জলিল ভাইয়ের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র—মুন্নি নার্সারির সামনে দিয়ে মিছিলটা যাচ্ছিলো। কথাটা একটা গাঁদা ফুলের কানে আসতেই ওর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়!
আরে বাবা, ফুলের চরিত্র হইলো ফলের পূর্বাভাস! এর সাথে আবার মাইনসের তুলনা হয় কেমনে! বিরক্তস্বরে গাঁদা ফুলটি বিড়বিড় করে। পাশেই টবের উপর বসে থাকা কসমস ফুলটা সস্নেহে হেসে বলে—এই তুই সব কথা এতো ধরিস কেনো রে! তাই বলে অইরকম শয়তান টাইপ লোকের সাথে তুলোনা দিবে?—গাঁদা ফুলটি এইবার ক্ষেপে ওঠে!
বয়স কম তো, বাচ্চা চারা!—নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করতে থাকে নার্সারির ফুলেরা। একটা পিটুনিয়া ফুল, ওর ঘন্টার মতো কান্ডটা একটু নাড়িয়ে কৌতুক করে—ওরে গেঁদা, ফুল কি তুমি একলা নাকি? আমরার কি আত্মসম্মান নাই!!— বলেই আবার পাতা কাঁপিয়ে হাসতে থাকে?
নার্সারির কোনায় থাকা, সালভিয়া ফুলটা তখন টুকটাক মেকাপ শেষে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলো। গতোকাল একটা কালো ভ্রমর এইদিক দিয়ে যাওয়ার সময় শিস দিয়ে গেছে। গাঁদার এই বিক্ষোভ শুনে বলে ওঠে—সব ফুলের চরিত্র খালি ফল ধরানোর জন্য আটকে থাকে নারে গেঁদি, কিছু ফুল থাকে শুধু আনন্দের জন্য। বলেই চোখ টিপ মারে। খিল খিল করে হাসে? হাসতে হাসতে ঢলে পড়ে।
হ, হ, সে তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি—ঠেস দিয়ে কথাটা বলে ক্যালেন্ডুলা। ফুল মানেই স্নিগ্ধ, ফুল মানেই কোমল, একটা শান্তি শান্তি ভাব—এই সব কথা বলতে বলতে বারবার সে ডালিয়া ফুলের পাপড়ির দিকে তাকায়। ডালিয়া মুখ ঝেমটা দিয়ে বলে—বুঝি বুঝি, সবই রাজনীতি।
বেশ রাত। শীতের পরপরই বসন্তের একটা মন কেমন করা বাতাস আসে। তার জন্যই আনমনে অপেক্ষা করছিলো চন্দ্র, চন্দ্রমল্লিকা। দশবাইচন্ডী ফুল অকে সান্ত্বনা দেয়। এতো ভেবে কী লাভ! পাহাড় দেশের ফুল স্বর্পগন্ধ্যা, হয়ত তোকে ভুলেই গেছে! অচেনা একটা ফুলের গন্ধে চারিদিকটা ভরে ওঠে?
পরদিন, সকালে মুন্নি নার্সারিতে হৈচৈ পড়ে যায়। নার্সারিতেও নাকি নির্বাচন হবে। কে কোন পদ নেবে, কার সাথে যাবে, এই নিয়ে শুরু হলো গোলোযোগ। দেখতে বদখত একটা কলাগাছ নিজেকে এর ভেতরেই স্বতন্ত্র প্রার্থী বলে ঘোষণা করেছে?
এরমাঝেই, চারাসহ গাঁদা ফুলটিকে কিনে নিয়ে গেলো একজন ক্রেতা? সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য হাইকোর্ট চত্বরে লাগানো হবে? ভ্যান গাড়ি একটু ঝাঁকি দিয়ে দিয়ে চলতে থাকে। গাঁদা ফুলটি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়, হাইকোর্টে একটা রিট করবে। অমুক ভাইয়ের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র— কথাটা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না—এই বিষয়ক একটা নির্দেশনা তার লাগবেই লাগবে।