বই ও বইপাঠ বিষয়ে আমাদের কিছু জিজ্ঞাসা নিয়েই মূলত এই আলাপচারিতা
দেশলাই টিম: বই পাঠে আপনার অভিজ্ঞতা জানতে চাই; কখন থেকে আরম্ভ, বিশেষ কোন ঘটনা। বই পাঠে আগ্রহী হয়ে উঠতে প্রথম কার ভূমিকা ছিল এবং প্রথম পাঠ করা বইয়ের নাম কি?
পাপড়ি রহমান: আরম্ভটা ঠিক কবে হয়েছিল, তা আর এখন স্পষ্ট মনে নেই। তবে আরম্ভটা হয়েছিল একেবারে শৈশবেই। আমাদের বাড়িতে খুব বই পড়ার চল ছিল। আমার আম্মা, চাচিমা, ফুপুমায়েরা দেদারসে বই, নানান রকম পত্রপত্রিকা পড়তেন। এবং মজার ব্যাপার হলো তাঁরা সব বইকেই বলতেন ‘নভেল’। গল্পের বই হলেও সেটা ছিল ‘নভেল’। উপন্যাস হলেও ‘নভেল’। আমার চাচাজান, আব্বা, সেজোচাচাও বইয়ের পোকা ছিলেন। এঁরা পড়তেন নজরুল, রবীন্দ্র, শরৎচন্দ্র ইত্যাদি।
আম্মারাও শরৎচন্দ্র পড়তেন। নীহারঞ্জন গুপ্ত, আশুতোষ, নিমাই পড়তেন। সেই সঙ্গে রোমেনা আফাজের ‘দস্যু বনহুর সিরিজ’ পড়তেন একেবারে নেশার মতো। নতুন সিরিজের বই বেরুলে সেটা তাঁদের পড়া চাই-ই- চাই। ‘কুয়াশা’ সিরিজের বইগুলি পড়তেন আমার সেজোচাচা।
আমি হয়তো সবাইকে রাতদিন এত পড়তে দেখেই বইপাঠে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম। এখানে বিশেষ একজন কারো ভূমিকা নেই বোধকরি।
আমার প্রথম পড়া বই অবশ্যই বড়দের বই [পাঠ্য বইয়ের বাইরে] এবং তা ছিল ‘দস্যু বনহুর’ সিরিজের। আমার বয়স তখন সাত কি আট। ছোটফুপুমা পড়ছিলেন একটা বই, নাম ‘সর্বহারা মনিরা’। বইটা আমি বিছানায় শুয়ে বালিশের তলায় লুকিয়ে রেখে রেখে পড়ছিলাম। তখন হয়তো ভালো করে পড়তেও শিখি নাই।
কিন্তু বালিশের তলায় লুকিয়ে রেখেও শেষ রক্ষা হয়নি। ছোটফুপুমা এসে বইটা কেড়ে নিয়ে যান। আর রাগে গজগজ করতে করতে বলেন— বড়দের বইয়ে হাত দিছস ক্যান?
দেশলাই টিম: বই পাঠের শুরুর দিকে কার পরামর্শ আপনি বিশেষভাবে সর্বদা স্মরণে রাখেন এবং সেটি কেন? বই নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যভাবে কোন বিষয়গুলো আপনি বিবেচনায় রাখেন?
পাপড়ি রহমান: আমি আদতে আপনজালা গাছেদের মতো আপনজালা পাঠক। আমার কোনো গুরু নেই। কোনো নির্দেশক নেই।
ওই যে একটা লাইন আছে না—
আকাশ আমায় শিক্ষা দিলো উদার হতে ভাইরে / কর্মী হবার মন্ত্র আমি বায়ূর কাছে পাইরে।
সাত/আট বছর বয়স থেকেই আমি ছিলাম সর্বভুক-পাঠক। হাতের কাছে যা পেতাম তাই গোগ্রাসে খেয়ে ফেলতাম। বাসায় আসতো উদয়ন পত্রিকা। আম্মা নিয়মিত বাসায় রাখতেন চিত্রালী, পুর্বাণী, বেগম। ইত্তেফাক রাখতেন আব্বা। বাসায় ছিল এন্তার শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ। ছিল গোলাম মোস্তফার বিশ্বনবী। বড়পীর সাহেবের জীবনী। মোকছেদুল মোমেনিন, রহুল কোরান। ঢাউস ঢাউস কিছু ভারতীয় পত্রিকা— আনন্দলোক নাকি আনন্দভুবন বা অন্য কোনো নাম। এতদিনে ভুলে গিয়েছি।
তবে আমি ছিলাম অনুসন্ধিৎসু — অন্তত বইয়ের ব্যাপারে। যার মুখেই যে বইটার নাম শুনতাম সেটা পড়া চাই। চা-ই চাই। আজও তেমনি আছি। একটা ঘটনা বলি— আমি যখন একাদশ শ্রেনীতে পড়ি, আমার ছোটফুপুমার দেবরের কলিগ, ক্যাপ্টেন মুজিব একদিন বলল—
পাপড়ি, তুমি নিমাইয়ের মেমসাহেব পড়েছ?
আমি তখনো সে বইটা পড়িনি। খোঁজ লাগিয়ে, চেয়েচিন্তে ঠিকই পড়ে ফেললাম। আর একটা বিষয় ছিল, আমি প্রায় সবার কাছেই ভালো বইটির নাম জানতে চাইতাম। বিশেষ করে যারা বইটইয়ের খোঁজ রাখতেন। এভাবেই পড়েছিলাম গোর্কির ‘মা’, ‘পৃথিবীর পথে’, মৈত্রেয়ী দেবীর ‘ন হন্যেতে’, মির্চা এলিয়েদের ‘লা নুই বেঙ্গলি’, সৈয়দ মুজতবা আলির ‘শবনম’, শামস রশীদের ‘উপল উপকূলে’, অবধূতের ‘উদ্ধারনপুরের ঘাট’ ইত্যাদি।
হ্যাঁ, আমি মারাত্মক সিলেক্টিভ। কোনো চটুল-বই, অগভীর-বই, কপিপেস্ট-বই আমাকে টানেনা। যখন কিশোরী ছিলাম তখন হয়তো সেসব বই কিছু পড়া হয়েছে। এখন তো একদমই নয়। আমি পড়লে ক্লাসিকই পড়ি। উচ্চমানের সাহিত্য পড়ি। এখন অবশ্য গল্প-উপন্যাসের চাইতে প্রবন্ধ-নিবন্ধ, বিদেশী লেখকদের লেখা, অনুবাদ ও দর্শনের বই বেশি পড়ি। ও হ্যাঁ আরও একটা বিষয়— আমি প্রচুর কবিতা পড়ি। নতুন কবিদের কবিতার বই বিশেষ করে।
প্রাচীনদের মাঝ থেকে রেগুলার পড়ি কবি জীবনানন্দ দাশ, আবুল হাসান, জয় গোস্বামী , জয়দেব বসু, উৎপল কুমার বসু, শঙ্খ ঘোষ প্রমুখের। আরও একজন— কবি নুরুল হকের কবিতা। সম্প্রতি তিনি গত হলেন। কবি নুরুল হক একজন প্রকৃত কবি ছিলেন বলেই হয়তো নিভৃতচারী ছিলেন। কবি নুরুল হকের কবিতা বহুল পাঠ জরুরি।
সাহিত্যের হাটবাজারে বসে থেকেও তিনি কীভাবে নিজস্ব স্টাইলে কবিতা লিখে গিয়েছেন তা পাঠকদের জানা দরকার।
আর জানেনই তো,সমস্ত ট্র্যাশদের [এখানে ট্র্যাশ না বলে চোর-গুন্ডা-বদমাইশ-বাটপার টাইপের লেখক বলতে পারলে ভালো লাগত, কিন্তু সুশীল থাকার চেষ্টায় তা বলা গেলো না! এইখানে স্যাড ইমো হবে!] ভীড়ে প্রকৃত মেধাবীরা আড়ালে চলে যায়।
আমি সবসময়ই অফট্র্যাকের বই পড়তে পছন্দ করি।
দেশলাই টিম: যে কারোর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং পাঠ আবশ্যক মনে করেন কোন কোন বই? আপনার সংগ্রহে থাকা বইয়ের সংখ্যা কত?
পাপড়ি রহমান: প্রতিটি মানুষ সবকিছুতেই আলাদা। তাদের মন ও মনোজাগতিক বিষয়গুলিও আলাদা। এখন আমি বললেই কেউ আমার কথা শুনবে কেন? রাসেল, ওশো, গালিব, রুমি, জিবরান এঁদের আমি পড়ি। রুমি ও জিবরান নিত্য পড়ি। পড়তেই হয় আমাকে। তবে যারা লিখতে চায় বা সিরিয়াসলি লিখতে আসতে চায়, তাদের জন্য কিছু বই পড়া অতি আবশ্যক। গদ্য লিখতে চায় যারা, তাদের জন্য সৈয়দ শামসুল হকের ‘মার্জিনে মন্তব্য ও গল্পের কলকব্জা’ বইটি দরকারি। যারা কবিতা লিখতে চান তাদের জন্য নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘কবিতার ক্লাস’, শঙ্খ ঘোষের ‘ছন্দের বারান্দা’ ইত্যাদি পড়া দরকার। আরেকটি বই পড়তেই হবে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘কী লিখবেন, কেন লিখবেন’।
এসব ছাড়াও ভালো লেখকদের বইগুলি পড়তে হবে। শুরু থেকেই কেউ যদি ট্র্যাশ পড়তে শুরু করেন তাহলে কিন্তু বিপদ। কারণ তাতে তার পাঠরুচি সেভাবেই তৈরি হয়ে যেতে পারে।
আমার সংগ্রহে থাকা বইয়ের সংখ্যা খুব বেশি নয়। ২০০০ থেকে ২৫০০ হতে পারে। কিন্তু যেসব বই আছে সবই রেয়ার বা দুষ্প্রাপ্য বই। আমি অবশ্য প্রতি বছরই বই বাছাই করি। বাছাই করে প্রতি বছরই ৪০০ থেকে ৫০০ বই বিভিন্ন লাইব্রেরিতে দিয়ে দেই। একবার তো ২০০০ বই দিলাম ১০টা লাইব্রেরীকে। এসব লাইব্রেরী দেশের অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। আমি চাই সেই দূর দূর গ্রামের মানুষেরা বই পড়ুক। যেসব বই আমি দান করি, তাদের বেশিরভাগই উপহার পাওয়া বা বইমেলার পরিচিত মুখদের খুশি করতে কেনা। যেসব আমার পড়া হবে না কোনোদিনই বা কাজে লাগবে না। শুধু যে এমন বই দিই, তাও কিন্তু নয়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বইও দিই। এমনকি আমার নিজের বইও।
দেশলাই টিম: বই পাঠের মাধ্যমে সত্যি কি একজন মানুষ পরিবর্তীত হয়ে উঠে? আপনার জীবনে বই পাঠের ভূমিকা কিভাবে বিবেচনা করেন?
পাপড়ি রহমান: দেখুন কে কীভাবে নিজেকে পরিবর্তিত করবে সেটা বলা কিন্তু মুশকিল।
আমার আব্বা ছিলেন স্বশিক্ষিত ও অত্যন্ত শার্প চিন্তার একজন মানুষ। আব্বা আমাকে একটা কথা প্রায়ই বলতেন—
কেউ মদ বেচে দুধ খায়। আবার কেউ বা দুধ বেচে মদ খায়। [তার মানে এই নয় যে আমি মদ খাওয়াকে মন্দ চোখে দেখছি! মদ বিষয়ে আমার কোনো প্রেজুডিস নেই কিন্তু]
এখন এই মদ বা দুধ এই দুইকে কে কীভাবে নেবে এটা একদমই তার নিজস্ব চয়েস। অনেকেই ভুরি ভুরি বই পড়ে, কিন্তু চিন্তাভাবনায় একেবারে সংকীর্ণ। অনেকে উচ্চ পদস্থ কর্মকতাকেও দেখেছি সেই প্রাচীন যুগের মতো নিজের ব্যর্থতাকে অন্যদের ঘাড়ে চাপাতে। সবকিছুতেই নারীদের দোষারোপ করতে।
এমনও অনেক শিক্ষিত পরিবার আছে, যারা ভাবে, তারা নিজেরাই শুধু বড়! তারাও কিন্তু নারীদেরকে জন্তু জ্ঞান করে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। অথচ তাদের ঘরে হয়তো বইয়ের লাইব্রেরী আছে।
মফস্বলে আমার এক কবিবন্ধু আছেন, যার বেশ পড়াশুনা, ঘর বোঝাই বইপত্তর। কিন্তু সে নিজ-স্বার্থের বাইরে কিছুই ভাবতে পারে না। সে এই বই পড়ার গুমোরেই যখন তখন অন্যদের যা-তা অপমান করে বসে। দেখেন, একজন বইয়ের দরিয়ার মাঝে বসে থেকেও শুধুমাত্র নিজের সুখসুবিধা দেখেই জীবন কাটিয়ে দিলো। নিজের মতামতকেই প্রাধান্য দিয়ে চলল। ‘তালগাছটা আমার’ করে করে অন্যদের খারিজ করে দিলো। তার অন্যায় আচরণে অন্যদের চোখের জল কত যে ঝরলো, কিন্তু তা সে কোনোদিন কেয়ারও করলো না। তাহলে এখন বলুন বইপাঠের ভূমিকা কী? ভুরি ভুরি বই পড়ে অন্যকে আঘাত দেয়া? অপমান করা? নিজেকে কেউকেটা ভাবা? নিজের ধান্ধাবাজির বাইরে কিচ্ছু না ভাবা?
পরিবর্তন যদি কিছু কেউ করতে চায়, সেটা নিজেকেই করতে হবে।
আমি বই থেকে লেখকের দেখা মানবিক ও উন্নত জীবনদর্শনকেই গ্রহণ করতে চাই। করিও। বই মানে কী? লেখকের চিন্তাভাবনার ফলাফলই তো, নাকি? বা লেখকের দর্শন।
বইপত্র পড়েও যদি কূপমুন্ডক হয়ে কেউ বেঁচে থাকতে চায়, তাকেই বা আমরা কি বলতে পারি? বা কীভাবে বদলাতে পারি? উদাহরণ হিসেবে আমি আমার সেই কবিবন্ধুটির কথা তো বললামই। তার তো বই পড়ার খামতি নাই।
বিষয়টা আদতে গ্রহণ আর বর্জনের। নিজস্ব বিবেচনার।
কামিনি রায়ের ওই কবিতাটার কথা স্মরণে আসছে—-
পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি / এ জীবন মন সকলি দাও, / তার মত সুখ কোথাও কি আছে? / আপনার কথা ভুলিয়া যাও। / পরের কারণে মরণেও সুখ, / ‘সুখ-সুখ’ করি কেঁদো না আর; / যতই কাঁদিবে যতই ভাবিবে, / ততই বাড়িবে হৃদয়-ভার। / আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে / আসে নাই কেহ অবনী পরে / সকলের তরে সকলে আমরা / প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।
এখন কামিনি রায়ের এই জীবনদর্শন আমার বা আপনার হতে পারে। কোনো অতি বিদ্বান বা বুকিশের তো তা নাও হতে পারে।
সেক্ষেত্রে করনীয় কী?
দেশলাই টিম: যেকোন মানুষের আত্মিক উন্নয়নের জন্য শিল্প-সাহিত্যের ভূমিকা অবিকল্প। সেক্ষেত্রে শিল্প-সাহিত্য সর্বাঙ্গিন অপরিহার্য হয়ে ওঠাই ছিল স্বাভাবিক। তা না হয়ে মনস্তাত্ত্বিকভাবে ঠিক কোন বিষয়গুলো কেন গুরুত্ব পাচ্ছে? এই যে বাঁক বদল এ বিষয়ে আপনার দৃষ্টিতে ভবিষ্যৎ করণীয় কি?
পাপড়ি রহমান: কথাটা বোধকরি পুরোপুরি ঠিক নয়। মানুষের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় তার পরিবার থেকে। একজন মানুষের ভবিষ্যত-ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়ে যায় অতি শৈশবেই। ৫ থেকে ৭ বছর সময়টুকুতে শিশু যা শেখে এটাই তার সারাজীবনে শিক্ষা হয়ে থাকে। এখন পরিবারগুলির দিকে তাকান, দেখবেন সবাই ছুটছে। শিশুর দিকে তাকানোর অবকাশ তাদের নাই। সকলের হাতেই স্মার্টফোন। দৃষ্টি স্ক্রীনে। এসবের মাঝেই একজন শিশু বেড়ে উঠছে। একজন শিশু বড় হয়ে ওঠার পরেই না শিল্প-সাহিত্যের বিষয়টি আসবে বা আসে।
শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রই বা আর আগের মতো কই? সবই তো শুধু পকেট ভারী করার দিকে দৌড়াচ্ছে। সেই নিঃশেষ-প্রাণই বা কই?
মনস্তাত্ত্বিক বিষয় বলতে কী বুঝাতে চাইছেন ঠিক বোধগম্য হলো না আমার!
মানে বলতে কী চাইছেন মানুষেরা আর আগের মতো শিল্পের দিকে, সাহিত্যের দিকে ঝুঁকে নেই? দেখুন দ্রুত বদলে যাওয়া এই পৃথিবীতে কারই-বা তেমন সময় আছে? যান্ত্রিকসভ্যতা একে একে সবই গ্রাস করে নিচ্ছে।
আগে একজন শিল্পীর হাত রঙে রাঙা না হলে কোনো ভালো ছবি আঁকা যেতো না। অথচ এখন একটা কম্পিউটার থাকলেই সব কাজ সারা হয়ে যায়। রঙ-তুলির বদলে আছে গ্রাফিকস! কত সহজেই না কতকিছু আঁকা হয়ে যাচ্ছে?
তাকিয়ে দেখুন, শিল্পের জন্য, সাহিত্যের জন্য সেই ধ্যানগ্রস্ত মানুষেরা আজ কিন্তু আর নেই। সবকিছুতেই কেবল তাড়া আর তাড়া। মানুষের মাঝ থেকে মানবিক বোধগুলিও ক্রমে উধাও হয়ে যাচ্ছে! যন্ত্রের সংসর্গে এসে মানুষই যেন যন্ত্রে রুপান্তরিত হচ্ছে।
আধুনিক জীবন এসে হানা দিচ্ছে মানুষের সুকুমার বৃত্তিগুলিতে। এক্ষণে কী করে ঠেকানো যাবে এইসব? ঠেকানো যাবে না, যাচ্ছে না।
পরিবারগুলিই এখানে ভূমিকা রাখতে পারে। একজন শিশুর বেড়ে উঠবার কালটিতে প্যারেন্টস বড় ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে। শিশুর হাতে ফোন বা ট্যাব না দিয়ে রঙতুলি দেয়া হোক। কার্টুন না দেখিয়ে গল্প পড়ে শোনানো হোক। কিন্তু সেই সময় বা ধৈর্য তো কারোরই নেই।
শিশুদের কচিমনে ভালোমন্দের বীজটি বুনে দিন।
বেশি বেশি করে কালচারাল প্রোগ্রামগুলি হোক। ছবির এক্সিবিশন হোক। জেলায় জেলায় ছয়মাস অন্তর অন্তর বইমেলা হোক। শিশুদের হাতে ফোন তুলে না দিয়ে বই তুলে দেয়া হোক।
দেশলাই টিম: বই পাঠের প্রধান অন্তরায় হিসেবে আপনার বিবেচনায় কি কি আসে? কেন বই পাঠ বিষয়টি আমাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের বাইরের বিষয় হয়ে উঠে?
পাপড়ি রহমান: এই প্রশ্নের জবাব হয়তো আগের প্রশ্নের উত্তরে খানিকটা দেয়া হয়ে গেছে।
দেখুন, বার বার বলছি পরিবারের ভূমিকা। পারিবারিক শিক্ষার গুরুত্ব।
এ প্রসঙ্গে বলি বাচ্চারা কিন্তু অত্যন্ত অনুকরণ প্রিয় হয়। আমার নিজের জীবন থেকে বলি— আমি তো চিরকালের পড়ূয়া । আমাকে পড়তে হয়ই। আমি আমার অফিসিয়াল বা সাংসারিক কাজবাজ গুছিয়ে দুপুরের লাঞ্চের পর বা রাতে বই খুলে বসতাম। আমার দুই বাচ্চাও তাদের গল্পের বই নিয়ে আমার দুইপাশে বসে বসে পড়তো। দৃশ্যটা একবার কল্পনা করুন। মায়ের সঙ্গে সঙ্গে তার দুইবাচ্চাও পড়ছে!
পড়ার পরিশ্রম তো সকলে করতে চাইবে না। যেমন আমার ঘরের কর্তাব্যক্তি যিনি, তিনি তো একটা বইয়ের মলাট খুলেও দেখেননি কোনোদিন।
সবই যদি করা যায়, তাহলে বই পড়া যাবে না কেন?
নেটফ্লিক্সে সিরিয়াল বা মুভি দেখার চাইতে বই পড়াতে তো মনোযোগ বেশি দিতে হয়। সেটা কেউ দেবে কেন? কঠিনেরে ভালোবাসিলাম— এই কথাটি কে বলবে? কিংবা কেন বলবে?
এ ছাড়াও রুটিরুজির ধান্ধা করতে করতেই তো মানুষের জীবন জেরবার। আছে রুদ্ধশ্বাস কপমিটিশন। অমুকের এত আছে আমার নেই কেন? চারপাশের এতসব হ্যাপা সামলিয়ে কারই বা বই নিয়ে বসতে ইচ্ছে করবে বলুন?
দেশলাই টিম: বই পাঠে আগ্রহী করে তুলবার জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত- ব্যক্তি, পরিবার বা সামাজিকভাবে?
পাপড়ি রহমান: আমার মনে হয় এই রাষ্ট্রে, এই সমাজে, ভালো বইয়ের প্রচার বা প্রসার তেমনভাবে হয় না। প্রচারের জন্য কিন্তু বিজ্ঞাপন খুব ভালো উপায়। যেমন ধরুন, মিনা কার্টুন— এই মিনাকে কিন্তু ধনী-গরিব সকলেই কম-বেশি চেনে। সকলেই মিনার কাজকর্ম নিয়ে ধারণা রাখে। বা সিসিমপুরের মতো এনিমেশন সিরিজ।
এখন বই পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে এরকম কোনো উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। বানানো যেতে পারে মিনার মতো কার্টুন সিরিজ।
প্রকাশকেরাও কিন্তু প্রচারের ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন। যেমন কোনো নতুন বই প্রকাশিত হলে সেই লেখককে সম্মান জানাতে মিডিয়াকে দাওয়াত দিয়ে বলা যে, এটি একটি ভালো বই। বা স্টলে লেখককে আমন্ত্রণ জানিয়ে পাঠকদের সাথে যোগসূত্র তৈরি করে দেয়া। কিন্তু এসব তো চিন্তাই করা যায় না! এমনকি কোনো লেখকের কোনো নতুন বই প্রকাশিত হলে লেখককে জানানোই হয়না, লেখক নিজেই উদ্যোগী হয়ে যদি জেনে না নেন। প্রকাশক ব্যবসা করছেন লেখকদের বই নিয়ে অথচ সেই লেখকদের সম্মানের চোখে দেখেন কয়জন প্রকাশক?
এখন ব্যক্তিগতভাবে আমি কিন্তু একটা ভালো বইয়ের প্রচার করি। করতেই থাকি। যেমন হাসান আজিজুল হকের উপন্যাস ‘আগুনপাখির’ কথা আমি সর্বত্র বলে বেড়াই। বা আনসারুদ্দিনের ‘গো রাখালের কথকতা’র কথাও। অশোক দেবের ‘সদাপুরান’। সুনন্দা সিকদারের ‘দয়াময়ীর কথা’। কবি মজনু শাহের ‘জ্রেবা মাস্টার’ আমি কম করে হলেও ১০ কপি কিনেছি। এবং অন্যদের গিফট করেছি। একটা বই পড়ে ভালো লাগলে সে বইয়ের কয়েক কপি কিনে আমার বন্ধুদের পড়ানোর চেষ্টা করি। এভাবে কিন্তু একটা বই প্রচার পেয়ে যায়।
আর পারিবারিকভাবে বইপাঠের অভ্যাস গড়ে তুলতেই হবে। শিশুবেলা থেকেই বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দিতে হবে। নিজেদেরও পড়তে হবে। শিশুরা কিন্তু সবই বোঝে। যখন দেখবে বই পড়ার জন্য কেবল তাকেই বলা হচ্ছে, তখন কিন্তু সে তা করতে চাইবে না।
দেশলাই টিম: পাঠ অভ্যাস ও জ্ঞান চর্চায় ব্যক্তিগত পাঠাগার কিংবা পারিবারিক পাঠাগারের ভূমিকা ও এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু এবং এ বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতার কোন বিশেষ ঘটনা জানাবেন।
পাপড়ি রহমান: এসব প্রশ্নের উত্তর আগের উত্তরগুলির মাঝেই হয়তো দেয়া হয়ে গিয়েছে। হাতের কাছে বই থাকলে পাঠে সুবিধা হয় বা হবে এটা তো বলাই বাহুল্য। তবে শো অফ করার জন্য বইগুলিকে সাজিয়ে রাখলে তো হবে না। অনেক বাড়িতে দেখবেন, বই রাখা হয় শুধুমাত্র নিজেদের ‘জ্ঞানদার’ প্রমাণ করার জন্য। নিত্য ঝাড়ামোছা করে তারা বই সাজিয়েগুছিয়ে রাখেন সমাজের কাছে নিজেদের ওজনদার প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারা কিন্তু অন্তঃসারশূন্য।
কিছু ঘটনা বলি— আমার কিন্তু বেশিরভাগ বই পড়া হয়েছে প্রতিবেশিদের ব্যক্তিগত লাইব্রেরী থেকে [ইঁচড়ে পাকাও বলা যায় আমাকে]। আমি যাদের সাথে ইশকুলে যেতাম তাদের প্রায় সকলের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক লাইব্রেরী ছিল।
বিকেলে খেলতে গিয়ে আমি না খেলে বই পড়তে লেগে যেতাম। বা ইশকুলে যাওয়ার আগে পড়ে ফেলতাম কিছু না কিছু। আমার ১০ বছর বয়স হবার আগেই পড়ে ফেলেছিলাম ‘সহস্র এক আরব্য রজনীর’ মতো এডাল্ট বই। বইয়ের শুরুতেই লেখা ছিল ‘প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য’। তখন প্রাপ্তবয়স্ক কী তাইতো বুঝিনা। কিন্তু পড়ে ফেলছি সব বড়দের কথাবার্তা।
এতে অবশ্য একটা ব্যাপার হয়েছিল, আমিও বই সংগ্রহ করতে শিখেছিলাম। আমার আব্বা আমাকে সবসময় দ্বিগুণ পকেটমানি দিতেন। যেমন ইশকুলে যেতাম অন্যজনের সাথে শেয়ার করে রিক্সায়, লাগত ৬০ পয়সা আব্বা আমাকে দিতেন ১২০ পয়সা। কলেজেও তাই ছিল। আমার খরচ ছিল ৫ টাকা, আব্বা আমাকে দিতেন ১০টাকা। তো ইচ্ছেমত টিফিন খেয়েও আমার কিছু টাকা জমে যেতো। ইশকুল লাগোয়া লাইব্রেরী থেকে আমি সে টাকায় বই কিনে নিয়ে বাসায় ফিরতাম।
দেশলাই টিম: পারিবারিক পাঠাগার গড়ে তুলবার জন্য কি কি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে? পারিবারিক পাঠাগার ধারনাটি কেন আমাদের প্রাত্যহিক ঘটনাপ্রবাহের অংশ হয়ে উঠে না?
পাপড়ি রহমান: দেশলাইয়ের প্রশ্নগুলি প্রায় একইরকম হয়ে যাওয়াতে উত্তরগুলিও একঘেয়েমির দোষে দুষ্ট মনে হতে পারে। বইয়ের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে বা বইপাঠের অভ্যাস না থাকলে পাঠগার করেও কিন্তু ফায়দা কিছু হবে না। তবে শুরুটা কিন্তু কর্তাব্যক্তি দ্বারা হলেই ভালো হয়। ধরুন, পরিবারের নানান সওদাপাতি কেনার পাশাপাশি বই কেনার জন্য একটা বাজেট রাখা যেতে পারে। এতে করে কিছু বই প্রতি মাসেই বাসায় জমা হয়ে যাবে। এখন তো আরও মুশকিলের-কাল— বিভিন্ন ডিভাইসে নানান কিছু জানা ও পড়ার সুবিধা ছেড়ে কেই-বা আসবে নিস্প্রাণ বইয়ের পাতা উল্টেপাল্টে দেখতে?
তবে হপ্তায় একদিন পরিবারের সকলে মিলে ‘বই পাঠের আড্ডা’ নামক একটা আড্ডা দিলে ভালো হয়। বিষয়টা এমন হতে পারে যে, যে যে বইটা পাঠ করল তার সিনপসিস বলা বা চাইলে আরও বাড়তি কিছু যোগ করেও বলা যেতে পারে অন্য সদস্যদের কাছে।
দেশলাই টিম: স্যোশাল মিডিয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহী হয়ে উঠার ফলে বই পাঠে আগ্রহ কমে যাচ্ছে- এমন মন্তব্যে আমরা অভ্যস্থ; প্রকৃতভাবে কি তাই?
এবং স্যোশাল মিডিয়া যত যত মাধ্যমে তার বিজ্ঞাপন প্রচার করে- অপর দিকে একটি বই, বই পাঠের গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা, ভাল বইয়ের সাথে পরিচয়, বই পাঠ বিষয়ক বিভিন্ন আয়োজন ইত্যাদি বিষয়ে কতটি বিজ্ঞাপন, লেখা বা ভিডিও লক্ষ্য করেন প্রতিদিন? সুতরাং এই বিষয়টি নিজেরাই অ-সম জায়গায় রেখে সামগ্রিক বিষয়টিকে ভিন্ন দিকে পরিবর্তীত করা হচ্ছে কি? এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
পাপড়ি রহমান: সোশ্যাল মিডিয়াকে তো আমার এখন তুমুল বিনোদনের মাধ্যম মনে হয়। কত কত সব বিনোদন সামগ্রী যে ছড়ানোছিটানো থাকে তার ইয়ত্তা নেই। এখন এরকম সস্তা-বিনোদন-সম্ভার রেখে কেইবা আলো জ্বেলে বই পড়বে?
তবে বিষয়টা সর্বাংশে সত্য সেরকম কিছুও নয়। বই যারা পড়ার তারা ঠিকই পড়ছেন বা পড়বে্ন। তবে কিছুটা প্রভাব যে পড়েনি তা কিন্তু নয়। অন্যের হাড়ির খবর পেতে হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় উঁকিঝুঁকি মারলেই যথেষ্ট রসদ পাওয়া যায়। এখন এই প্রবণতা তো বাঙালীর যথেষ্ঠই আছে। বইয়ের বিজ্ঞাপন কবেই বা কে কোথায় দিয়েছে?
এখন তো আইওয়াশের-যুগ। যে যত পারছে ভেলকি দিয়ে জনগণকে ভুলিয়াভালিয়ে রাখছে।
আগেই বলেছি প্রকাশকেরা এখানে বড় একটা ভূমিকা রাখতে পারে। আর লেখক নিজেই যদি নিজের বইয়ের প্রচারক হোন, তাহলে কেমন স্বমেহন স্বমেহন মনে হয় না, বিষয়টি?
তবে এই প্যান্ডেমিক টাইমে কিন্তু প্রচুর সাহিত্য বিষয়ক লাইভ হয়েছে।
এখন বইয়ের চাইতে প্রসাধণ সামগ্রীর বিজ্ঞাপন বেশি দেখা যায়। বা শাড়ি-জামাকাপড়ের। কারণ এসবের ভোক্তা বেশি।
বই পাঠের প্রয়োজনীয়তাটুকু তো আগে জনগণকে বোঝাতে হবে।
আর অসম জায়গায় কে কাকে রাখছে? সাহিত্য নিজেই তো একটু কর্ণারেই পড়ে থাকে। আমরা যারা লিখছি, তারা গুটিকয় ছাড়া বইয়ের খোঁজ কে বা কেন রাখবেন?
মহল্লায় মহল্লায় পাঠচক্র গড়ে তুললে হয়তো কিছু সুফল আসতেও পারে। আর তরুণ শ্রেনীর কাছে নায়িকা পরিমনির ইস্যু যত এট্র্যাক্টটিভ, একটা বই কী করে ততটা এট্র্যাক্টিভ হবে?
এসবের কুফল পাওয়া যাবে আজ থেকে ১০ বা ২০ বছর বাদে। অন্ধকারে পথ খুঁজে না পেয়ে স্মরণ হবে— একটা জাতি কী করে শুধুমাত্র বিনোদন নির্ভর জাতি হয়ে উঠেছিল?
দেশলাই টিম: স্যোশাল মিডিয়া সর্বোপরি একটি সামাজিক প্লাটফর্ম; মানে একটি সমবেত হওয়ার ক্ষেত্র; এখানে যে যার বিষয়গুলো নিয়েই হাজির হচ্ছে, যেখানে বই পাঠ বা শিল্প সাহিত্য চর্চার রিসোর্স অত্যন্ত সীমিত। এই রিসোর্স (বিজ্ঞাপন, লেখা বা ভিডিও, নাটক সিনেমায় বই পাঠ বিষয়ক বিষয়বস্তু) বৃদ্ধি না করে – মানুষ বই পড়ে না; এটা কি একপ্রকার অপপ্রচার নয়? এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কি হতে পারে?
পাপড়ি রহমান: স্যোশাল মিডিয়াকে এতটা খারাপ চোখে দেখা বা দোষারোপ করাও বুঝি উচিত হচ্ছেনা। ফেসবুকযুগ আসার পর তো প্রচুর লেখক দেখতে পাচ্ছি। সেসব লেখার শিল্পমূল্য যা-ই হোক না কেন, লেখা কিন্তু হচ্ছে। আরেকটা বিষয় সম্পাদকদের মাতব্বুরি, দল কানাকানির বিষয়টা কিন্তু কমেছে। এখন আর কেউ আগের মতো করে প্রিন্টিং মিডিয়াকে পাত্তা দিচ্ছে না। লেখার জন্য অনেক মাধ্যম এখন হাতের নাগালেই। ওয়েব পোর্টালগুলির জ্বালায় তো হোমপেইজে যাওয়াই যায় না। ব্যাঙের ছাতার মতো শয়ে শয়ে ওয়েব ম্যাগাজিন। অবশ্য এরাও লিটলম্যাগের মতো দল কানাকানিতে ব্যস্ত।
বই যে এখন সত্যিই কম পড়া হচ্ছে, এটা তো সত্য। তাহলে এটাকে অপপ্রচার বলছেন কেন? আর বইয়ের ক্রেতা কত সেটা তো প্রকাশকেরাই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু তাতো তাঁরা বলবেন না। বলবেন না নিজেদের ব্যবসার স্বার্থে।
একটা ঘটনা বলি, একটা নামকরা প্রকাশনী থেকে আমার একটা গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। আমি সেলসম্যানদের কাছে খোঁজ রাখতাম কত বই বিক্রি হলো? যেদিন ১০০ বই বিক্রি হলো তারা আমায় তা জানালো। পরে বলল, আপা, ১৫০—২০০ বই যাবে এ মেলায়। আমিও তা জানি। আমার বইয়ের কিন্তু বহু পাঠক নেই। ওই ১০০—২০০ ই।
আমি জানি, আমার বই সকলে কিনবেও না। বা পড়ে তরল-আনন্দ পাবেও না। কিন্তু প্রকাশক যখন হিসাব পাঠালো— বলল ৩৮ কপি বই বিক্রি হয়েছে আমার। আমি শুনে বিমূঢ় হয়ে বসে রইলাম। এখন এই মিথ্যাচার প্রকাশকেরা করে যাতে রয়ালিটি দিতে না হয়। তাছাড়া নারী বলেও আমাকে বেশ খানিকটা কোণঠাসা করেও রাখা হয়। এই মিথ্যাচার পুরুষ লেখকদের বেলায় করলে তারা তো প্রকাশকের নাক-নাকশা ফাটিয়ে দিতো। তাদেরো হিসাবে গরমিল দেখানো হয়, তবে সেটা এতটা নয় হয়তো।
বেঙ্গল পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত আমার উপন্যাস ‘নদীধারা আবাসিক এলাকা’ একবছরে ২৫০—৩০০ কপি বিক্রি হয়েছে জানলাম। আমি জানি, এটাই আদতে প্রকৃত হিসাব।
আমার কথা হলো রয়্যালিটি না দিক, সত্যিকার হিসেবটা অন্তত লেখকদের দিক।
আমার মনে হয় এ বিষয়ে সরকারি পদক্ষেপ নেয়া উচিত। বই বিক্রির সঠিক হিসাব লেখকের জানা দরকার। আর দেখুন লেখকেরা এত অবহেলিত! অনারারিয়াম এত কম! অনেক সময় তো দেয়াই হয় না। লেখক বা বই না থাকলে একটা জাতি কতোটা অন্ধকারে পতিত হবে ভাবুন দেখি? তাহলে লেখকদের এত অসম্মান করা কেন?
বাংলা একাডেমীর পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ লাখ টাকা। এটা একটা টাকা হলো এই যুগে?
একজন লেখক বহু পরিশ্রম, বহু বেদনা, বহু অপেক্ষার পর এই পুরস্কারটি পায়। বাংলা একাডেমীর টাকা তো সরকারি টাকা। কত টাকা কত দিকে শাদা হয়, কালো হয়, অথচ একটা রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের অর্থমূল্য এত কম?
কম সে কম ৫ লাখ টাকা হওয়া উচিত এই পুরস্কারের অর্থমূল্য।
বই তো আপনি কাউকে ঘাড়ে ধরে পড়াতে পারবেন না। বই পড়ার আগ্রহ যাতে তৈরি হয় সে বন্দোবস্ত আগে করা দরকার।
ইশকুল-কলেজ লেভেল থেকেই এই পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা দরকার।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ‘বইপড়া’র কী একটা কর্মসূচি ছিল না? সেটা এখনো আছে কিনা আমি জানিনা।
দেশলাই টিম: স্যোশাল মিডিয়ার প্রভাবে মানুষ বই পড়ে না, বা সর্বোপরি মানুষ বই পড়ে না বিষয়টিই কেন প্রচারের অংশ হয়ে উঠে? মানুষ একদমই বই পড়ে না তাওতো নয়; সেক্ষেত্রে বরং বই পাঠ প্রয়োজন, মানুষ বই পড়ছে এই বিষয়গুলো কেন প্রচারের অংশ হয় না? এবং বইয়ের সাথে সম্পৃক্ত মানুষজনেই এই অ-অণুপ্রেরণামূলক প্রচার বেশি করে থাকেন কেন, অণুপ্রেরণা না দিয়ে।
পাপড়ি রহমান: এই প্রশ্নটা কিন্তু উপরের প্রশ্নের মতোই। আমি জবাবও দিয়ে দিয়েছি বোধকরি।
বই পাঠের বিষয়টি কে প্রচার করবে? আমি তো প্রায়ই দেখি কে কোন বই পড়ছে সেসব নিয়ে পোস্ট দিতে।
দেখুন বিপদ তো সবখানে। ধরুন আমি যা যা পড়ি বা পড়ছি সেসব বই নিয়ে পোস্ট দিলে আপনারাই কিন্তু বলবেন জাহিরি ফলায়, পণ্ডিতি ভাব দেখায়। এক্ষণে তাহলে উপায় কী? আর জানেনই তো আমাদের সমাজে প্রায় সকলেই’ আমি ভালো, আমার মা ভালো আর আমার মামা ভালো’— এর বাইরে তো কেউ ভালো না। কেউ ভালো লিখে না। আমিতো দেখিনাই দলবাজির বাইরে কেউ কাউকে নিউট্রাল ভিউ থেকে ভালো লেখক বলছে! কিন্তু এ কাজটি আমি করি। যে ভালো লিখছে তার নামটি বলে দেই। তার বই কিনেও অন্যদের উপহার দেই। আমার সময়ের কোনো লেখকই কোনোদিন আমার লেখাপত্র নিয়ে টুঁ শব্দও করেননি। দুই-একজন ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে।
অনুপ্রেরণা— হাসালেন সত্যি। একেকজন উপরে উঠতে চাইলে তাকে নামানোর কায়দা-কানুন সকলেই ভালো জানেন।
কত ফালতু লেখককে টেনে ওঠায় তার স্তাবকেরা।
এমনতো শুনি, দুই/এক বোতল সোমরস দিলেই পুরস্কার হাতিয়ে নেয়া যায়। আবার অনেক প্রবাসী লেখক এসে ডলার ভাঙিয়ে কিনে নিয়ে যায় পুরস্কার নামক সোনার পাথরবাটি। কেনে জনপ্রিয়তা ও মঞ্চের আসন পর্যন্ত। অথচ তাদের বই তো খুলে দেখাও যায় না, এতটাই অখাদ্য।
এই যখন প্রকৃত অবস্থা তখন অনুপ্রেরণা কে দেবে কাকে?
নিজের ঢোল বাজাতে বাজাতেই তো সকলে হয়রান, সেখানে অনুপ্রেরণা! হ্যাহ! সত্যি বড়ই আজব প্রশ্ন করলেন।
আর উচিত কথা বললেই মামুজি ব্যাজার! আমি তো যা সত্য তাই বলি। সামনে দেখুন লিটফেস্ট, বা ভালো কোনো প্রোগ্রাম হলে আমাকে বাদ দেয়া হবে। দেয়া হয়। তাতে কিইবা আসে যায় আমার? আমি কি লিখছি বা কেমন লেখক তা জানার জন্য আমার বইপত্র আছে। পাঠক সেসব পড়ে দেখুক। আপনারাও পড়ুন। না পড়লে জানবেন কী করে আমি কী লিখি বা লিখছি?
আর নার্সিসিস্টিক লেখকেরা নিজেদের চেহারা দেখেই কুল পায়না, সেখানে আমার বা আপনার কথা বলবে কী?
নারীলেখকদের অবস্থা তো আরও সঙ্গিন, হরিণীরা নিজের মাংসে নিজেই বৈরি। এরা যেন ফলন্ত বড়ই গাছ, সবাই একটা করে ঢিল ছুঁড়ে দিয়ে যায়, বলাতো যায় না, লাগলে লাগতেও পারে একটা ঢিল। এই সমাজ নারীর জ্ঞান দেখার চাইতে হাস্যলাস্য দেখতেই বেশি পছন্দ করে।
শিল্প বলেন, সাহিত্য বলেন সবই এখন কর্পোরেট দুনিয়ার পণ্য। যে কৌশলী হবে না বা বুঝবে না, তাকে অন্ধকারেই পচেগলে মরতে হবে।
সব জায়গাতে এত নোংরা রাজনীতি যে, সৎ মানুষের বেঁচে থাকাই মুশকিল।
দেশলাই টিম: বাংলাদেশের ২০ শতাংশ পরিবারও যদি প্রতিমাসে ১টি করে বই কেনে তাহলে বই বিষয়ক আমাদের সমস্ত ধারনাই উলট-পালট হয়ে যেতে পারে? এ ধরণের কর্মকাণ্ড কেন আমাদের প্রাত্যহিক হচ্ছে না? এর পেছনে অন্তরায় কি এবং কেন?
পাপড়ি রহমান: বেশির ভাগ মানুষই কিন্তু পড়াশুনা করে ভালো একটা চাকরি পাওয়ার আশায়। অর্থ উপার্জনই থাকে মূল উদ্দেশ্য। জ্ঞানার্জনের ইচ্ছা থাকে গুটিকয় লোকের। তাহলে কী করে আশা করছেন যে কেউ বই কিনবে? বই না কিনে নামিদামী ব্র্যান্ডের লিপস্টিক কিনবে, বার্গার খাবে। ক্যাফেতে বসে গুলতাপ্পি মেরে সময় পার করবে। কিংবা মোবাইলে টাকা ভরে ইন্টারনেট চালাবে। এখন তো ওয়াই-ফাই কানেকশন প্রতি ঘরে ঘরে রয়েছে। টিভি খুলে হিন্দি সিরিয়াল বা নাচগান দেখবে। এরাবিয়ান সুন্দরীদের অর্ধনগ্ন বেলিড্যান্স দেখবে। বা পর্ন। সস্তা বিনোদন নিয়ে দিনশেষে ঘুমাতে যাবে। আর পড়া তো অখন্ড মনোযোগ দাবী করে। এতসব সহজ বিষয় রেখে কেনই বা কেউ বই পড়বে?
আমার কথা যদি বলি, আমি টিভির সামনে এ জীবনে বসিই নাই। পড়ি বা না পড়ি ঐ বোকাবাক্সের সামনে বসে সময়টা অন্ধকারে নিক্ষেপ করতে চাইনাই। আমি কিছুই না করতে পারলে, চিন্তা তো করতে পারি। নিজের লেখা নিয়ে ভাবতে পারি।
তবে মাঝেসাঝে নেটফ্লিক্স কিংবা এ্যামাজন প্রাইমে সিলেকটিভ কিছু মুভি দেখি। সেসব মুভিও দেখি বুঝেশুনেবেছে।
আমার চারপাশেই তো দিনরাত টিভি খোলা রাখছে সবাই। আমি বলি— ভিডিও কালচারের দুনিয়া। [যখন সবাই ভিসিআরে ছবি দেখত, তখন থেকেই আমি এমনই বলি]। এরকম একটা সমাজে বসবাস করে কী করে আশা করেন যে বই কিনে সবাই দুনিয়া উলটে দিবে?
আমাদের ছোটকালে হপ্তায় একটা ক্লাস ছিল। যার নাম ‘লাইব্রেরী ক্লাস’। ওই ক্লাসে আমাদের বই পড়তেই হতো। এখনকার ছেলেমেয়েরা আমাদের মতো করে ওই ক্লাস করে কিনা, আমি জানিনা। কলেজের লাইব্রেরী থেকে বই তুলে বাড়ি নিয়ে গিয়ে পড়েটড়ে পরের হপ্তায় তা জমা দিতে হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য সেমিনার রুম ছিল। বিশাল লাইব্রেরী ছিল। পাবলিক লাইব্রেরী ছিল। আমার তো সাজগোজের চাইতে লাইব্রেরীতেই পড়ে থাকতে ভালো লাগত।
বইকেনাকে প্রায় লোকই তো বাহুল্য খরচ মনে করে। আগেই বলেছি পরিবারের ভূমিকা এখানে প্রধান। বারংবার আমি পরিবারের ওপরই প্রাথমিক দায়িত্বটুকু বর্তাচ্ছি। মাটিতে আমড়া গাছ বুনে আপনি যদি সে গাছ থেকে আম আশা করেন, তাহলে তা মিলবে কী করে?
দেশলাই টিম: স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়- এমন কি সমাজের নানান স্তরে, পরিবারে ও পরিচিত গন্ডিতে বই পাঠ বিষয়ক কি কি পদক্ষেপ নেয়া অত্যাবশ্যকীয়, এবং এখানে আপনার কি কি ভূমিকা রয়েছে বা থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন।
পাপড়ি রহমান: আগের বহু প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সবই হয়তো বলে দিয়েছি। বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্র তো ঢের আগে থেকেই এসব কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। তাদের আছে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরী।
পারিবারিক লাইব্রেরীও বইপাঠে উত্তম ভূমিকা রাখতে পারে। আগেই বলেছি আমি প্রতিবছর দূর দূর গ্রামের লাইব্রেরীর জন্য বই উপহার পাঠাই।
তাছাড়া আত্মীয়দের মাঝে যারা ইশকুল পড়ুয়া, তাদের বই উপহার দেই, যাতে তাদের পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে।
আমাদের কালে দেখেছি বিয়ের উপহার হিসেবে বই দেয়ার চল ছিল। আমার আব্বা-আম্মার বিয়েতে কে যেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘লালসালু’ বইটা উপহার দিয়েছিল।
আমার বিয়েতেও ‘জীবনানন্দ দাশ সমগ্র’ উপহার পেয়েছিলাম। কিন্তু এখনকার বিয়ে বাড়িতে কেউ আর রঙিন কাগজে পেঁচিয়ে উপহার হিসেবে যত্ন করে বই নিয়ে যায় না। বইয়ের বদলে মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ব্লেন্ডার, রাইসকুকার ইত্যাদি বস্তুগত জিনিসপত্র পেলেই নবদম্পতি খুশি হয়। তৈজসপত্রের ওজনে জ্ঞানভান্ডার ক্রমে শূন্য হতে চলেছে।
বিয়ে বা জন্মদিনের উপহার হিসেবে বই দেয়ার প্রথাটা ফের চালু করা যেতে পারে।
কিন্তু এতে হবে কি, যাকে বা যাদের দিবো তারা অখুশি হবেন।
আমার গ্রামের বাড়ি টাংগাইলের করটিয়ায় আব্বা/আম্মার বেশ বড়সড় একটা জায়গা খালি পড়ে রয়েছে। আমি ওখানে একটা লাইব্রেরী করতে চাই। যদি আয়ূ পাই তবেই না করব। করব বললেই তো আর হবে না, করার জন্য তো টাকাপয়সাও লাগবে। টাকাপয়সা হাতে নাই তো কী— স্বপ্ন আমার আছে ব্যাগ ভর্তি। আমি সেই লাইব্রেরীর নাম দিতে চাই ‘মায়াপারাবার’। সেই মায়ার সমুদ্রে থাকবে এন্তার বই। বড় বড় জানালা যুক্ত ঘরে ঢাউস ঢাউস বুকশেলফ ।
ঢাকার গাজীপুরে ‘লেখক পল্লী’ নামে একটা পল্লী গড়ে ওঠার কথা শুনেছিলাম। গড়ে উঠলে ভালো হতো। লেখকেরাই তো বেশি অভাব অনটনে থাকে। তাঁরা লিখবে না মা- লক্ষ্মীর ধান্ধা করবে? ওই পল্লীতে প্লট পাওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকাও জমা দিয়েছিলাম উদ্যোক্তাদের কাছে। ইচ্ছে ছিল ওই জায়গাটা পেলে ওখানে একটা মনের মতো করে লাইব্রেরী করব। কিন্তু বহুদিন হয়ে গেল সে পল্লীর কোনো আওয়াজটাওয়াজ তো শুনি না। আদতে লেখকদের নসীবই খারাপ হয়তো, সহজ পথে তাঁরা কিছুই পাননা। আমার সবচাইতে খারাপ লাগে, এত কম লেখক সম্মানী দেখে। অন্য কোনো দেশের লেখকদের এত কম সম্মানী দেয়া হয় কিনা তা আমার জানা নাই। এদিকে বাংলা একাডেমি আবার কিন্তু বেশ হ্যান্ডসাম লেখক সম্মানী দিয়ে থাকে। পত্রিকাগুলির উচিত বাংলা একাডেমিকে অনুসরণ করা।
দেশলাই টিম: উল্লেখযোগ্য অল্প কিছু বইয়ের দোকান ছাড়া সারাদেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যে সমস্ত বইয়ের দোকান রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? কেন বই বিক্রয়ের এই চ্যানেলগুলো যথাযত ভূমিকায় থাকছে না? পক্ষান্তরে আপনি কোন বই কিনতে গেল খুঁজেও পাচ্ছেন না? এ বিষয়ে আপনার অভিমত জানতে চাই।
পাপড়ি রহমান: সারা দেশে যেসব বইয়ের সাধারণ দোকান রয়েছে তাতে ইশকুল, কলেজ, ভার্সিটির পাঠ্যপুস্তকই বেশি রাখা হয় বা নোটবই বা রেফারেন্সবুক। এসবের বাইরে থাকে চটুল কিছু বই, যেমন কাশেম বিন আবুবকরের আজগুবি কিছু বই বা স্বামীস্ত্রীর মধুর মিলন জাতীয় বই। সেবা প্রকাশনীর বই। কারণ এ ধরণের বইয়ের পাঠক বেশি। এখন এসব বইবিক্রেতাকে দোষারোপ করে ফায়দা কী? যেসব বইয়ের চাহিদা বেশি সে তো সেসব বই-ই রাখবে। তাকেও পেটেভাতে চলতে হবে নাকি? উন্নত রুচির পাঠক তৈরি না হলে এই দুর্দশা লাঘব হবে না। উন্নত রুচির পাঠক মানেই তো উচ্চ মধ্যবিত্তের লোকজন। এরাও তো আজকাল বইপত্র ফেলে অন্তর্জালের দিকেই ঝুঁকে পড়ছে। বই না কিনে পিডিএফ থেকে কিংবা কিন্ডেলের ই-বুক থেকেই প্রয়োজনীয় পড়াটা সেরে নিচ্ছেন।
আর একথাটা বোধকরি ঠিক নয়, প্রয়োজনীয় বই পৌছে দেয়ার জন্য রকমারী ডট কম কিন্তু ভালো ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। আছে ‘পাঠক সমাবেশ’। ইতোমধ্যে যুক্ত হয়েছে ‘বাতিঘর’। ‘বাতিঘরের’ সার্ভিসও কিন্তু খুব ভালো। রকমারি বা বাতিঘরকে আমি অর্ডার করলেই প্রয়োজনীয় বইটা এনে দিচ্ছে।
এই প্যানডেমিক সময়ের আড়াই বছরে আমি তো অনলাইন থেকে প্রচুর বই কিনেছি। এদিকে কিছু কিছু প্রকাশকও কিন্তু অনলাইনেই বই বিক্রি করতে শুরু করেছেন। বিষয় তো এটা নয়, বিষয় হলো বই পাঠের পাঠক বাড়াতে হবে এবং বই পাঠের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।