ছুরি, পেছন দিক ধরেই। বুকের থেকে যখন একটু দূরে, যার হাতে ওই ছুরি আমি তার হাত ধরে বললাম— আমাকে কেন?
জামা ততক্ষণে রক্তে ভিজে গেছে, অসম্ভব যন্ত্রণা হওয়ার কথা, কিন্তু বিস্ময়ে সেই যন্ত্রণা চাপা পড়ে কোথাও, আর আমি নিজেই এমন বিমূঢ়, ছুরিটি পিঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শুধু বললাম—
খুব জ্যান্ত মানুষ নই আমার শব্দগুলি জানে, বউবাচ্চা ঘরে আছে এই কথা জানে, এই কথা পাশের বাড়ির লোকজন জানে, পাড়ার সবাই জানে, এমনকি আশেপাশের অন্য পাড়ার সব্বাই।
ছুরি থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত তখনও যে মাটিতে কোনোক্রমে দাঁড়িয়ে তার নানারঙের ধুলোর সঙ্গে মিশছে।
হাতে ছুরি তখনও। সুদর্শন আর সম্মানীয় সেই মানুষ মুখ খুলল এইবার— ইয়ারকি, ঠাট্টা…
শব্দগুলি বাংলায় লেখা যায় আর এই ভাষা মায়ের মুখের ভাষা হওয়ার সুবাদে সেসব আমি পড়তে পারি, বলতে পারি, কানে এলে বুঝতেও পারি।
ধরতে পারছি না। ছুরি তখনও হাতে, সে বলল— তোমাকে আমি সহ্য করতে পারছি না।
কখনো কাউকে হিংসে করতে শিখিনি, কাউকে সিদ্ধ সফল ও শীর্ষগামী হতে দেখলে কোনোদিন মনখারাপ হয়নি, নিজে আশৈশব অলস আর অকর্মণ্যের দলে, ছোটখাটো আকাঙ্ক্ষাও অনেকদিন নেই, নেই বললেই সত্যি।
ছুরিটি ক্ষুধার্ত তখনও। ফের তাকে বললাম— আমাকে কেন?
বলতে চাইলাম স্নাতক হইনি। জানি যুদ্ধের মাঠ। কীভাবে যে চেনা হয়ে গেছে সবার ঠাকমা, এম্বার মাসি, ডিসকো বস্তি, যুদ্ধমজুর, ভিক্ষের ঝুলি, মিথ্যে ডাইরি, কনককুন্তী, খানকির ছেলে, পুন্যির মা…
রাত্রি তারপর। নির্ঘুম।
রাত্রির অন্ধকার আমার ক্ষতে ঠোঁট দিয়ে বলল— বলার আছে এখনও আর?
তখন সেই মাতৃময় অন্ধকার দুহাতে জড়িয়ে অস্ফুটে বললাম— বলব, বলব, যেখানে যা ঘটুক, মৃত্যু পর্যন্ত বলে যাব ভালোবাসা পাওয়ার কথা ভালোবাসা না পাওয়ার কথা।