি। এর জন্য
কে দায়ী তা দেখবে আদালত। ভিক্টিম ধনীলোক হলেই জনগণ ক্রুদ্ধ হয়ে উঠবে এটা ঠিক হয় না।
ঠিক, আমদের মাথায় রাখতে হবে সাদমান আমাদের একজন বড় ক্লায়েন্ট।
ওদের শুভঙ্কর গ্রুপের উপর আমরা নির্ভরশীল।
তা ছাড়া নিউজ একটার পর একটা আসছে। এমন তো নয় যে নিউজের
দুর্ভিক্ষ চলছে। একটার নীচে আরেকটা চাপা পড়ে যাচ্ছে। খুন দুর্নীতি সড়ক দুর্ঘটনা অগ্নিকাণ্ড
টাকা পাচার খেলা উদ্বোধন মিছিল ধর্ষণ গুম প্রতিবাদ চলছে।
খবর বড় কথা নয়। খবরটা আকর্ষনীয় করে তুলবে। যেমন ধরো
একটা বাজারের নিউজ হচ্ছে। বাজারের নিউজ তো সবাই করবে। দামের ওঠানামা
উৎপাদন মজুদ এসবই তো তথ্য। এর উপর ভিত্তি করেই তো খবরটা
বানাতে হবে। একই তথ্য কিন্তু তুমি যখন এটা দেখাচ্ছো ভঙ্গিটা পাল্টে যাবে। একটা পাকা
কাচামরিচ। লাল রঙ। লাল কাচামরিচ ড্রইং রুমের বাহাত্তর ইঞ্চি টিভির স্ক্রিন ভরে ভেসে
উঠবে। বলিউড নায়িকার লাল টুকটুকে লিপের মতো মনে হবে। তার পাশেই গাজরকে ফ্রেমে রাখো।
যেন মনে হয় দুর্গম এলাকার এক হলুদ মিনার। সস্তা খবর কালারফুল করে দাও। আর যে সব নিউজ
চাপা দিতে হবে বোরিং করে দাও। আর যৌন কেলেঙ্কারি রগরগে করে তোল। এই যে নকুল দানা।
বাবা বাবা বাবা
দাঁড়াতে হবে না। বসেই বল।
চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর কিছুদিন।
দেখতে দেখতে নয় বছর পার হয়ে যাচ্ছে। কিছু কি হচ্ছে।
হচ্ছে না। তোমার নিজেরও কোনও উন্নতি ঘটছে না। ঢোকার সময় একটা বড় ফান্ড এনেছিলে। সারা
বছর আর কোনও খবর নেই। আগে ঈদ সংখ্যায় পাঁচ সাতটা করে উপন্যাস লিখতে। তা ঠোঁটকাটারা
যতই অপন্যাস বলুক। এখন একটা লিখতেই দমবন্ধ। লিটলম্যাগগুলো ঘেটে দেখ। আমার লেখাগুলো
চালিয়ে নিতে পারবে এরকম ক্রিয়েটিভ দেখে একটা লোক নাও।
এখন প্রিন্ট মিডিয়ার দিকে লোকের ঝোক কম।
ম্যাণ্ডার কলম চলতে থাকে।
॥কম রেটে কমরেড বেচে দিয়ে মাথা
বিনোদনে চাষ করে ব্যাঙের ছাতা॥
শোন ভাই নকুল পাবে না কোনও কুল। ল্যাজা হয়ে পিছনে ঝুলতে
থাকবে। তোমাকে তো বিক্রির কথা ভাবতে হয় না। মালটা একটু সেক্সি সেক্সি করে দাও। বিক্রি
এমনি হয়ে যাবে। মনে নেই আগের সেই সোনালি যৌবন, পাক্ষিক যুবতী, সচিত্র কিশোরী, গুপ্তপ্রেম
এসবের থেকে রুচিটা পাল্টে দিতে
হবে। তা এ সপ্তাহে বললেই তো আর পরের সপ্তাহ থেকে রুচি
পাল্টে যায় না। ধীরে ধীরে খাওয়াতে হয়। বলিউডকে ফলো কর। খোলামেলা ছবি দাও। নয়তো টিকতে
পারবে না। এক দিকে পিঠ খুলে দাও বুক খুলে দাও। আবার ধর্মীয় অনুষ্ঠান বাড়িয়ে দাও। তা
না হলে টি.আর.পি ধরে রাখতে পারবে না। ফলোয়ার বাড়াও। এখন তো রিসার্স টিসার্স বন্ধ হয়ে
গেছে। আর হলেও আস্থা রাখা যায় না। বিজ্ঞাপনওয়ালারা ঐ ফলোয়ারদের ফলো করে।
আমরা চ্যানেল এল একটা পরিবার। বৃহৎ পরিবার।
আর মকর ক্রান্তি। বকর আলি নামে এখানে প্রবেশ করেছিলে।
সারা দেশ এখন আলি বকর নামে চিনে। আমরা চাই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। টাইকুন হওয়া সহজ কথা নয়।
চারিদিকে কত প্রতিদ্বন্দ্বী। সব জায়গায় হায়ারার্কি। এই খেয়োখেয়ির মধ্যে জিতে আসতে হবে।
তাইতো আমি ভীমরুলকে এনেছিলাম বসুধা সাহিত্য কেন্দ্র থেকে। কাক্কুকে এনেছিলাম নিউ থিয়েটার
থেকে। সুপার ডট থেকে এনেছিলাম হালিমকে। ভালো ভালো সৈন্য চাই। এই প্রতিষ্ঠানে থেকে বিভিন্ন
জায়গায় ছড়িয়ে যেতে হবে। সব জায়গায় আমাদের প্রতিনিধি চাই। কেউ গিল্ডে ঢোক। কেউ ফেডারেশানে
যাও। কেউ সমিতিতে নির্বাচন কর। সব জায়গায় থাক। পজিশন তৈরি কর। তোমাদের সঙ্গে বড় কাগজ
আছে। মিডিয়া আছে। পার্টি আছে।
ঘ্যাঙালদের মধ্যে চোখাচোখি হয়। উঠবার একটা ইঙ্গিত সবার
মধ্যে। ম্যা-া কাগজখানা টেনে আবার কিছু লেখে।
॥আমাদের কেউ নাই দেয় না কেউ মালা
পরিচয় পেয়ে বলে দূর হ শালা
তবুও মনে মনে করে যাই ট্রাই
এখনও আসছে না চু চু আর ফ্রাই॥
পাহাড়ি হক ওরফে টাইকুন ওরফে টাকলা ওরফে মাফিয়া ওরফে
ডন বেল চাপেন।
মাফিয়া হয়ে বাঁচতে হলে তোমাকে জেগে থাকতে হবে। ঘুমিয়েছ
তো সরিয়ে দেবে। লাশ হয়ে পড়ে থাকবে। গুম করে ফেললে আর খুঁজেও পাবে না। ম্যাণ্ডা খসখস
করে লিখে ফেলে।
॥টাইকুন এক সকালে
হয়ে গেল খুন
খুনিরা গভীর শোকে
জ্বালালো আগুন॥
টিকে থাকতে হলে অলেখককে লেখক বানিয়ে দাও। কবিকে অকবি
আর অকবিকে কবি বলে চালিয়ে দাও। খবরদারিটা করতে পারবে। গানের সারগাম ঠিকমত বোঝেনা তাকে
প্রমোট কর। বারবার দেখাতে থাক। ধরে ধরে অপদার্থকে তারকা বানিয়ে দাও। হাবুডুবু খেতে
খেতে খাবি খাক। একটা কথা আছে না- ঘেটে দে মা করে খাক।
প্লেটে প্লেটে খাবার চলে আসে। টাইকুনের সেক্রেটারি মিজ
গ্লোরিয়া তদারকি করছে। গ্লোরিয়া আজ শাড়ি পরেছে। সিল্কের কমলা রঙের শাড়ি। তিতির পাখির
পালকের মতোই আকর্ষনীয় বক্ষের আবরণ। শাড়ি বারবার ঘাড় থেকে পড়ে যাচ্ছে। শাড়ি পরার খুব
একটা অভ্যাস নেই এরকমটা বোঝা যাচ্ছে। ফেসিয়াল করা মুখের চেয়ে ঘাড়টা বেশি বাদামি। সেখানে
স্লিভলেস ব্লাউজে নীল রঙের চিকন একটা ষ্ট্র্যাপ। হ্যাঙারে ঝুলানো জোড়া মাংসপি-সহ পুরো
বডিটা চেখে দেখে চোখে ওজন করে ফেলে পুইত্তা। ভে-ার দিকে তাকিয়ে চোখ গোল গোল করে বলে।
একশ কেজির বেশি।
না হলেও দুই মণের উপরে হইব।
ম্যাণ্ডা কাগজে আঁকিবুঁকি রেখে চোখ তুলে তাকায়। তারপর
শান্ত গম্ভীর এবং ফিসফিস করে বলে।
ওটা বড়দের খাবার। ওদিকে তাকায় না।
তোমাদের জন্যে ছেড়ালাক
মহল্লায় অপেক্ষা করছে
হ নাটকি
না বুচি
আমার জন্যে আছে বেদানা
খাও আর ভাঙো
ঠাসা ঠাসা দানা।
গ্লোরিয়া একদম কাছে চলে আসছে। পারফিউমের ঘ্রাণ ছড়িয়ে
পড়েছে। পারফিউমের আত্মশক্তি অতি তীব্র। যেদিক থেকে আসে সেদিকে টেনে নিয়ে যায়। ঘ্রাণটার
মধ্যে কি কি আছে ঠিক ঠিক ধরা যাচ্ছে না। লেবুর ঘ্রাণ না কি কমলা। মনে হয় দেবদারু। না
কি দারুচিনি। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে চন্দনের গন্ধ। আবার গোলাপ জুঁই বেলী নানারকম ঘ্রাণ।
ভেণ্ডা চোখ বন্ধ করে বোঝার চেষ্টা করে। ম্যাণ্ডার কলম চলছে।
॥যাহাদের পিঠেতে
শিড়দাঁড়ার বদলে
থাকে শুধু সুতা
তাহাদের পাছাতে
তারকাটা দিয়ে
দেই মোরা গুতা॥
সব ছোট ছোট দলে ভাগ হল। নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। কথা
শুনে কোনও বিষয় ঠিক ঠিক ধরা যাচ্ছে না। ঘন গোঁফওয়ালা একজন মুখটা চোঙ্গার মতো করে কথা
বলছে। কথার দ্রুততায় থুতুর রেণু ভেসে যাচ্ছে। বদ্ধ মেনহোলের ঢাকনা হঠাৎ খুলে গেলে যে
অবস্থা দাঁড়ায়। গোঁফে আজই রং করেছে। নাকের মাথায় এখনও একটু কালি লেগে আছে।
সুইমিংপুলে চলে যাবা। টান টান শরীর সেখানে। খেলোয়ারদের
ফোকাস করবা। ফুড কোম্পানির বিজ্ঞাপন হাতে এসে যাবে।
ধ্বজভঙ্গের পিছনে সময় দিও না। আয়ুর্বেদ সালসার যুগ শেষ।
চোখ কান খোলা রাখ।
ঘ্যাঙাল তিনজনের আর ভালো লাগছে না। দু একজন করে এক পা
দোপায় ছাদ বারান্দায় হাজির হচ্ছে। এর সিগারেট ও খাচ্ছে তো ওর লাইটার এ নিচ্ছে। টাইকুনের
কাছটায় ভীড় তত নয়। গ্লোরিয়া একাই দখল করে আছে টাইকুনকে।
ভাইয়া, বলেই এমন গদগদ ভাব যেন হালকা গরমে মাখন গলে পড়ছে।
তুমি কাজ শুরু কর।
‘হিরণ্য বালিকা’ ভাবনাটা কেমন হয়েছে ভা-ই-য়া।
দক্ষিণ এশিয়ায় এরকম কাজ আর হয়নি। নিশ্চিত থাক একটা এওয়ার্ড
তুমি পাবে। বুঝতেই তো পারছ। এমন ভাবে সাজাও যাতে সিঙ্গাপুর দুবাই ট্যুর দেয়া যায়। যকৃৎ
ব্রাদার্স কোম্পানির সি.ওর টাইম ফ্রেমটা জেনে নিও।
কাজটা তুলতে হলে বদমাইশটাকে হাতে রাখতে হবে তো। পুইত্তা
বের হতে হতে কান খাড়া করে রাখে। বেড়িয়ে যাওয়াটা কেমন সন্দেহজনক। টাইকুনের চোখ এড়ায়
না।
এই তুমি যেন কে
পুইত্তা
পুইত্তা মানে। কোন ডিপার্টমেন্টের। আমি তো ঠিক তোমাকে
চিনবার পারলেন না
গ্লোরিয়া
বস। বস আমি দেখছি
আশ্চর্য! কোথা থেকে আসছেন
আসছি ধোলাইখাল থিকা। মাগার ম্যাডামের কণ্ঠস্বর না শুনলে
তো বুঝাই পারতাম না নারী না পুরুষ না তৃতীয়-
গ্লোরিয়ার চোখের পাপড়ি প্রজাপতির ডানার মতো কাঁপতে থাকে।
খোলে আর বন্ধ হয়। পুইত্তা নিশ্চিত হয় এগুলো আসল পাপড়ি নয়। পুইত্তা না তারকাটা কি যেন
বললে নাম
তারকাটা না চুবিও না পুইত্তা
ধোলাইখালে কি কর
গাড়ি ভাঙ্গি
গাড়ি ভাঙ্গি মানে
পুরানা গাড়ি ভাইঙ্গা পার্টস সব আলাদা করি।
তা তুমি এখানে কেন
আলোচনা হুনবার আইলাম। দেখি কি রাজা ঘোড়া মারেন। কত উপরে
উঠছেন দেখলাম।
কি দেখলা
আলোচনায় চনা আছে আলো নাই।
তোমাকে চিনি না কি। কখনও দেখেছি?
চিনবেন না তবে আলবাৎ দেখেছেন।
কোথায় বল তো?
তা এই ত্রস্ত হরিণীর সম্মুখেই বলিব।
তোমার বলতে কোনও অসুবিধা
আপনার শুনতে অসুবিধা না হলে আমার বলতে আর কি অসুবিধা
আমার জীবনে এমন কোনও মহাপাপ নেই যে আমাকে ভয় পেতে হবে একেবারেই নেই?
যদি যৎসামান্য থাকেও তা মুছে ফেলেছি। বল বল।
সেই টিনের দোচালা ঘর থেকে আজ এত বড় গ্রুপের বস। প্রতিভা
ছাড়া কি এসব হয়। ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় এত বড় একটা জায়গা। পাকিস্তানি
হারিকেন কোম্পানির কারখানা ছিল। ওরা মার খেয়ে চলে যাওয়ার
পর কতজনের চোখ ছিল এটার দিকে।
কি বলতে চাও?
সেখান থেকে বাজ পাখির মতো ছো মেরে নিয়ে নিলেন।
বড় কিছু করতে হলে ছোট ছোট অন্যায় এড়িয়ে যেতে হয়। আমি
একটা ছোট স্মৃতির সাক্ষী
পুইত্তার গায়ের রং কালো। মুখে গুটি বসন্তের কয়েকটা দাগ
স্থায়ীভাবে বসে গেছে। কপাল তেল চকচকে। চুলগুলো পুরনো বুরুজের মতো। সেফ করার আশ উঠা
বুরুজ। টাইকুন ভিতরে ভিতরে ক্ষেপতে থাকে। তুমি কে হে
আটের দশক। মনে পড়ে।
তখন ছাত্রকাল। ছড়া লিখে বিভিন্ন পত্রিকায় পাঠাই।
আপনার বন্ধুর বাবা। বিখ্যাত কবি। মারা গেলেন। ট্রাক
ভাড়া আর কাফনের কাপড় বাবদ অর্ধেক টাকা মাইরা দিছিলেন। বাকীতে নিছিলেন পরে আর শোধ দেন
নাই।
কত দিন আগের কথা।
বন্ধুর মায়ের কাছ থেকে পুরো টাকাটাই নিছিলেন।
গ্লাসের ভিতর দিয়ে দেখল ম্যাণ্ডা আর ভেণ্ডা পজিশন নিয়ে
দাঁড়িয়ে আছে। পুইত্তাকে ইঙ্গিতে ডাকছে। শেষ বাক্যটি যথাসম্ভব দ্রুত শেষ করে পুইত্তা
ছাদ বারান্দায় চলে যায়। তিনজন হাতে হাত রেখে একসাথে বলে।
॥উড়িবে না ভীমরুল
উড়িবে না ল্যাজা
উড়িয়া সুখ পায়
ঘ্যাঙাল রাজা॥
ছাদ বারান্দায় আগত সভাসদ অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে
থাকে। জার্সি গায়ে ছেড়া বুট জুতা পরা মনুষ্য সদৃশ তিনজন একজন হয়ে আছে। কিছুটা উপরে
উঠে ধীরে ধীরে নীচে নেমে যাচ্ছে। ম্যাণ্ডা আবৃত্তি করতে থাকে। সে সব কথা বাতাসে ভেসে
যায়।
॥ঘ্যাঙালদের ঘর নাই কাধে থাকে ঝোলা
ঝোলায় বারুদ নয় থাকে শব্দের গোলা
আইকন টাইকন খায় দেশ গোটা
ঘ্যাঙালদের জাঙ্গিয়ায় তিন চাইর ফুটা॥