বই ও বইপাঠ বিষয়ে আমাদের কিছু জিজ্ঞাসা নিয়েই মূলত এই আলাপচারিতা
দেশলাই টিম: বই পাঠে আপনার অভিজ্ঞতা জানতে চাই; কখন থেকে আরম্ভ, বিশেষ কোন ঘটনা। বই পাঠে আগ্রহী হয়ে উঠতে প্রথম কার ভূমিকা ছিল এবং প্রথম পাঠ করা বইয়ের নাম কি?
জাকির তালুকদার: কোনো বিশেষ ঘটনা আমার বইপাঠের সূত্রপাত ঘটায়নি। বাড়িতে একটি পারিবারিক বইয়ের সংগ্রহ ছিল। খুব বেশি না। কিন্তু এখন বুঝি সেকালের সব উল্লেখযোগ্য বই এবং পত্রিকার সংগ্রহ ছিল আমাদের বাড়িতে। সেইসাথে বড় ভাই এবং বোনেরা ডিটেকটিভ বই পড়তেন। এটা-সেটা হাতাতে হাতাতেই বই পড়ার শুরু।
দেশলাই টিম: বই পাঠের শুরুর দিকে কার পরামর্শ আপনি বিশেষভাবে সর্বদা স্মরণে রাখেন এবং সেটি কেন? বই নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যভাবে কোন বিষয়গুলো আপনি বিবেচনায় রাখেন?
জাকির তালুকদার: শুরুর দিকে বাড়ির অভিভাবকরা আমার এইসব ‘আউটবই’ পড়া ভালোভাবে নেননি। তাই বলা চলে প্রথমদিকে কিছুটা লুকিয়ে-চুরিয়ে বই পড়তে হতো। কিন্তু যখন তারা দেখলেন বইপড়া এবং খেলার মাঠে বিপুল সময় কাটানো সত্ত্বেও আমি স্কুলের পরীক্ষায় খুব ভালো নম্বর পাচ্ছি, তখন সেই নিষেধাজ্ঞা এমনিতেই উঠে যায়। তবে কিছু বই বড়রা পড়ে লুকিয়ে রাখতেন। মানে তারাও লুকিয়েও পড়তেন। সেগুলো আমার পড়া হয়নি তখন।
ক্লাস ফোরে পড়ার সময় আমি পাবলিক লাইব্রেরিতে যাতায়াত শুরু করি। সেই সময় লাইব্রেরিয়ান সাহেব আমাকে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের জীবনী বেছে দিতেন। রাসুল থেকে স্তালিন– কারো জীবনীই বাদ ছিল না।
বই নির্বাচনে আমার কোনো বাছ-বিচার ছিল না। সেই কারণে প্রচুর অপাঠ্য এবং দুর্বল বইও পড়ে ফেলেছি। তাতে মনে হয় না খুব একটা ক্ষতি হয়েছে। খুব অল্প বয়সেই দুর্বল লেখক এবং সবল লেখকদের চিনতে শিখেছি। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হবার পরে বিভিন্ন পাঠচক্রে যোগ দিই। সাহিত্য পাঠচক্র, ইতিহাস পাঠচক্র, বিজ্ঞান পাঠচক্র, রাজনৈতিক পাঠচক্র। তখন সেই চক্রের জন্য নির্বাচিত বইয়ের পাশাপাশি অনেক রেফারেন্স বইও পড়তে শুরু করি। এখনো সেভাবেই চলছে। আমি সব বিষয়ের গভীরতাসম্পন্ন বই পড়তে চেষ্টা করি। আর যখন কোনো প্রবন্ধ বা উপন্যাস লিখতে যাই, বিশেষ করে উপন্যাস, তখন ফিল্ড ওয়ার্কের পাশাপাশি যে বিষয়টিকে কেন্দ্র রেখে উপন্যাস লিখি সেই বিষয়ের ওপর যেখানে যত বইয়ের সন্ধান পাই সব পড়ি।
দেশলাই টিম: যে কারোর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং পাঠ আবশ্যক মনে করেন কোন কোন বই? আপনার সংগ্রহে থাকা বইয়ের সংখ্যা কত?
জাকির তালুকদার: প্রথমেই বলি বাঙালি জাতির ইতিহাস বিষয়ক বই পড়ার কথা। নীহাররঞ্জন রায়ের বাঙালির ইতিহাস– আদিপর্ব মাস্ট রিড। সাথে রমেশচন্দ্র মজুমদার, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, আবদুল মওদুদ প্রমুখের লেখা ইতিহাস গ্রন্থগুলি পড়তে হবে। তারপর লেখলেখি করতে হলে বাংলাসাহিত্যের ইতিহাস। অনেকগুলো বই আছে। কোরআনের তর্জমা এবং তাফসির, রামায়ন, মহাভারত, গীতা, বাইবেল এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ। বাংলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় লেখা চিরায়ত বা ক্লাসিক বইগুলো। ধ্রুপদী গ্রীক নাটকগুলো। দর্শনশাস্ত্র যতটা সম্ভব। বাঙালির আবহমান লোককথা, উপকথা, কিংবদন্তি পড়তে হবে। লালনসহ অন্যান্য মরমী সাধকদের গান ও রচনার সাথে পরিচিত হতে হবে। সর্বশেষ বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার সাথে আপ-টু-ডেট থাকতে হবে।
আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে বই, লিটল ম্যাগাজিন, সাহিত্যপত্রিকা, গবেষণাপত্রিকা ইত্যাদির সংখ্যা ২০ হাজারের মতো।
দেশলাই টিম: বই পাঠের মাধ্যমে সত্যি কি একজন মানুষ পরিবর্তীত হয়ে উঠে? আপনার জীবনে বই পাঠের ভূমিকা কিভাবে বিবেচনা করেন?
জাকির তালুকদার: আমি ভালো বইয়ের একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছি। ভালো বই হচ্ছে সেটাই যেটি পাঠের পরে পাঠক আর হুবহু আগের মতো থাকবেন না। যত ন্যানো পরিমাণই হোক, তার ভেতরে একটি পরিবর্তন আসবেই। বইটি তাকে ভাবাবে, বইয়ের বক্তব্যের সাথে পাঠক দ্বিমত পোষণ করবেন, বিতর্ক করবেন নিজেরই মনে মনে, কখনো কখনো একমতও হবেন। সবমিলিয়ে তিনি একটু বেশি চিন্তাশীল হয়ে উঠবেন। প্রচলিত ব্যবস্থা এবং রীতি-নীতিকে প্রশ্ন করা শিখতে থাকবেন।
বই না পড়লে আমি এদেশের সাধারণ মুসলিম পরিবারের একজন গড় মানুষ হিসাবে বেড়ে উঠতাম। শরিয়ত-শাস্ত্রে যা আছে, তা বিনাবাক্যব্যয়ে মেনে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিতাম। মুক্তবুদ্ধি এবং মুক্তচিন্তার মানুষ হবার যে সাধনা আমি করে চলেছি, তা কিছুতেই সম্ভব হতো না।
দেশলাই টিম: বই পাঠের প্রধান অন্তরায় হিসেবে আপনার বিবেচনায় কি কি আসে? কেন বই পাঠ বিষয়টি আমাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের বাইরের বিষয় হয়ে উঠে?
জাকির তালুকদার: শেষের প্রশ্নের মধ্যে আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে অনেকটাই। বই যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠেনি, সেটাই গ্রন্থপাঠের প্রধান অন্তরায়। তারসাথে আর্থ-সামাজিক, ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক অনেক ঘটনা জড়িয়ে আছে। দেশের সিংহভাগ মানুষ কেবলমাত্র অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। একটি বিপুল অংশের তো অক্ষরজ্ঞানও নাই। বাকি যারা শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে, তারা পড়াশোনা করে মূলত চাকুরি পাওয়ার আশায়। ইংরেজরা শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল কেরানি তৈরির জন্য। এখন সেই শিক্ষাব্যবস্থা দিয়েই দেশের প্রধান কেরানি বা সচিব তৈরি হয়। তাদের শেখানো হয়– বস ইজ অলওয়েজ রাইট। তাই নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা বা কল্পনাশক্তির প্রয়োগের সুযোগ তাদের থাকে না। তারা একইভাবে চক্রাকারে দেশ ও জাতিকে ঘোরাতে থাকেন। রাজনীতিবিদরা আসেন মূলত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের বেঞ্চ থেকে। তারা কোনোরকমে ডিগ্রিটা পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। আমি অনেক এমপি-মন্ত্রী চিনি, যারা অবাধে নকল করা যায় যেসব এলাকায়, সেসব এলাকায় গিয়ে পাশ করে এসেছেন। কেউ কেউ অন্যকে দিয়ে খাতা লিখিয়ে নিয়ে ডিগ্রি পেয়েছেন। তাদের নিজেদেরই গ্রন্থভীতি আছে। কাজেই যেসব রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নিলে মানুষ বই পড়তে আগ্রহী হবে, সেগুলো নেবার কথা তাদের মাথায় আসবে না। তাছাড়া তারা এটা বোঝেন যে জনগণ যদি বইপাঠের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাহলে রাষ্ট্র এবং সরকারের যেসব গণবিরোধী নীতি আছে, সেগুলির বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিবাদ আসবে। কাজেই জনগণের ব্যাপক গ্রন্থপাঠ তাদের কাছে ভীতিকর একটি বিষয়। নিজের ধ্বংস কে ডেকে আনতে চায়? তাই জনগণ যত বই থেকে দূরে থাকবে, শাসকশ্রেণীর ততই মঙ্গল। তারা জনগণকে বই থেকে দূরে রাখার কাজটি নিষ্ঠার সাথে করে চলেছেন।
দেশলাই টিম: বই পাঠে আগ্রহী করে তুলবার জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত- ব্যক্তি, পরিবার বা সামাজিকভাবে?
জাকির তালুকদার: যে পরিবারে বাপ-মা বই পড়ে না, সেই পরিবার কিভাবে সন্তানের হাতে বই তুলে দেবে? আইন করে তো আর আপনি বই পড়া বাধ্যতামূলক করতে পারবেন না। তবে একটি জায়গাতে পারেন। সেটি হচ্ছে স্কুলে এবং কলেজে। পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বইপড়াকে একটি আবশ্যিক শর্ত হিসাবে যদি আপনি জুড়ে দিতে পারেন, তাহলে কিছুটা সুফল মিলতে পারে।
আর কোনো পদক্ষেপের কথা আমার মাথায় আসছে না। তবে সারাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামে যদি একজন করে পলান সরকার পাওয়া যায়, তাহলে পরিস্থিতি পাল্টাবে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
দেশলাই টিম: পাঠ অভ্যাস ও জ্ঞান চর্চায় ব্যক্তিগত পাঠাগার কিংবা পারিবারিক পাঠাগারের ভূমিকা ও এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু এবং এ বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতার কোন বিশেষ ঘটনা জানাবেন।
জাকির তালুকদার: শুরুতেই আমি আমার পারিবারিক পাঠাগারের কথা বলেছি। আমার নিজের অভিজ্ঞতাটিই আমার বিশেষ অভিজ্ঞতা।
দেশলাই টিম: পারিবারিক পাঠাগার গড়ে তুলবার জন্য কি কি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে? পারিবারিক পাঠাগার ধারনাটি কেন আমাদের প্রাত্যহিক ঘটনাপ্রবাহের অংশ হয়ে উঠে না?
জাকির তালুকদার: রাষ্ট্র এবং সমাজ যদি উন্নত মানসিকতার হতো, তাহলে পারিবারিক পাঠাগারের জন্য ইনসেন্টিভের ব্যবস্থা করত। সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যে পরিবারে ভালো পাঠাগার আছে তাদের সম্মানীত করত। তাহলে পরিবারে ভালো পাঠক গড়ে ওঠার একটি সুযোগ সৃষ্টি হতো। জানি না, তা কোনোদিন সম্ভব হবে না।
দেশলাই টিম: স্যোশাল মিডিয়ার কারণে বই পাঠের আগ্রহ কমে যাচ্ছে— এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য?
জাকির তালুকদার: আমি দ্বিমত পোষণ করি। সোশ্যাল মিডিয়া আসার আগে যারা বই পড়তেন, তারা এখনো পড়েন। যারা পড়তেন না তারা এখনো পড়েন না। তদুপরি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কিছু বইয়ের খবর অন্তত পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। এখন দেখবেন বইয়ের দোকান থেকে যত বই বিক্রি হয়, অনলাইনে বই বিক্রি তার চেয়ে বেশি। বাংলাদেশে তরল, সস্তা, হালকা বিনোদনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বরাবরই বেশি। যারা সস্তা বিনোদনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় যায়, সোশ্যাল মিডিয়া না থাকলেও তারা সিরিয়াস বই পড়বে না। বরং অন্য আরেকটি সস্তা বিনোদনক্ষেত্র বেছে নেবে।
দেশলাই টিম: স্যোশাল মিডিয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহী হয়ে উঠার ফলে বই পাঠে আগ্রহ কমে যাচ্ছে- এমন মন্তব্যে আমরা অভ্যস্থ; প্রকৃতভাবে কি তাই?
এবং স্যোশাল মিডিয়া যত যত মাধ্যমে তার বিজ্ঞাপন প্রচার করে- অপর দিকে একটি বই, বই পাঠের গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা, ভাল বইয়ের সাথে পরিচয়, বই পাঠ বিষয়ক বিভিন্ন আয়োজন ইত্যাদি বিষয়ে কতটি বিজ্ঞাপন, লেখা বা ভিডিও লক্ষ্য করেন প্রতিদিন? সুতরাং এই বিষয়টি নিজেরাই অ-সম জায়গায় রেখে সামগ্রিক বিষয়টিকে ভিন্ন দিকে পরিবর্তীত করা হচ্ছে কি? এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
জাকির তালুকদার: আগের প্রশ্নের উত্তরেই এসব কথা বলা হয়ে গেছে। তবে সস্তা বিনোদনের ক্রেতা অনেক বেশি। তাই সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের বিজ্ঞাপনও বেশি। যদি বইয়ের কথাও বলেন, তাহলে দেখুন, সবচেয়ে প্রভাবশালী বই বিক্রেতা রকমারি ডটকম কাদের বই বেশি প্রমোট করে। শুনেছি তারা নাকি জামায়াত মাইন্ডেড। কিন্তু ব্যবসা এমনই জিনিস, তাদের আদর্শিক বইগুলোকেও তারা প্রমোটের সময় পেছনের সারিতেই রাখে। প্রগতিশীল এবং রুচিশীল প্রতিষ্ঠানগুলো সোশ্যাল মিডিয়াকেও সেভাবে দক্ষতার সাথে ব্যবহার করতে পারে না। পুঁজি এবং লোকবলের ঘাটতি আছে তাদের। তাই অন্যসব ক্ষেত্রের মতোই সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিযোগিতাটিও অসম। মুক্তবাজার পুঁজিবাদী অর্থনীতি যে রাষ্ট্রের নীতি হিসাবে গৃহীত, সে দেশে এমনটি ঘটাই স্বাভাবিক।
দেশলাই টিম: স্যোশাল মিডিয়া সর্বোপরি একটি সামাজিক প্লাটফর্ম; মানে একটি সমবেত হওয়ার ক্ষেত্র; এখানে যে যার বিষয়গুলো নিয়েই হাজির হচ্ছে, যেখানে বই পাঠ বা শিল্প সাহিত্য চর্চার রিসোর্স অত্যন্ত সীমিত। এই রিসোর্স (বিজ্ঞাপন, লেখা বা ভিডিও, নাটক সিনেমায় বই পাঠ বিষয়ক বিষয়বস্তু) বৃদ্ধি না করে – মানুষ বই পড়ে না; এটা কি একপ্রকার অপপ্রচার নয়? এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কি হতে পারে?
জাকির তালুকদার: মনে হয় এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে ভালো বইকে যারা পাঠকের সামনে উপস্থিত করতে চান, তাদের প্রচার চালাতে হবে অনেকভাবে। বইটির পরিচিতি উপস্থাপন করতে হবে মনোগ্রাহী ও শৈল্পিক ভাষায়, বইটি নিয়ে গুণীজনরা যেসব মন্তব্য করেছেন সেগুলি উদ্ধৃত করতে হবে বারবার, বইটি পাঠের পর অচেনা পাঠক যে মন্তব্য লিখে পাঠান, সেই মন্তব্যগুলিকেও প্রচার করতে হবে যথাযথ গুরুত্বের সাথে। প্রশ্ন এখানেও পুঁজির স্বল্পতার। তাহলে সমাধান কী? সমাধান হচ্ছে– এই সিরিয়সধর্মী ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলির সমবায় গড়ে তোলা। সমবায়ী ভিত্তিতে কার্যক্রম চালানো। তাহলে যুদ্ধের অসমতা কিছুটা কমানো সম্ভব।
দেশলাই টিম: বাংলাদেশের ২০ শতাংশ পরিবারও যদি প্রতিমাসে ১টি করে বই কেনে তাহলে বই বিষয়ক আমাদের সমস্ত ধারনাই উলট-পালট হয়ে যেতে পারে? এ ধরণের কর্মকাণ্ড কেন আমাদের প্রাত্যহিক হচ্ছে না? এর পেছনে অন্তরায় কি এবং কেন?
জাকির তালুকদার: সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে উত্তরে দেওয়া সম্ভব না। এই প্রশ্নে যেসব বিষয় উত্থাপিত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে মাসব্যাপী সেমিনার আয়োজন করা প্রয়োজন। সেখানে চিন্তকরা থাকবেন, পাঠক থাকবেন, লেখক থাকবেন, প্রকাশক থাকবেন, ক্রেতারা থাকবেন, পুস্তক বিপণনকারীরা থাকবেন। মানুষের সাংস্কৃতি চেতনা বাড়ানোর জন্য যেসব ব্যক্তি এবং সংগঠন কাজ করেন তারা থাকবেন, পরিসংখ্যানবিদরা থাকবেন, রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকদেরও থাকতে হবে। তাহলে হয়তো কিছু কর্মপদ্ধতির কথা বেরিয়ে আসতে পারে।
দেশলাই টিম: স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়- এমন কি সমাজের নানান স্তরে, পরিবারে ও পরিচিত গন্ডিতে বই পাঠ বিষয়ক কি কি পদক্ষেপ নেয়া অত্যাবশ্যকীয়, এবং এখানে আপনার কি কি ভূমিকা রয়েছে বা থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন।
জাকির তালুকদার: স্কুল-কলেজে বাৎসরিক যত প্রতিযোগিতা হয়, সেগুলোর পুরস্কার হিসাবে থালা-বাটি না দিয়ে বই দেওয়াটা বাধ্যতামূলক করতে হবে। যত শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে, তাদের সবাইকে পুরস্কার হিসাবে বই দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
দেশলাই টিম: উল্লেখযোগ্য অল্প কিছু বইয়ের দোকান ছাড়া সারাদেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যে সমস্ত বইয়ের দোকান রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? কেন বই বিক্রয়ের এই চ্যানেলগুলো যথাযত ভূমিকায় থাকছে না? পক্ষান্তরে আপনি কোন বই কিনতে গেল খুঁজেও পাচ্ছেন না? এ বিষয়ে আপনার অভিমত জানতে চাই।
জাকির তালুকদার: বইয়ের দোকানিদের তো বেঁচে থাকতে হবে। নোটবই, সহায়ক বই বেচে মফস্বলের বইয়ের দোকানদাররা বেঁচে থাকেন। সেখানে যেহেতু ভালো এবং গুণবিচারী পাঠকের সংখ্যা নগণ্য, তাই তাদের কয়েকজনের চাহিদার দিকে নজর দেবার অবকাশ বইবিক্রেতাদের থাকে না। তাদেরকে সেজন্য দোষ দেওয়াও যাবে না। বরং উপজেলা পর্যায়ে যেসব পাঠাগার আছে, সেখানে বইবিক্রির একটি কর্নার করা যেতে পারে। তবে পাঠাগারেও যেহেতু মানুষ যায় না বললেই চলে, তাই বলা যাবে না কয়দিন টিকে থাকবে সেইসব বইবিক্রি কর্নার। আমি তাই এখনো অনলাইনে বই কেনা-বেচার বাইরে আপাতত কোনো অপশন খুঁজে পাচ্ছি না।