চরিত্রলিপি কাসু সাধু পুলিশ এবং কোরাস দল
(সময়টা সকাল, বিকেল অথবা এক প্রহর রাত্রি। জায়গা হতে পারে কোন কৃষকের আওলা, বাড়ী কিংবা বৈঠকখানার সম্মুখ ভাগ। হতে পারে বাসষ্ট্যান্ড অথবা রেল ষ্টেশনের অপেক্ষমাণ মানুষের কাছাকাছি। আবার কোন নির্মাণাধীন শ্রমজীবী মানুষের কাজের মধ্যে অবসর সময়ে। মঞ্চের জন্য পেছনে সামান্য আবরণ থাকতে পারে, আবার নাও পারে।)
কোরাস : চোর-চোর-চোর, ঐ গেল চোর গেল, চোর গেল চলে। জানি না তো কার ধন নিয়ে গেল তুলে। গেল গেল চোর গেল, চোর গেল চলে। কোন দিকে কোন দিকে রে। ধর ধর ঐ গেল চোর গেল চলে।
(কোরাস গানের মধ্যে কৃষক কাসু মঞ্চে স্থির দৌড়ায়। কাসুর খালি গা লুঙ্গি কাছা আটা- মাথায় মাথাইল। ডান হাতে ধরা একটি কাঁচি, পিঠে বাম হাতে ধরা একটি চটের সাধারণ ব্যাগ। তার মধ্যে থাকবে এক পুটলি মাটি; যা বাইরে থেকে দেখা যাবে না- কি আছে ঐ পুটলিতে।)
কাসু : (কোরাস গান শেষে কাসু দাঁড়িয়ে পড়ে) এবার তাহলে কোন দিকে যাই? মানুষ দেখি উত্তরে সজাগ, দক্ষিণে সজাগ, পশ্চিম থেকেও ধাওয়া দেয়। এখন তাহলে কোন দিকে যাই? হ্যাঁ, পাইছি! মনে কয় বুঝি পূর্বতরে জনবসতি কম আছে, কেবল দেখি পূর্বতরেই শুনসান। মনে কয় বুঝি শ্মশান। হ্যাঁ, ঐ তো মানুষ পোড়া গন্ধ নাকে লাগে! কি করি, ঢুকবো নাকি! কিন্তু বুকের মধ্যি যে একটু ভয় লাগে।
কোরাস : কোন দিকে চোর গেল চোর গেল…রে? ডানে বামে সব দিকে ঘিরে ফেলরে…(২)
কাসু : মনে কয় বুঝি আর ভয় ডর না রাখি মনে, ঢুকে পরি শ্মশান ঘাটে; যা থাকে কপালে। (যেতে গেলে মুখোমুখি ঢুকবে একজন সাধু, হাত টান করে বাধা দেবে)
সাধু : অত সোজা, শ্মশান ঘাটকে ভেবো না বৎস ফাঁকা; ধর্মের মানুষ এখনো সজাগ আছে, চুরির মাল নিয়ে কিন্তু তোমার বিপদ হবেই।
কাসু : কে আপনি.. এই অসময়ে শ্মশান ঘাটে?
সাধু : চন্ডি সাধু! সাধু বাবা… এলাকার লোকে এই নামেই জানে।
কাসু : সাধু বাবা.. মনে কয় বুঝি বিপদ আমার চারিদিকে, দয়া করে একটু আশ্রয় দেন আপনার শ্মশানে।
সাধু : (হাসি) কখনো নয়…কখনো নয়, চুরির মাল তোমার কাছে…ধর্ম বলে তাকে ধরিয়ে দাও সবার আগে।
কাসু : মনে কয় বুঝি, চুরির মাল নয় গো বাবা আমার কাছে
সাধু : লোকে তবে চারিদিকে কেন ধাওয়া দিছে? কার ধন তোমার কাঁধে বল শিঘ্রী করে। এক্ষুনি বসাবো সভা লোকজন ডেকে। বলো শিঘ্রী করে..
কাসু : নিজের ধন নিজের কাঁধে চোর সেজে আছি, দুঃখের কথা কেমনে তোমায় বলবো সাধুজি!
কোরাস : দুঃখের কথা কেমনে তোমায় বলবো সাধুজি! (২)
সাধু : নিজের ধন নিয়ে তুমি চোর সেজে আছ (হাসি)। বাহ্ বাহ্! চুরির সাথে বাটপারি! মিথ্যাটাও শিখে গেছো? নিজের ধন নিয়ে তুমি চোর সেজে আছ, না?
কাসু : মনে কয় বুঝি সাধু বাবা! ওই জোতদার কালে কালে.. রাতে রাতে তিল তিল করে চৌদ্দ পুরুষের ধন আমার লিছে লুট করে। তার থেকে খানিক ধন নিয়েছি আমি তুলে। চোর যদি হই আমি জোতদার থাকিবে আগে, পিছনে থাকিবো আমি।
সাধু : ভÐ কথা ছাড়ো! জোতদ্দার হলো জমির মালিক চুরি করবে কেন? হাইলে, জালে, কামার কুমার তারা চুরি করে.. এ-কথা দুনিয়াতে সব লোকে জানে।
কোরাস : একথা দুনিয়াতে সব লোকে জানে (২)
কাসু : জানে! জানে! জানে! দুনিয়ার মানুষেরা আরো খবর জানে। ধানের ভ‚ঁই ভিটে বাড়ী কোথায় গেল চলে। জোদ্দারের এ-চুরি সব লোকে জানে, ওই যে দেখো চন্দ্র সূর্য তারা স্বাক্ষী দেবে, ওই যে দেখো গাছ বৃক্ষ.. তারাও খবর জানে। জোদ্দারের বড় গোলা ভরে কেমন করে… কৃষক কামার চোর নয় তাঁরা স্বাক্ষী দেবে…।
কোরাস : কৃষক কামার চোর নয় তাঁরা স্বাক্ষী দেবে
ধর-ধর চোর ধর কোন দিকে –রে—? (২) (পুলিশের বাঁশি)
কাসু : সাধু বাবা মনে কয় ঐ বুঝি এসে গেল ওরা, আশ্রয় না দিলে পরবো আমি ধরা। সব কথা খুলে আমি বলবো আপনার কাছে… এখন শুধু যেতে দেন শ্মশান ঘাটের দিকে।
সাধু : কখনো নয়। কখনো নয়! ধর্মের আইন কড়া, জেনে শুনে চুরির মাল নাহি যাবে ছাড়া।
কোরাস : জেনে শুনে চুরির মাল নাহি যাবে ছাড়া (পুলিশের বাঁশি) কোন দিকে কোন দিকে চোর গেল—রে— (২)
সাধু : (চিৎকার দিয়ে) এই যে—এই দিকে চোর ব্যাটা ফাঁদে পড়ে আছে—
কোরাস : কোন দিকে—কোন দিকে—কোন দিকে—রে—! (২)
কাসু : সাধু বাবা শেষ কথা শুনবো আপনার মুখে… ধরা পড়লে হাতের কাঁচি জিন্দা কিন্তু হবে। কেবল শেষ কথা শুনবো আপনার মুখে।
সাধু : ঠিক আছে এক শর্তে যেতে তুমি পার… তোমার ঐ কাঁধের ঝোলা আমার হাতে ছাড়ো।
কাসু : কাঁধে আমার চুরির মাল জানেন নিশ্চয়। সাধু হইয়া এ-আপনি কেমন কথা
কন
সাধু : ওসব কথা পরে, চুরির মাল চিরকালই সাধু জিম্মা রাখে
কোরাস : হাঁক ছাড়ো —হাঁক ছাড়ো —হাঁক ছাড়ো সবে —চোর এখন কোন দিকে কোন দিকে—রে? (২) (উভয়েই মঞ্চে দৌড়াতে থাকবে)
সাধু : জলদি করে ঠিক করো কোন দিকে যাবে, মহা বিপদ আগায় কিন্তু তোমার নিকটে। জলদি করে ঠিক করো কোন দিকে যাবে।
কাসু : অর্ধেক মাল আপনার হাতে দেব আমি তুলে, বিনিময়ে শ্মশান ঘাটে আশ্রয় দেন মোরে
সাধু : চুরির মাল ভাগ হলে ধর্ম নষ্ট হবে, এ-কথা সাধু ছাড়া বুঝে কয় জনে। শিঘ্রী করো… বিপদ কিন্তু অতি নিকটে…
(সাধু ঝোলাটা নিতে গেলে কাসু গান ধরে এবং গানটি কোরাস হবে)
কাসু : (গান) একি কথা বলো তুমি ওগো সাধু বাবা
হাজার হাজার ভক্ত জানলে মনে পাইবে ব্যথা…
ধর্ম দাতা জগৎ মাতা তুমি সাধু বাবা
চুরির মাল কেড়ে নিলে পরকাল ফাঁকা…।
(কথা) সাধু বাবা এবার বলেন আপনে কোন দিকে যাবেন? চুরির মাল নাকি পরকাল?
সাধু : জালিয়াতি করিস ব্যাটা চন্ডি সাধুর সাথে, এক্ষুণি ধরিয়ে দেব পুলিশের হাতে, পুলিশের হাতে…(পুলিশের বাঁশি) এদিকে আসেন মালিক, এদিকে আসেন…।
কাসু : চুপ করেন সাধু বাবা চুপ করেন… এই রাখেন সব মাল এই ব্যাগে আছে। এবার কিন্তু গেলাম আমি শ্মশান ঘাটের দিকে (সাধুর হাতে ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে চলে যাবে কাসু। বাঁশি দিয়ে দ্রæত ঢুকবে পুলিশ। সাধু ব্যাগটা লুকিয়ে মঞ্চের মাঝামাঝি ধ্যানস্থ হবে, পুলিশ এদিক সেদিক দেখে)
পুলিশ : কোন দিকে কোন দিকে… চোর ব্যাটা গেল কোন দিকে। আওয়াজ শুনে মনে হলো এই দিকে আছে, খালি গা কাঁচি হাতে। নাম-ধাম, সব ঠিক আছে… এইখানে থাকার কথা… ব্যাটা গেল কোন দিকে। তল্লাস-তল্লাস-তল্লাস করতে হবে। (হঠাৎ সাধুকে ধ্যানস্থ দেখে) একি? একি দেখি আমি… চোর ব্যাটা সাধু বেশে বসে আছে নাকি?
কোরাস : চোর ব্যাটা সাধু বেশে বসে আছে নাকি (২)
পুলিশ : না-না তা হয় ক্যামনে। সাধু হলো ধর্মের গুরু পাপ হবে মনে। কিন্তু মালামাল নিয়ে চোর ব্যাটা গেল কোন খানে? ঐ দিকে শ্মশান ঘাটে দেখবো নাকি ঘুরে। তার আগে সাধু বাবাক জানি জিজ্ঞেস করে। কিন্তু ধ্যান ভেঙে উনি যদি অভিশাপ করে… মাথা নাহি খেলে। দেরি করলে চুরির মাল ভাগ হয়ে যাবে। যাই করুক… মনে পাপপুণ্যির হিসাবনিকাশ পরে করা যাবে। (গলা পরিষ্কার করে জোর হাতে) সাধু বাবা দয়া করে চোখ দু’টি খুলেন (সাধু চোখ খুলে তাকাবে)। আপনার সামনে বসা দেখেন আইন গুরু আছে, মুখটা শুধু খোলেন। চাঁদের হাটের কাসু চোর কোন দিকে গেছে… জোদ্দারের ঘরের মাল তার কাঁধে আছে। বলেন একটু দয়া করে… কোন দিকে গেছে।
কোরাস : বলেন একটু দয়া করে কোন দিকে গেছে। (২)
সাধু : (চোখ বুজে) এই মাত্র খবর দিলো গায়েবি আওয়াজ- চোর এখন ধেয়ে যায় উত্তরে বাঁয়।
পুলিশ : (শ্মশানের অপরদিকে দিগনির্দেশনা করে) উত্তরে…বাঁয়?
সাধু : জলদি করে যান… আমার গুরু সাধু বলে, যদি মাল পেতে চান!
পুলিশ : মাল এখনো আছে? কোন দিকে কোন দিকে?
কোরাস : চোর এখন ধেয়ে যায় উত্তরে বাঁয়! (২)
পুলিশ : উত্তরে…বাঁয় উত্তরে বাঁয়.. (দ্রæত পুলিশ চলে যাবে উল্টো দিকে। সাধু উঠে দাঁড়াবে)
সাধু : পুলিশ তুমি চোরের রাজা, দেখ এখন কেমন ঠ্যালা! চন্ডি আমি সাধুর বাবা তুমি খাও কাঁচকলা। চোর নিয়ে খেলা করো উত্তরে দক্ষিণে, মালামাল জিম্মা এখন সাধুর হেফাজতে (হাসবে)। দেখি খুলে সোনা চাঁদি কত ভরি আছে। (পোটলার মুখ খুলবে এবং আঁতকে উঠবে) একি! মাটি হয়ে গেল ক্যামনে সোনা চাঁদি টাকা, ভাগবান কি আমাক নিয়ে করলো তামাশা? নাকি চোর ব্যাটা ধোকা দিল করলো হতাশা! মাটি হয়ে গেল ক্যামনে সোনা চাঁদি টাকা? অভিশাপ এলো নাকি আমার ইচ্ছা জেনে; না-না-না ভগবান সাধুর ইচ্ছা জানবে কেমন করে। কিন্তু মাটি হয়ে গেল ক্যামনে হিসাব নাহি মিলে। পাইছি, চোর ব্যাটা বদল করছে- সবকিছু জেনে, ধোকা দিছে মোরে।
কোরাস : চোর গেল…চোর গেল! চোর গেল রে। কাঁচি হাতে মাথাইল মুড়ে চোর গেল রে…? (২)
সাধু : চোর গেল! কৈ যাবে, শ্মশান ঘাটে আছে। সাধুর সাথে চোরের লড়াই আবার চলিবে… দেখি একবার যেয়ে। (ব্যাগটা মঞ্চে ফেলে রেখে চলে যাবে। বাঁশি বাজিয়ে আসবে পুলিশ)
পুলিশ : কই-কই সাধু বাবা চোর গেল কোনে… সন্ধান নাহি মিলে। উত্তর দক্ষিণ তো দেখি ফাঁকা পড়ে আছে, চোর গেল কোনে? সাধু বাবা সাধু বাবা ( ডাকবে) –না, সব দেখি গায়েব হলো, হদিস নাহি মেলে। দেরি হলে মালামাল হাত ছাড়া হবে, উপায় নাহি মেলে; এখন উপায় নাহি মেলে। জোদ্দারের ঘরে জানি পাকা সোনা থাকে। হায় হায় পাকা সোনা থাকে, উঁহু..পাকা..সো..না।
কোরাস : চোর গেল…চোর গেল…চোর গেল চলে। (২) (পুলিশ মঞ্চে ঘুরতে গিয়ে ব্যাগটা এক কোণায় দেখবে)
পুলিশ : (লোভাতুর ভাবে) চোর যাক চলে, ব্যাগ আছে পড়ে। পালিয়ে গেছে ব্যাটা মালামাল ফেলে। চোর যাক চলে পুলিশ নাহি যাবে। মালমাল নিয়ে এখন বাড়ী যাবো চলে (বিশেষ কায়দায় ব্যাগটা বুকের সাথে করে ধীরে ধীরে সন্তর্পণে চলে যেতে যেতে)। বেশ ভার ভার লাগে, ভেতরে সোনা বুঝি চকচক করে, হঠাৎ করে পেলাম বুঝি সাধু বাবার জোরে। চোর যাক, আমি এখন অন্য পথে বাড়ী যাই চলে।
কোরাস : আমি এখন অন্য পথে বাড়ী যাই চলে (২)
(চলে যাবে। অন্য দিকে চোরকে চুল ধরে টেনে নিয়ে আসবে সাধু)
সাধু : আয় ব্যাটা এদিকে আয় শ্মশান ঘাট ছেড়ে, চন্ডি সাধুক ধোকা দিস কোন সাহসে?
কাসু : মনে কয় ধোঁকা আমি দেইনি সাধু বাবা, কৃষকের বুকে শুধু সত্য থাকে গাঁথা।
কোরাস : কৃষকের বুকে শুধু সত্য থাকে গাঁথা (২)
কাসু : মনে কয় ধোঁকা আমি দেইনি সাধু বাবা।
সাধু : উল্টাপাল্টা বললে কিন্তু দেবো ধরিয়ে, রাস্তার মাটি কোন বেকুব চুরি করে আনে। এই কথা কেমন করে সাধু লোকে মানে। বল সত্য করে জোদ্দারের ঘরের মাল কোনখানে আছে।
কোরাস : জোদ্দারের ঘরের মাল কোন খানে আছে (২)
সাধু : বল সত্য করে
কাসু : মনে কয় এবার বুঝি কই আমার কথা… ভ‚ঁয়ের মাটি ছিল আমার ঐ ব্যাগে বাঁধা। কালে কালে জোদ্দার নিছে ফাঁকি দিয়া, সেখান থেকে কিছু মাটি নিছি কাড়িয়া। ভ‚ঁয়ের মাটি ছিল আমার ঐ ব্যাগে বাঁধা। মাটি আমার বুকের ধন সব কৃষকে জানে। সব কৃষকে জানে- ধানের জমি পাটের জমি গেল
কোনখানে? আরো কথা জানে- বাপ দাদার ভিটে মাটি জোদ্দারের ঘরে, কৃষকের সব মাটি নিছে চুরি করে।
কোরাস : কৃষকের সব মাটি নিছে চুরি করে। (২)
সাধু : জোদ্দারের নামে তুমি ভÐ কথা কও, চোর তুমি নওকো ব্যাটা… এবার বল তোমার আসল পরিচয়। এই মাটি নিয়ে বলো তুমি কোনখানে যাবে, কোন পার্টির সাথে তোমার লেনদেন আছে। কৃষক সেজে মাটি নিয়ে কার কাছে যাবে… বলো সত্য করে
কাসু : মনে কয় মাটি নিয়ে যাবো উত্তর দেশে, সেইখানে আমার ভাই কৃষক বসে আছে। মাটি লাঙ্গল জমির ধান জোদ্দারে নিছে। পাঁচ বিবি রহমপুর আমার ভাই আছে, চিলমারী বুড়িমারী তাদের ডাকা হবে… কেমন করে মাটি লাঙ্গল জোদ্দারে নিছে।
কোরাস : কেমন করে মাটি লাঙ্গল জোদ্দারে নিছে। (২)
সাধু : তারপর উদ্দেশ্য… তারপর বল: রাতের আঁধারে তুমি চোরের মতো চল। বুড়িমারী, চিলমারী আছে বিদ্রোহী, আরো কোন গোপন খবর নিছো তুমি তুলি। মাটি নিয়ে কোন কাজ বল এখন শুনি।
কাসু : কি শুনিবে কি বুঝিবে কৃষকের ব্যথা, তুমি হইলা সাধু বাবা বড় লোকের পোষা। কি বুঝিবে সাধু তুমি মাটির মর্মকথা; ঐ মাটি নিয়ে যাবো আমি চিলমারীর মাঠে… দেখি তাদের সেই কথা পড়ে কিনা মনে। সব ঘরে ডাক দিয়ে বলে যাবো শেষে, কৃষকের মাটি এখন জোদ্দারে নিছে।
কোরাস : কৃষকের মাটি এখন জোদ্দারে নিছে (২)
কাসু : দেখি তাদের সেই কথা পড়ে কিনা মনে… মাঠের ধান, কাঁচি মাথাইল কোনে গেল চলে। কামলা হয়ে ঘুরি আমরা হাল নাঙ্গল ছেড়ে, এইভাবে কত দিন কৃষক বাঁচিবে। পরে কিনা মনে তাদের সেই কথা…সোনার ধান, চাঁদির উঠান, দামড়া বলদ…কাঁসার বাসুন সব; সব নিছে কেড়ে। দেখি মনের মধ্যে সেই আগুন উঠে কিনা জ্বলে…।
কোরাস : মনের মধ্যে সেই আগুন উঠে কিনা জ্বলে… সাবধান, সাবধান সাবধান হবে।
বিদ্রোহী যায় চলে যায় চলে…রে (২)? (পুলিশ বাঁশি দিয়ে ঢুকবে হাতে সেই মাটির ব্যাগ। কাসু আগে দৌড়াবে পেছনে পুলিশ এবং সাধু, সবাই স্থির দৌড়াবে)
পুলিশ : সাবধান! সাবধান! সাবধান হবে
সাধু : চোর কিন্তু নয় সে বিদ্রোহী বটে।
পুলিশ : সে কথা প্রশাসন পরে জেনেছে, নামধাম বেশভ‚ষা সব ঠিক আছে। তিন বছর আগে থেকে ঘুম কেড়েছে।
কোরাস : তিন বছর আগে থেকে ঘুম কেড়েছে। (২)
সাধু : ঘুম কেড়েছে? তিন বছর আগে সে কোনখানে ছিল, কি নাম কি ধাম তাকি জানা গেল।
পুলিশ : সব জানা গেছে। তিন বছর আগে চাঁদের হাটে- একরাতে সব বাড়ী ঘোরে। সব কৃষক এক করে আগুন জ্বেলে দিছে।
কোরাস : সব কৃষক এক করে আগুন জ্বেলে দিছে। (২) (কাসু, পুলিশ এবং সাধু থমকে দাঁড়িয়ে পড়বে)
সাধু : আগুন জ্বেলে দিছে! কৃষক চামাড় এতো শক্তি পেল কেমন করে?
কাসু : কেমন করে মেলে? চারিদিকে চেয়ে দেখ কৃষক ঘরে ঘরে। সব কৃষক এক হলে এমন শক্তি মেলে। চাঁদের হাটের পাটের আগুন আবার জ্বলিবে, ঐ চেয়ে দেখ দূরে…ভাল করে দেখ। ঘন হয়ে আসছে কৃষক তোমাদের দিকে, চেয়ে দেখ দূরে ঐ দূরে …গাঁয়ে গাঁয়ে আসছে কৃষক ফালা বর্শা নিয়ে।
কোরাস : গাঁয়ে গাঁয়ে আসছে কৃষক ফালা বর্শা নিয়ে। (২)
পুলিশ : ও আশা ছাড়ো, সব পথ তোমার এবার বন্ধ করে দেব- ও আশা ছাড়ো। (আবার সবাই স্থির দৌড়াবে)
সাধু+পুলিশ : ধর-ধর-ধর সবাই মিলে ধর, চারিদিকে পীর সাধু জোদ্দার যত আছে সবাই মিলে ধর। (পুলিশ ও সাধু কাসুকে ধরতে গেলে কাসু কাঁচি তুলে দাঁড়াবে)
সাধু : খবরদার আগাইও না কাছে, এই কাঁচির ধারে কাসু কিন্তু ফানা করে দেবে। খবরদার আগাইও না কাছে। আমি যাবো চলে, এবার যাবে জেনে। বুড়িমারী, চিলমারী কেমন জ্বলে উঠে, এবার যাবে জেনে। খবরদার, আগাইও না কাছে…। (কাসু কাচি ধরে ব্যাগটা ছিনিয়ে নিয়ে দর্শকের মধ্যে মিশে যাবে। পুলিশ ও সাধু স্তব্ধ ভীতু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে)
সাধু : আবার গেল চলে, পুলিশ সাহেব হাতছাড়া হয়ে কাসু আবার গেল চলে।
কোরাস : হাতছাড়া হয়ে কাসু আবার গেল চলে। (২)
কাসু : (দর্শকের মধ্য থেকে) কাসু যাবে চলে, আবার দেখা হবে। ঘন হয়ে আসবে কৃষক সেই দিনের তরে, আবার দেখা হবে। কাঁচি মাথাইল বর্শা হাতে চিলমারীর মাঠে আবার দেখা হবে।
সাধু : (পুলিশকে) কি উপায় হবে, হাতের মধ্যে থেকে কাসু আবার গেল চলে। কি উপায় হবে?
পুলিশ : থানায় যেতে হবে, টেলিফোনে সব জায়গা ঘেরাও করতে হবে। থানায় যেতে হবে। (পুলিশ চলে যায়)
সাধু : এখন আমার কি হবে! কাসু যদি মানুষ নিয়ে আবার আসে ফিরে, তবে আমার কি হবে? পুলিশ শালা জান নিয়ে থানায় গেল চলে, আমার কি হবে; আমার কি হবে। এই চন্ডি সাধুর জীবন যদি নেই কাড়িয়ে, তাহলে উপায় কি হবে। (হঠাৎ সামনে এগিয়ে গিয়ে সাধু চিৎকার দিয়ে) কাসু তুমি এগিয়ে যাও আমিও আছি তোমার সাথে। চিলমারীর মাঠে মোদের আবার দেখা হবে। সেই দিনে তরে এই কথা হবে কৃষক-কামার আসল সাধু, আমরা চোর বটে।
কোরাস : কৃষক-কামার আসল সাধু আমরা চোর বটে। (২)