বারান্দার বেড়ায় হেলান দিয়ে মুখ শাড়ীর আঁচলে ঢেকে মাটিতে দুই পা
ছড়িয়ে বসে সুর করে কাঁদছিলো ময়না। নতুন বউ নিয়ে ঘরে থেকে তার স্বামী একসময় খেঁকিয়ে
উঠলো,চুপ কর মাগী আর কান্দিস না, তোর মতো বাঁজা মেয়ে ছাওয়াল নিয়া যে আমি পাঁচ বছর সংসার
করেছি এই তর কফাল।
—একবার তো ডাক্তারের কাছে ও নিয়া গেলেন না গোওওও। কাঁদতে কাঁদতে
বলে ময়না
—ঐ তোরে কবিরাজ দেহাই নাই? ঔষধ খাওয়ায়ই নাই? তাবিজ কবচ নিয়া দেই
নাই?বাজা মাইয়া ছাওয়াল। ঘরে থেকে উত্তর দেয় তার সদ্য বিবাহিত স্বামী খোরশেদ।
—কবিরাজ দেহাইছেন, ভালো ডাক্তার তো দেহান নাই আমারে, কতো কইলাম একদিন
গঞ্জের ডাক্তারের ধারে নিয়া যান,নিলেন নাতো?
—তোরে আমি ছাইড়া দিছি,অহন যতো খুশী গঞ্জের ডাক্তারের কাছে যা তুই।
এরপরে বাঁজা মেয়ের অভিশাপ নিয়ে ছয় মাস যাবত ভাইয়ের সংসারে বান্দীগিরি
করে জীবন কাটতেছিলো ময়নার। সে ভেবে পায় না সে কেন বাঁজা হলো,তার ভাইনোনদের ঘর ভর্তি
বাচ্চা গিজ গিজ করে। তার ভাই একদিন হাট থেকে ফেরার পথে দুইজন লোক সাথে নিয়ে বাড়ী এলো।
সদ্য বউ তালাক দেওয়া রশীদ নামে একজন লোক বিয়ে করার জন্য বাঁজা মেয়েলোক খুঁজছিলো। সে
নিজে যেমন লম্বা ঢ্যাঙ্গা তেমনি সাথে ততোধিক লম্বায় খাটো থুতনিতে সামান্য দাঁড়িওয়ালা
মৌলাভী সাথে নিয়েই এসেছিল লোকটা। ভাইয়ের চেনা তার পাশের গাঁয়ের রশীদের সাথে বিয়ে হয়ে
গেলো ময়নার। চাঁদনী রাত লোকটার পিছে পিছে একটা পোটলা হাতে লোকটার বাড়ী চলে এলো ময়না।
পাঁচ সন্তানের মা হয়ে ভালোই দিন কাটতেছিলো ময়নার। বিয়ের তিন মাস পরেই জানা গেলো ময়না
অন্তঃসত্ত্বা। তার স্বামী রশীদ তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে ঘরের দরজায় খিল লাগিয়ে দিয়েছে।
বারান্দায় বেড়ায় হেলান দিয়ে মুখে শাড়ীর আঁচলে ঢেকে মাটিতে দুই পা ছড়িয়ে বসে কাঁদছে
ময়না। ঘরের ভিতর থেকে চিৎকার করছে রশীদ।
—বাঁজা না-হয়ে আমাকে ঠকাইলি কেন হারামজাদী? আমার ঘরে তোর ঠাঁই নাই
আর,আমার পাঁচ বাচ্চা হেই গুলানরেই আমি ঠিকমতো খাওন পড়ন দিতে পারি না আর বাচ্চা দিয়া
আমি কি করুম রে?
ময়না কাঁদতে কাঁদতে বলে,
—আমার কি দুষ? আমি যে বাঁজা না তাকি আমি নিজেও জানি?