মে, ১৯, ২০২৫
দেশলাই
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্পসরগম
    • উপন্যাস
    • অণুগল্প ও অণুগল্প বিষয়ক
  • গদ্যধারা
  • উড়ন্তডুবুরী
    • সাক্ষাৎকার
    • রিভিউ
  • এক্সিবিশন
  • শিল্প
    • নাটক
    • চলচ্চিত্র
  • ধারাবাহিক
  • বিশেষ সংখ্যা
  • ডিরেক্টরি
    • মেলা
    • নাটক দল
    • বাউল দল
    • সাংস্কৃতিক সংগঠন
    • পাঠাগার
    • থিয়েটার
    • স্মরণ
    • প্রত্নতত্ত্ব
    • সাহিত্য পুরস্কার
    • প্রকাশনা সংস্থা
  • কেনাকাটা
    • বই : গদ্য
    • বই : গল্প
    • বই : কবিতা
    • বই : উপন্যাস
    • বই : দেড়ফর্মা
    • বই : নাটক ও চলচ্চিত্র
    • বই : ছড়া
    • লিটলম্যাগ
দেশলাই
দেশলাই
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্পসরগম
    • উপন্যাস
    • অণুগল্প ও অণুগল্প বিষয়ক
  • গদ্যধারা
  • উড়ন্তডুবুরী
    • সাক্ষাৎকার
    • রিভিউ
  • এক্সিবিশন
  • শিল্প
    • নাটক
    • চলচ্চিত্র
  • ধারাবাহিক
  • বিশেষ সংখ্যা
  • ডিরেক্টরি
    • মেলা
    • নাটক দল
    • বাউল দল
    • সাংস্কৃতিক সংগঠন
    • পাঠাগার
    • থিয়েটার
    • স্মরণ
    • প্রত্নতত্ত্ব
    • সাহিত্য পুরস্কার
    • প্রকাশনা সংস্থা
  • কেনাকাটা
    • বই : গদ্য
    • বই : গল্প
    • বই : কবিতা
    • বই : উপন্যাস
    • বই : দেড়ফর্মা
    • বই : নাটক ও চলচ্চিত্র
    • বই : ছড়া
    • লিটলম্যাগ
টাইপ করা শুরু করুন এবং বন্ধ করতে "এন্টার" বা "ESC" টিপুন
  1. আপনি দেখছেন: হোম >> গল্প : রাজনীতি ...

গল্প : রাজনীতি

সিদ্দিক বকর

জানুয়ারী, ১১, ২০২৩
অলংকরন: রাফি আহমেদ চঞ্চল

লম্বা ও ফাঁকা একটি চত্বর। মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। একপাশে চত্বরের লম্বা অংশে অনেকগুলো গাছ সারিবাঁধা, আরেক পাশে একটু ঝোপ মতোন, মাঝে মাঝে যা কিনা পুরো এলাকাটিকে আড়াল করে।

প্রস্থের একপাশে লম্বা মতোন ছোটখাটো দুটো সোফা পাশাপাশি বসানো। সোফার কোনো আসনই খালি নেই। কেউ হেলান দিয়ে মাথায় দু’হাত বন্ধনী করে রাখা, কেউ মাথা কাত করা, কেউ সামনের দিকে ঝোঁকা, কেউ গাছের দিকে তাকানো, কারো মাথা সোফায় ফেলানো— যা দেখে মনে হবে সবাই ভেতরে ভেতরে গলাকাটা তড়পানো ষাঁড়, চোখেমুখে অন্ধকারে তাকানোর দৃষ্টি।

পুরো চত্বর জুড়ে অনেকগুলো জটলা। সবগুলো জটলাই আলাদা আলাদা। একটা থেকে অন্যটার আকৃতিও ভিন্ন। কখনো মনে হতে পারে এক একটা দ্বীপ দেশ— এমনও মনে হতে পারে, সারা আকাশ জুড়ে খণ্ড খণ্ড কালো মেঘ জমেছে। ঐ মেঘের চক্করে বজ্রনাদ আছে, কোনোটায় হয়তো জঠোরাগ্নি, হয়তো কোনোটা আবার শোকাগ্নিতে জ্বলছে, কোনোটা হয়তো প্রচণ্ড ক্রোধযুক্ত। এমনও হতে পারে— ভুল পথে হাঁটতে হাঁটতে খাপের ভিতর তলোয়ারের বহুদিন আর খোঁজই করা হয়নি, ধার-বার তার ঔজ্জ্বল্য হারায়।

এর মাঝে কেউ একজন কিছু বলছে, অন্যরা সবাই শুনছে। জটলা অনেকগুলো হলেও সব মিলে মনে হয় এক। সবাই হাঁটু ভাঁজ করে উবু হয়ে বসা যেন একেকটা থুথুর দলা। হামিং বার্ডের আয়তনে যার যার ভিতর সকলে ম্রিয়মাণ। যা দূর থেকে দেখলে অজানা পোকার জটলা বলে ভুল করতে পারে যে কেউ। সবারই মাথা নূব্জ, ঝুলে আছে ঝুল বারান্দা ঠোঁট, প্রায় শ’তিনেক ছেলেতো হবেই। উগোল মাছের চোখ সবার, শূন্য দৃষ্টি প্রায় সবার মাটির দিকে, বাঁকা মেরুদণ্ড, কেউ ডান হাত দিয়ে নূব্জ অবস্থায় কপালের ডান পাশের বিক্ষিপ্ত চুল টানছে, কেউ চাপা-না-পড়া নিকটতম ঘাসের কণ্ঠ বরাবর ছিঁড়ে চিবুচ্ছে, কেউ জামার কোণা ধরে মোচরাচ্ছে, কেউ তর্জনী দিয়ে মাটি খুঁড়ছে। সজাগ প্রজাপতি দৃষ্টি সবার উড়ে উড়ে বসছে এঁর উপর ওঁর উপর।

এর মাঝে দু’একজন জটলার একেবারে প্রস্থের আরেক পাশে বসে মাঝে মাঝেই যারা কথা বলে উঠছে—একমাত্র তাদের চোখমুখই অকস্মাৎ, অতর্কিতে চকমক করে একটু পরিমাণে বিজলি দিয়ে ওঠে, তুমুল মুষলধারায় বৃষ্টি হয়ে যাওয়ার পর গুমোট অন্ধকার দিনের আকাশের চতুর্দিকে একের-পর-এক পালা করে বিদ্যুৎ চমকায় যেভাবে।

পুরো চিত্রটা গুয়ের্নিকা চিত্রের মতো দমমারা স্তব্ধ হয়ে থাকা দৃষ্টির সামনে। সবার ভিতরে সারা পৃথিবীর তুমুলতা ও বিশালতা নিয়েও এই মুহূর্তে সবাই নীরব। সবার মাঝেই যেন কোনো ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ের শূন্যতা আছে, তীব্রতা আছে, ক্ষোভ আছে, তারপরও সবাই নীরব, নিস্তব্ধ, নূব্জ। ব্যবহার হওয়ার পূর্বে নুয়ে-নূব্জে থাকা কোনো এক চিলেকোঠায় অপেক্ষমাণ বসে থাকা বোমার মতো। প্রত্যেকটা বোমাই তরতাজা তরুণ। দেখলে বোঝা যায়, যে কোনো মুহূর্তে এঁরা হাঙ্গর মূর্তি ধারণ করতে পারে। এর মাঝে যে দু’একজন কথা বলছিল ঠিক তাঁর পাশ থেকে একজন টগবগে তরুণ বোমা ওঠে চলে আসে গদগদ করতে করতে অন্য পাশে, এসে বসে। উঠে আসার মাঝে লক্ষ করা যায় তাঁর একটি হাত কনুই থেকে কব্জার দিকে খাটো এবং চিকন। অন্যপাশ থেকে আরেকজন। এঁদের ভাবলক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে এঁরা ওদের মতের সাথে একমত হতে পারছেনা।

এমতাবস্থায় যে দু’একজন কথা বলছিল— তাঁদের একজন উঠে দাঁড়ায়। তাঁর চোয়াল শক্ত, চোখ যেন একেকটা পোড়া কড়াইয়ের রূপ, লোহাভারী দৃষ্টি, হাতের থাবা একেকটা গোপাটের পেট সদৃশ প্রশস্ত, নাক যেন তাঁর তাক করা কাটা রাইফেলের নল। একটুখানি পাঞ্জাবীর সাথে টুটাফাটা জিন্সের প্যান্ট। দাঁড়িয়ে, একটু থেমে—ক্ষুরধার দৃষ্টি দিয়ে সবাইকে বিক্ষত করে—দৃঢ় পায়ে একেবারে চলে আসে অন্য পাশের সোফার সামনে। তাঁর নাম হাকিম।

হাকিম এসে দাঁড়ায় সোফার সামনে, সেই ছেলেটার সামনে—যে ছেলেটা মাথায় দুই হাত বন্ধনী করে বসেছিল।

সবাই চুপচাপ।

একটু হয়তো সমূহ বিপদ-সংকেত বুঝে কানকো মাছের চঞ্চল দৃষ্টি ঘোরাঘুরি করে। হাকিম যার সামনে এসে দাঁড়ায়— সে হলো শামীম। শামীমও ওঠে দাঁড়ায় তখন। মাথার উপর থেকে দুই হাতের বন্ধনী এখন খুলে পড়ে তার। দুই হাত এখন ঝুলে থাকে— যেন কাঁঠাল গাছের ডালে খাশির কাটা দুই রান। দেখে বুঝা যায়— কী যেন সে বলে চলে চাপা ক্ষোভে, শোনে— হাকিম তার ক্ষোভে জ্বলন্ত সিগারেট পায়ের তলায় পিষ্ট করে।

হাকিম হলো হাল আমলের আনোয়ার কঙ্গো। ঠাণ্ডা মাথার দুর্ধর্ষ খুনি।

মাথা ঈষৎ নিচু করে শোনে—হাকিম কোনো কথা বলার চেষ্টা করেনা। শুধু চোখ দুটো তার পোলোর মতো ঝাঁপ মারে সন্তরণশীল চাপা ক্ষোভগুলির ওপর।

এমন একটি পরিস্থিতিতে সোফার ডান পাশের ছেলেটি, মানে, খায়রুল সোহান— উঠে দাঁড়ায়। দাঁড়িয়ে কিছু কথা বলার চেষ্টা করে, হয়তো পরিস্থিতিকে একটু সমঝোতার মাঝামাঝি নিয়ে আসার নিমিত্তে।

কিন্তু হাকিম এতে খুব সন্তুষ্ট না হয়ে খায়রুল সোহানকে বিদ্রুপের ভঙ্গিতে দু’হাত তাঁর কাঁধে, মাথায়, বুকে, মুখে, ঊর্ধ্বাংশের সারা শরীরে খামখেয়ালীরূপে চলাচল করে—বাবাখোর নেশাগ্রস্থের উত্তেজনায়।

শামীম ফের নিরুপায়— সোফায় এলিয়ে বসে পড়ে কাছিম হয়ে, গলা-মাথা ভিতরে ঢুকিয়ে। দৃষ্টি তার কোনদিকেই নয়। চোখ খোলা, আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ধ্যানমগ্ন ডিশ।

হাকিম খায়রুল সোহানের শরীরটা বা’হাতে বুকে চেপে জড়িয়ে ডান হাত পকেটে ঢুকিয়ে অস্ত্রটি হাতে নেয়। একটু সামনের দিকে ঝুঁকে এলিয়ে বসে পড়া শামীমের বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ধরে খেলার ছলে, খামখেয়ালিপনায়। অস্ত্রটি একটুক্ষণ ধরে রাখে বুকে, এদিক ওদিক তাকায়, খেলাচ্ছল করেই খুব স্বাভাবিক আচরণের ভিতর দিয়ে অস্ত্রটি চালনা করে দেয়।

শামীম নামের ছেলেটি ঈষৎ নড়ে চুপ হয়ে যায়।

পার্থক্য শুধু এতটুকুই— আগে মাথাটা ছিল ঘাড়ের উপর খাড়া, মেরুদণ্ডটি সোজা। এখন মেরুদণ্ডটি ভেতরের দিকে বাঁকা হয়ে—মাথাটা ঘাড় থেকে ডান দিকে কাত হয়ে পড়ে।
এ পর্যন্ত অস্ত্রটি বুকে ধরে রেখে আবার তুলে নিয়ে আসে। খায়রুল সোহানের দেহটা হাকিমের বাঁ হাতের দখল থেকে মুক্ত করে দিয়ে হাতের অস্ত্রটি পকেটে ঢুকিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়, যেন কিছুই ঘটেনি।

ঘটে শুধু— ছেলেটির শরীর থেকে তাঁর সমস্ত রক্ত প্রবল রোষে গলগল করে বেরিয়ে পেট বেয়ে দুই উরুর ফাঁক দিয়ে পড়ে সোফায়— সোফা থেকে লাফিয়ে পড়ে মাটিতে। মাটিতে পড়তেই- ছোপমারা সাপ যেন দৌঁড়তে থাকে অস্থির হয়ে।

সবাই আরো চুপ হয়, সোফায় সার ধরে বসা ছেলেগুলিও চুপ। কোন কিছুর আওয়াজে যেন সবার আত্মা ভেতর থেকে বেরিয়ে— একসাথে উড়ে গিয়ে উপরে স্থির হয়ে থাকে। শরীরগুলো পড়ে থাকে যার যার জায়গায়। ঠিক আগের মতো আর একটি আওয়াজের অপেক্ষায়।

মন্তব্য, এখানে...

সিদ্দিক বকর

জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়। প্রকাশিত বই: জীবন্মুক্ত বাতিঘর, (গল্পগ্রন্থ, প্রকাশক- বেহুলা বাংলা, ফেব্রুয়ারি ২০১৭), করাতকাটা ঘুম (গল্পগ্রন্থ, প্রকাশক- ঘোড়াউত্রা প্রকাশন, ফেব্রুয়ারি ২০২২)

আরোও লেখা পড়ুন


গল্প : রাজনীতি

সিদ্দিক বকর
জানুয়ারী, ১১, ২০২৩

অলংকরন: রাফি আহমেদ চঞ্চল

লম্বা ও ফাঁকা একটি চত্বর। মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। একপাশে চত্বরের লম্বা অংশে অনেকগুলো গাছ সারিবাঁধা, আরেক পাশে একটু ঝোপ মতোন, মাঝে মাঝে যা কিনা পুরো এলাকাটিকে আড়াল করে।

প্রস্থের একপাশে লম্বা মতোন ছোটখাটো দুটো সোফা পাশাপাশি বসানো। সোফার কোনো আসনই খালি নেই। কেউ হেলান দিয়ে মাথায় দু’হাত বন্ধনী করে রাখা, কেউ মাথা কাত করা, কেউ সামনের দিকে ঝোঁকা, কেউ গাছের দিকে তাকানো, কারো মাথা সোফায় ফেলানো— যা দেখে মনে হবে সবাই ভেতরে ভেতরে গলাকাটা তড়পানো ষাঁড়, চোখেমুখে অন্ধকারে তাকানোর দৃষ্টি।

পুরো চত্বর জুড়ে অনেকগুলো জটলা। সবগুলো জটলাই আলাদা আলাদা। একটা থেকে অন্যটার আকৃতিও ভিন্ন। কখনো মনে হতে পারে এক একটা দ্বীপ দেশ— এমনও মনে হতে পারে, সারা আকাশ জুড়ে খণ্ড খণ্ড কালো মেঘ জমেছে। ঐ মেঘের চক্করে বজ্রনাদ আছে, কোনোটায় হয়তো জঠোরাগ্নি, হয়তো কোনোটা আবার শোকাগ্নিতে জ্বলছে, কোনোটা হয়তো প্রচণ্ড ক্রোধযুক্ত। এমনও হতে পারে— ভুল পথে হাঁটতে হাঁটতে খাপের ভিতর তলোয়ারের বহুদিন আর খোঁজই করা হয়নি, ধার-বার তার ঔজ্জ্বল্য হারায়।

এর মাঝে কেউ একজন কিছু বলছে, অন্যরা সবাই শুনছে। জটলা অনেকগুলো হলেও সব মিলে মনে হয় এক। সবাই হাঁটু ভাঁজ করে উবু হয়ে বসা যেন একেকটা থুথুর দলা। হামিং বার্ডের আয়তনে যার যার ভিতর সকলে ম্রিয়মাণ। যা দূর থেকে দেখলে অজানা পোকার জটলা বলে ভুল করতে পারে যে কেউ। সবারই মাথা নূব্জ, ঝুলে আছে ঝুল বারান্দা ঠোঁট, প্রায় শ’তিনেক ছেলেতো হবেই। উগোল মাছের চোখ সবার, শূন্য দৃষ্টি প্রায় সবার মাটির দিকে, বাঁকা মেরুদণ্ড, কেউ ডান হাত দিয়ে নূব্জ অবস্থায় কপালের ডান পাশের বিক্ষিপ্ত চুল টানছে, কেউ চাপা-না-পড়া নিকটতম ঘাসের কণ্ঠ বরাবর ছিঁড়ে চিবুচ্ছে, কেউ জামার কোণা ধরে মোচরাচ্ছে, কেউ তর্জনী দিয়ে মাটি খুঁড়ছে। সজাগ প্রজাপতি দৃষ্টি সবার উড়ে উড়ে বসছে এঁর উপর ওঁর উপর।

এর মাঝে দু’একজন জটলার একেবারে প্রস্থের আরেক পাশে বসে মাঝে মাঝেই যারা কথা বলে উঠছে—একমাত্র তাদের চোখমুখই অকস্মাৎ, অতর্কিতে চকমক করে একটু পরিমাণে বিজলি দিয়ে ওঠে, তুমুল মুষলধারায় বৃষ্টি হয়ে যাওয়ার পর গুমোট অন্ধকার দিনের আকাশের চতুর্দিকে একের-পর-এক পালা করে বিদ্যুৎ চমকায় যেভাবে।

পুরো চিত্রটা গুয়ের্নিকা চিত্রের মতো দমমারা স্তব্ধ হয়ে থাকা দৃষ্টির সামনে। সবার ভিতরে সারা পৃথিবীর তুমুলতা ও বিশালতা নিয়েও এই মুহূর্তে সবাই নীরব। সবার মাঝেই যেন কোনো ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ের শূন্যতা আছে, তীব্রতা আছে, ক্ষোভ আছে, তারপরও সবাই নীরব, নিস্তব্ধ, নূব্জ। ব্যবহার হওয়ার পূর্বে নুয়ে-নূব্জে থাকা কোনো এক চিলেকোঠায় অপেক্ষমাণ বসে থাকা বোমার মতো। প্রত্যেকটা বোমাই তরতাজা তরুণ। দেখলে বোঝা যায়, যে কোনো মুহূর্তে এঁরা হাঙ্গর মূর্তি ধারণ করতে পারে। এর মাঝে যে দু’একজন কথা বলছিল ঠিক তাঁর পাশ থেকে একজন টগবগে তরুণ বোমা ওঠে চলে আসে গদগদ করতে করতে অন্য পাশে, এসে বসে। উঠে আসার মাঝে লক্ষ করা যায় তাঁর একটি হাত কনুই থেকে কব্জার দিকে খাটো এবং চিকন। অন্যপাশ থেকে আরেকজন। এঁদের ভাবলক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে এঁরা ওদের মতের সাথে একমত হতে পারছেনা।

এমতাবস্থায় যে দু’একজন কথা বলছিল— তাঁদের একজন উঠে দাঁড়ায়। তাঁর চোয়াল শক্ত, চোখ যেন একেকটা পোড়া কড়াইয়ের রূপ, লোহাভারী দৃষ্টি, হাতের থাবা একেকটা গোপাটের পেট সদৃশ প্রশস্ত, নাক যেন তাঁর তাক করা কাটা রাইফেলের নল। একটুখানি পাঞ্জাবীর সাথে টুটাফাটা জিন্সের প্যান্ট। দাঁড়িয়ে, একটু থেমে—ক্ষুরধার দৃষ্টি দিয়ে সবাইকে বিক্ষত করে—দৃঢ় পায়ে একেবারে চলে আসে অন্য পাশের সোফার সামনে। তাঁর নাম হাকিম।

হাকিম এসে দাঁড়ায় সোফার সামনে, সেই ছেলেটার সামনে—যে ছেলেটা মাথায় দুই হাত বন্ধনী করে বসেছিল।

সবাই চুপচাপ।

একটু হয়তো সমূহ বিপদ-সংকেত বুঝে কানকো মাছের চঞ্চল দৃষ্টি ঘোরাঘুরি করে। হাকিম যার সামনে এসে দাঁড়ায়— সে হলো শামীম। শামীমও ওঠে দাঁড়ায় তখন। মাথার উপর থেকে দুই হাতের বন্ধনী এখন খুলে পড়ে তার। দুই হাত এখন ঝুলে থাকে— যেন কাঁঠাল গাছের ডালে খাশির কাটা দুই রান। দেখে বুঝা যায়— কী যেন সে বলে চলে চাপা ক্ষোভে, শোনে— হাকিম তার ক্ষোভে জ্বলন্ত সিগারেট পায়ের তলায় পিষ্ট করে।

হাকিম হলো হাল আমলের আনোয়ার কঙ্গো। ঠাণ্ডা মাথার দুর্ধর্ষ খুনি।

মাথা ঈষৎ নিচু করে শোনে—হাকিম কোনো কথা বলার চেষ্টা করেনা। শুধু চোখ দুটো তার পোলোর মতো ঝাঁপ মারে সন্তরণশীল চাপা ক্ষোভগুলির ওপর।

এমন একটি পরিস্থিতিতে সোফার ডান পাশের ছেলেটি, মানে, খায়রুল সোহান— উঠে দাঁড়ায়। দাঁড়িয়ে কিছু কথা বলার চেষ্টা করে, হয়তো পরিস্থিতিকে একটু সমঝোতার মাঝামাঝি নিয়ে আসার নিমিত্তে।

কিন্তু হাকিম এতে খুব সন্তুষ্ট না হয়ে খায়রুল সোহানকে বিদ্রুপের ভঙ্গিতে দু’হাত তাঁর কাঁধে, মাথায়, বুকে, মুখে, ঊর্ধ্বাংশের সারা শরীরে খামখেয়ালীরূপে চলাচল করে—বাবাখোর নেশাগ্রস্থের উত্তেজনায়।

শামীম ফের নিরুপায়— সোফায় এলিয়ে বসে পড়ে কাছিম হয়ে, গলা-মাথা ভিতরে ঢুকিয়ে। দৃষ্টি তার কোনদিকেই নয়। চোখ খোলা, আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ধ্যানমগ্ন ডিশ।

হাকিম খায়রুল সোহানের শরীরটা বা’হাতে বুকে চেপে জড়িয়ে ডান হাত পকেটে ঢুকিয়ে অস্ত্রটি হাতে নেয়। একটু সামনের দিকে ঝুঁকে এলিয়ে বসে পড়া শামীমের বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ধরে খেলার ছলে, খামখেয়ালিপনায়। অস্ত্রটি একটুক্ষণ ধরে রাখে বুকে, এদিক ওদিক তাকায়, খেলাচ্ছল করেই খুব স্বাভাবিক আচরণের ভিতর দিয়ে অস্ত্রটি চালনা করে দেয়।

শামীম নামের ছেলেটি ঈষৎ নড়ে চুপ হয়ে যায়।

পার্থক্য শুধু এতটুকুই— আগে মাথাটা ছিল ঘাড়ের উপর খাড়া, মেরুদণ্ডটি সোজা। এখন মেরুদণ্ডটি ভেতরের দিকে বাঁকা হয়ে—মাথাটা ঘাড় থেকে ডান দিকে কাত হয়ে পড়ে।
এ পর্যন্ত অস্ত্রটি বুকে ধরে রেখে আবার তুলে নিয়ে আসে। খায়রুল সোহানের দেহটা হাকিমের বাঁ হাতের দখল থেকে মুক্ত করে দিয়ে হাতের অস্ত্রটি পকেটে ঢুকিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়, যেন কিছুই ঘটেনি।

ঘটে শুধু— ছেলেটির শরীর থেকে তাঁর সমস্ত রক্ত প্রবল রোষে গলগল করে বেরিয়ে পেট বেয়ে দুই উরুর ফাঁক দিয়ে পড়ে সোফায়— সোফা থেকে লাফিয়ে পড়ে মাটিতে। মাটিতে পড়তেই- ছোপমারা সাপ যেন দৌঁড়তে থাকে অস্থির হয়ে।

সবাই আরো চুপ হয়, সোফায় সার ধরে বসা ছেলেগুলিও চুপ। কোন কিছুর আওয়াজে যেন সবার আত্মা ভেতর থেকে বেরিয়ে— একসাথে উড়ে গিয়ে উপরে স্থির হয়ে থাকে। শরীরগুলো পড়ে থাকে যার যার জায়গায়। ঠিক আগের মতো আর একটি আওয়াজের অপেক্ষায়।

মন্তব্য, এখানে...

সিদ্দিক বকর

জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়। প্রকাশিত বই: জীবন্মুক্ত বাতিঘর, (গল্পগ্রন্থ, প্রকাশক- বেহুলা বাংলা, ফেব্রুয়ারি ২০১৭), করাতকাটা ঘুম (গল্পগ্রন্থ, প্রকাশক- ঘোড়াউত্রা প্রকাশন, ফেব্রুয়ারি ২০২২)

আরোও লেখা পড়ুন

কথাসাহিত্য

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ ঢেউ ...: নাঈম আহমেদ

নাঈম আহমেদ জুলাই, ২৮, ২০২৩

তখন রাতের দুই প্রহর। উদাম আসমান। ফকফকা চান্নি। চান্নি দেখা যায়। তবে চান দেখা যায় না। ঘাড় বাঁকাতে হয়। জলিবনমুখী কাঁচা রাস্তাটি ফসলী জমিন বেবচ্ছেদ করে কিছু দূর গিয়ে দুই দিকে দুই বাহু মেলে দি�

কথাসাহিত্য

অণুগল্প : বাঁজা ...: আখতার বানু শেফালি

আখতার বানু শেফালি মে, ১৩, ২০২৩

বারান্দার বেড়ায় হেলান দিয়ে মুখ শাড়ীর আঁচলে ঢেকে মাটিতে দুই পা ছড়িয়ে বসে সুর করে কাঁদছিলো ময়না। নতুন বউ নিয়ে ঘরে থেকে তার স্বামী একসময় খেঁকিয়ে উঠলো,চুপ কর মাগী আর কান্দিস না, তোর মতো বাঁজা মে�

কথাসাহিত্য

অণুগল্পযাচাইয়ের কষ্টিপাথর ...: বিলাল হোসেন

বিলাল হোসেন মার্চ, ০২, ২০২৩

যখন একটি অণুগল্প পাঠ করি, তখন এমন এক উচ্চতায় নিবিষ্ট করি আমার মন আর মগজ; প্রকৃতপক্ষে অই রকম হয়েই যায়;—আমার ভেতরে একধরণের অপারশূন্যতার সৃষ্টি হয়; বলা ভাল: আমি আসলে জাগতিক ভর/ বলের মধ্যে থাক�

কথাসাহিত্য

অণুগল্প : মধ্যরাত্রির গল্প ...: সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী

সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী ফেব্রুয়ারী, ১৬, ২০২৩

প্রথম যেদিন করবীকে সমস্ত জামাকাপড় খুলে জি টি রোডের সুনসান রাস্তায় মাঝরাতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে হয়েছিল, ওর রাগ হয়নি, লজ্জাও না। এমন কতোবার ওকে ছেলের জন্য নিজের লজ্জা ছাড়তে হয়েছে! ওর খা

কথাসাহিত্য

অণুগল্প : সে ...: পাতা কুড়ানি

পাতা কুড়ানি ফেব্রুয়ারী, ১৬, ২০২৩

আমি তাকে কোনো সান্ত্বনা দিতে পারি না। উপযুক্ত শব্দই জোটেনা আমার। ভয় হয় পাছে আমার অনুপযুক্ত অপ্রাসঙ্গিক শব্দে তার গভীর অনুভূতি খেলো হয়ে পড়ে!কিন্তু তবুও অনেক সময় আমি ভীষণভাবে কর্তব্যত�

কথাসাহিত্য

অণুগল্প : ছুরি ...: ব্রতী মুখোপাধ্যায়

ব্রতী মুখোপাধ্যায় ফেব্রুয়ারী, ১৬, ২০২৩

ছুরি, পেছন দিক ধরেই। বুকের থেকে যখন একটু দূরে, যার হাতে ওই ছুরি আমি তার হাত ধরে বললাম— আমাকে কেন?জামা ততক্ষণে রক্তে ভিজে গেছে, অসম্ভব যন্ত্রণা হওয়ার কথা, কিন্তু বিস্ময়ে সেই যন্ত্রণা চাপা পড়

logo

বিষয়সমূহ >
কবিতা গল্পসরগম উপন্যাস অণুগল্প ও অণুগল্প বিষয়ক গদ্যধারা সাক্ষাৎকার রিভিউ এক্সিবিশন নাটক চলচ্চিত্র ধারাবাহিক বিশেষ-সংখ্যা বই নাটক দল

সাম্প্রতিক পোস্ট >

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্প

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্...

কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর

মে, ২৪, ২০২৪

অরুণরাগের লগ্নে

অরুণরাগের লগ্নে

হাসিন এহ্সাস লগ্ন

মে, ২৩, ২০২৪

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ ঢেউ

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ...

নাঈম আহমেদ

জুলাই, ২৮, ২০২৩

সর্বাধিক পঠিত >

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্প

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্...

কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর

মে, ২৪, ২০২৪

অরুণরাগের লগ্নে

অরুণরাগের লগ্নে

হাসিন এহ্সাস লগ্ন

মে, ২৩, ২০২৪

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ ঢেউ

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ...

নাঈম আহমেদ

জুলাই, ২৮, ২০২৩

সর্বাধিক পঠিত >

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্প

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্...

কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর

মে, ২৪, ২০২৪

অরুণরাগের লগ্নে

অরুণরাগের লগ্নে

হাসিন এহ্সাস লগ্ন

মে, ২৩, ২০২৪

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ ঢেউ

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ...

নাঈম আহমেদ

জুলাই, ২৮, ২০২৩

সাম্প্রতিক পোস্ট >

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্প

জাতীয় কবি ও তার কথাশিল্...

কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর

মে, ২৪, ২০২৪

অরুণরাগের লগ্নে

অরুণরাগের লগ্নে

হাসিন এহ্সাস লগ্ন

মে, ২৩, ২০২৪

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ ঢেউ

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ...

নাঈম আহমেদ

জুলাই, ২৮, ২০২৩

বিষয়সমূহ >

কবিতা গল্পসরগম উপন্যাস অণুগল্প ও অণুগল্প বিষয়ক গদ্যধারা সাক্ষাৎকার রিভিউ এক্সিবিশন নাটক চলচ্চিত্র ধারাবাহিক বিশেষ-সংখ্যা বই নাটক দল

logo

  • স্বত্ব© দেশলাই ২০২৩
  • কারিগরি সহযোগিতায় হুমায়ুন কবির
  • লেখা পাঠাতে
  • বিজ্ঞাপন
  • ডোনেশন
  • ইবুক
  • যোগাযোগ
  • স্বত্ব© দেশলাই ২০২৩
  • কারিগরি সহযোগিতায় হুমায়ুন কবির
  • লেখা পাঠাতে
  • বিজ্ঞাপন
  • ডোনেশন
  • ইবুক
  • যোগাযোগ