কামরুজামান জাহাঙ্গীরকে পড়বার পড়াবার, জানবার জানাবার, বুঝবার বুঝাবার, নানা উপায় থাকতেই পারে। জন্মমাত্র তাকে আমরা চিনি না। আমরা তাকে চিনি তার কার্যক্রমে। লিটলম্যাগ, গল্প-উপন্যাস এবং গুটি কয়েক প্রবন্ধ-নিবন্ধের মধ্যে তার অন্তর্গত ভাবনার যে বিস্তার আছে তার বার্তা-তরঙ্গ দিয়েই আমরা তাকে চিনি। পেশা ডাক্তারি, নেশা লেখালেখি। এই দ্বৈত সত্তার বিরোধ-বৈপরিত্য, স্মৃতিমুখর আত্মবৎ আততো আনন্দ তিনি তুমুলভাবে উপভোগ করতেন, তাঁর জীবন-যাপন এরই স্বরূপ বিরূপ প্রভাব প্রবাহের প্রণোদনায় প্রাণবন্ত। একমাত্র আমাদেরই আছে তাঁর সাকল্য সাহিত্যকর্মের উত্তরাধিকার। সংগতই তাকে নিয়ে আলোচনা অপরিহার্য।
‘উপন্যাসের বিনির্মাণ উপন্যাসের যাদু’ বইয়ে প্রিয় লেখকদের গল্প উপন্যাস এবং সাহিত্য ভাবনা নিয়ে নানান আলোচনার মধ্য দিয়ে মূলত তার চিন্তা-চেতনার কুটিনাটি এবং আত্মোপলব্ধিটুকুই প্রকাশ হয়েছে। লাফ দেবার আগে যে দৌড় সেই দৌড় নিজস্ব সৃষ্টি প্রয়াসের আগে যে প্রস্তুতি তারই আরেক নাম। তার দৃষ্টিতে নিজস্বতা নির্ণায়ক অনুষঙ্গ অর্জনের চেষ্টায় যথেষ্ট মুগ্ধতা আছে।
কালো অক্ষরে পরিপূর্ণ পত্রে চোখ ফেললেই হয় না, পাঠ করতে হয় অভিনিবেশে। এই প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় পড়তে থাকা এবং লিখতে থাকার নিষ্ঠা। বোধ করি এ কারণেই কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের পাঠ প্রাচুর্য বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পাঠ প্রাচুর্যে প্রাণবান একজন লেখক সৃষ্টির অসীম তাড়নায় তাড়িত না হয়ে পারেন না। সৃষ্টির অভ্যন্তরীণ শক্তির সৌন্দর্য অনুসন্ধানে অক্লান্তকর্মা কামরুজ্জামান নিরন্তর পড়েছেন অতঃপর লিখেছেন। লেখায় মুক্তো ফলাবার কালে তাঁর অকাল প্রয়াণ আমাদের ভীষণ বিপর্যস্ত করে দেয়।
কথায় শিল্পিত প্রকাশ যখন সাহিত্য হয় তখন সাহিত্যেরও কথা তৈরি হয়। সঙ্গতই কথাসাহিত্য এবং সাহিত্য কথার মর্মমূল প্রোথিত মূলত জীবনবোধের সামগ্রিকতায়। কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর নানা অর্জন বর্জন গর্জন এবং সৃজনে যে ভাব অনুভবের খেলা খেলেন তাঁর মূল মন্ত্রণা আসে তাঁর পাঠ প্রস্তুতির প্রাচুর্য থেকে। বিশ্ব সাহিত্যের নানা শাখা-প্রশাখা পর্যবেক্ষণের ঘোর তার কাটে না। বাংলা সাহিত্যের প্রাথমিক পর্যায় থেকে সমকালের অখ্যাত-বিখ্যাত, পরিপক্ক কিংবা অকালপক্ক সবাই-ই তার পাঠ্য। প্যারিচাঁদ মিত্র থেকে হাল আমলের আহমদ জসিম, অনিন্দ্য আসিফ, শাদমান শাহিদ এর মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ সবাইকে তিনি গভীর মগ্নতায় পাঠ করেন। একেবারে তরুণ লেখকদের প্রতি অগাদ অনুরাগ এবং অনুপ্রাণনা তাঁর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তাঁকে যতো জানা যায় ততই অনিবার্য মনে হয় যে, একজন লেখক একজন ভাল সংগঠকও হবেন। লেখক এবং সংগঠকের গড়নমুখী কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের অবিজ্ঞাত অভিজ্ঞতা অর্জনের টান একটু বেশিই মনে হয়।
১০টা শিরোনামের ক্রমধারা- ১. উপন্যাসে জাদু, মিথ, স্বপ্নবাস্তবতা, ২. লীলায় দ্রোহে কমলকুমারের উপন্যাস, ৩. গোরা: রবীন্দ্র ভাবনার যোগফল, ৪. ধুলোমাটির মানবসকল, ৫. তার বিষাদ তার সিন্ধু, ৬. কাব্যগন্ধী দুই উপন্যাস, ৭. কায়েসের উপন্যাসে নির্জন দ্রোহ, ৮. মাহমুদুল হক: উপন্যাসই যার স্বোপার্জিত স্বাধীনতা, ৯. জহিরের জাদু জহিরের বাস্তবতা, ১০. উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ : একটা পর্যালোচনা। এই ১০টি শিরোনামের একটি বই ‘উপন্যাসের বিনির্মাণ উপন্যাসের যাদু’ বা একটি ঘরে অনেকগুলো জানালা, অনেকগুলো দিগন্ত, বলা যায় অনেক দিগন্তের সমাহার। যতোদূর চোখ যায় তত দূর চায়- বাহ্যিক মুদ্রিত অক্ষরের সরু লাইনগুলো বহু বর্ণিল শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে আরো অনেক অনেক মত-পথে মিলিয়ে যায় ও চৈতন্যের গহীনে ঝেঁকে বসে নানা রঙ রূপ-রসের বিপুল বৈচিত্র বৈভব বিহরণের বৈঠকি ব্যাকুলতায়। ভাবনায় পুলক বোধ করি যে, লেখক তার নিজের অন্তর্জগতের প্রগতিশীলতা উন্নত রুচি নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা অন্তরে পৌঁছে দেবার তাড়নায় তাড়িত থেকেছেন আমৃত্যু।
কেন লিখি? সময় এবং বাস্তবতা লেখালেখিতে কি প্রভাব ফেলে ইত্যাদি নানা প্রশ্নের মুখোমুখি নিজেকে দাঁড় করিয়ে উত্তর অন্বেষনে তৎপর, নানা ধ্যান-ধারণায় নিজেকে সজ্জিত করা আবার ভেঙ্গেচুড়ে নির্মাণ করা, নিরন্তর এই ভাঙ্গাগড়াটা প্রত্যেক মহৎ শিল্পীর থাকে, থাকবেই। নিজের মধ্যে লেখক সত্তার অস্তিত্ব উদ্ভাবনের বিস্ময়, নিজের অন্তরে অন্য দিগন্ত, অন্য স্বাধীনতা উদযাপনে কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর বলেন- ‘লেখক এক সার্বভৌম সত্তার নাম, সেখানে কাউকে কর দেয়ার বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক।’
যাপিত জীবনের কেন্দ্রীভূত উচ্চারণ রাজনীতি। দেহের উপর মাথা যেমন পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে এবং জীবন যাপনে রাজনীতির ভূমিকাও অভিন্ন। মাথা ছাড়া দেহ এবং রাজনীতি ছাড়া জীবন সমার্থক। মাথায় পচন ধরলে দেহের বিশালত্বে কিছু যায় আসে না, তেমন রাজনীতি নষ্ট হলে সমাজ সংসার সবই কুলষিত হয়ে যায়। তাইতো বলি- রাজনৈতিকতা ছাড়া কোনো সৃজনশীলতা সম্ভব নয়। সর্বজনীন রাজনৈতিকতা আর সর্বজনীন সৃজনশীলতার সমন্বয় ছাড়া জীবনের কোন সৌন্দর্যের প্রকাশ সম্ভব নয়। এইসব ভাবনা যথেষ্ট স্বচ্ছতায় ধারণ করে লেখক, পাঠক বা আলোচক সম্পর্কে কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর যেভাবে বলেন-
‘সাহিত্য সম্পর্কে এই যে কয়েকজন সম্পর্কে আমি কথা বললাম, এই কথাগুলো আমাকে বলার রাইট কে দিয়েছে? আমিতো লেখক বিশ্লেষণের কোন ওহি নাযেল হওয়া কামেল নই। আমি এটা বলতেই কেন যাবো? আমি কি সময়ের পাহাড়াদার? তাহলে এই যে কথাবার্তায় নিজেকে জড়িয়ে ফেললাম। এটা কে মানবে, না- মানবেই কে? এখানেই একজন লেখকের সাথে একজন পাঠকের চূড়ান্ত বোঝাপড়ার পালা চলে আসে। একজন লেখক কখন লিখে থাকেন? কে তাকে লিখতে বলছে বা বাধ্য করছে? কিছু না লিখলে কি হয়? তিনি যখন কিছু লিখে থাকেন তখন কি একাই লিখে থাকেন! কথাক্রমে বলতেই হয়, এই যে ৭১-এ ৭ই মার্চ শেখ মুজিব রেসকোর্স ময়দানে স্মরণীয় ভাষণটি দিলেন তা কি একাই বহন করছেন? একাই এতো কথা বলছেন! এই যদি সত্য বলে ধরে নিতে হয়, তার সাথে যে সাড়ে সাত কোটি মানুষ আছেন তারা তাহলে কিছুই না? এখানেই জন-সংস্কৃতির বিশালত্ব একটা ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে। মানুষ কখনো একা একা কিছু করতে পারেন না। মানুষ তার সত্তার অংশীদার হয়ে সব কথাই বহু কথার সমন্বয় থেকেই বলেন। একজন লেখকও একা একা কথা বলেন না। তিনি সমাজে রাষ্ট্রে তার নিজের কথাগুলো তার মতো করে প্রকাশ করছেন মাত্র। আমি বলতে চাচ্ছি, তার যে সৃজনশীলতা, ঈশ্বরত্ব, দৃষ্টিময়তা এর সাথে বহু মানুষ থাকেন। লেখক একজন কম্পোজিটর মাত্র। তিনি সৃষ্টিমুখর নকলবাজও বটে। একজন পাঠক বা আলোচক যখন কথা বলেন তখন তিনিও একা একা কথা বলেন না বা কথা দ্বারা শাসিত হন না। এরও অংশীদার সবাই। তাহলে একজন আলোচক বা আলোচকের বাহাদুরিটা কোথায়? বহুজনের ভেতর দিয়ে বহুজনের হয়ে একা একা প্রকাশ করার ঈশ্বরত্বই তার বাহাদুরী। এখানেই সৃজনশীলতার মাধুর্য প্রকাশিত।’
যে জীবনের গল্প মানুষের মনে গেঁথে দেবে ধর্ষণের মোহ, অন্যের অধিকার হরণের প্ররোচনা, বিত্ত বৈভবের ভরঙ্গে চিত্তের ঐশ্বর্য্য দান করে দেবার পুঁজিবাদী ঝোঁক, বিত্তের জয়ে চিত্ত ক্ষয়ের তাণ্ডব- সে জীবন এবং তার গল্পের বিপরীত গল্প নির্মাণের নিষ্ঠায় নিষ্ঠাবান কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরকে এ জন্যই জানা দরকার।
জীবন গল্পময়। নানা পরিবেশ প্রতিবেশে জীবন এবং যাপনের নানা অলিগলি ঘুরে কুড়িয়ে আনা অভিজ্ঞতা প্রদ্যোত প্রাবল্যে প্রধূমিত হয় পাঠকের চৈতন্যে। গল্পের ভিত্তি রণে না মনে তা নিয়ে কারও এতো মাথা ব্যথা নেই। গল্প গাঁথুনির মুন্সিয়ানায় লেখক যে প্রপঞ্চ প্রকাশ করেন সে সত্য হৃদয়ঙ্গমের বাসনা ছাড়া পাঠকের অন্য কোন উদ্দেশ্য সাধারণত থাকে না। অপসৃত স্মৃতির আলো অথবা অন্ধকার অক্ষরে অক্ষরে অলঙ্কৃত রোজনামচা পাঠযোগ্য হলেইতো আলোচনা, গল্প কিংবা কবিতা গ্রন্থের জন্ম হয়। শৈশবোত্তীর্ণ লেখকের অতীত আনন্দ এবং বেদনা বর্তমানের জাবরকাটায় যদি শিল্পমাত্রা পায় তাহলেই গ্রন্থরূপ আত্মপ্রকাশ করে। ‘উপন্যাসের বিনির্মাণ উপন্যাসের যাদু’ও তেমন এক ঘটনা। বইটি গ্রন্থিক কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের একটি আলোচনা গ্রন্থ। আলোচনা নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা সহজ মনে হলেও আমার কাছে এত সহজ নয়। এই বিষয়ে লিখবার সাহস করেছি- এই সাহসটুকুই যা সম্বল। বলা যায়- বন্ধু চেনা যায় নিদানে, ঘোড়া চেনা যায় ময়দানে, মাঠে আর পাঠে চেনা যায় লেখককে।
যুগে যুগে একই সত্য ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতায় ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ভিন্ন ভিন্ন রঙে ঢঙে ভাষায় এবং চিন্তায় আত্মপ্রকাশ করে। মানুষের সুখ-দুঃখ, শোক-তাপ, প্রেম-ভালবাসা, ক্ষোভ-ঘৃণা সমাজ রাষ্ট্রের নানা কার্যক্রম এবং কুকর্মের সমন্বয়ে কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর যে গল্প উপন্যাস পড়েছেন এবং লিখেছেন তাতে তার নিজের আত্মোপলব্ধি ব্যক্ত করে ব্যক্তি হয়ে উঠবার সাধনাটুকু খুবই স্পষ্ট। তাঁর আলোচনার নিজস্ব ভাষা বৈশিষ্ট্যে আছে বিশেষ বিস্ময়ের আদত আস্বাদ।
চিত্ত এবং বিত্তের দ্বন্দ্বটা দৃশ্যমান হলেও আমাদের চাওয়াটা বরাবরই ভারসাম্যে। এক্ষেত্রে কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর নিতান্ত প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত অর্থের জন্য বিশেষ ছুটাছুটি করেননি। জীবন যেমন যাপনের ব্যাপার শিল্প-সাহিত্যও তেমন চর্চার অধীন। তিনি শুধু এই অধীনতাটুকু ধারণ করেছিলেন নির্দ্বিধায়। পাঠ প্রস্তুতির পর্বে জগৎবিখ্যাত থেকে অখ্যাতজনও তাঁর কাছে গুরুত্ববহ ছিলো। তিনি বুঝতেন- অখ্যাতদের শিল্পচর্চা থেমে গেলে বিখ্যাতরা হারিয়ে যাবেন।
চিরায়ত জীবন প্রবাহের নানা স্তরে রাজনীতি ক্রিয়াশীল থাকে। একমাত্র জীবন এবং যাপনকে কেন্দ্রে রেখেই আবর্তিত হয় সকল ভূ-রাজনীতি। সৃষ্টিতে রাজনীতি, ধ্বংসেও রাজনীতি, আমি রাজনীতি করি না- সেটাও রাজনীতি, রাজনীতি বিরোধী রাজনীতি, রাজনীতি মুক্ত রাজনীতি মূলত রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে জীবজগতের কিছু নেই। সর্বোপরি রাজনীতির ধরন-ধারণের প্রশ্নটাই হচ্ছে মুখ্য অথবা বিবেচ্য বিষয়। কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের সৃজনকর্মে মার্কসবাদী রাজনীতির বহুমাত্রিক প্রতিফলন খুবই স্পষ্ট। কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের গল্প বিষয়ক আলোচনা, গল্প, গল্পের মানুষ এবং মানুষের গল্প বিন্যাসে সমাজ রাষ্ট্রের সকল ইতরামির রাজনৈতিক সূত্রায়ণ বিশেষভাবে পরিলক্ষিত। তাঁরই আরেক সহোদর বদরুজ্জামান আলমগীরের গল্পে মিথ, রাজনৈতিকতা এবং সৃজনশীলতার দুর্দান্ত সমন্বয় দেখি। এই ধারায় মোয়াজ্জেম আজিমের চেষ্টাও আশাব্যঞ্জক। আর অতি সতর্ক শিকারির ধীরোদাত্ত স্থির পদক্ষেপে সিদ্দিক বকর তাঁর গল্পের শিরায় শিরায় আরও তীব্রতায় জ্বলজ্বল করেন।
দেশ কাল সমাজে নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ এবং প্রতিষ্ঠার তাড়না এক সহজাত সম্মোহক। এই সম্মোহনে সম্মোহিত কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরকে তাঁর সকল আলোচনা-সমালোচনায়, গল্প-উপন্যাসে তাঁর জল-মাটি-হাওয়া, তাঁর মানুষজন, তাঁর দেশ, তাঁর রাজনৈতিক দর্শন সর্বোপরি তাঁর আত্মসন্ধিৎসা মিলিয়ে নিয়ে আলাদাভাবেই চেনা যায়। জীব-জনতা এবং প্রকৃতির প্রেমবৈচিত্র্যের দোলাচল আর তাঁর স্বপ্ন, ইতিহাসলগ্ন মগ্নতা মন্থন করে আমরা আমাদের ঋদ্ধ করতে পারি। সমকালীন শিল্প-সাহিত্যচর্চার নানান প্রবণতাও তাঁর দৃষ্টি এড়ায় না। গল্পের মানুষ এবং মানুষের গল্প আলোচনা করতে করতে মানুষের কাছে যাওয়া আর মানুষের কাছ থেকে লিখবার রসদ সংগ্রহ করবার আনন্দ উদযাপনে তিনি বিলিন হয়ে যেতেন। শিল্প-সাহিত্যের নামে নানা অনাচার দেখে তিনি বলতেন- ‘সাহিত্যের সাধন-ভজন-নিমগ্নতার কাল ক্রমেই ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।’ ‘সাহিত্যও এখন ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজের মতো হয়ে যাচ্ছে!’ এই হয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে তাঁর সরব সংগ্রামটাই ছিলো আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। অসাধারণ এই শিল্প-সাহিত্যের সংগঠক লেখালেখিতে কখনও হতাশ হননি। তিনি বলেন- ‘একটা লেখা তখনই নতুন জীবন পায়, জীবনে জীবন মিলে যখন মাধুর্যে আলাদা জগৎ তৈরি করে।’ ইতি ‘উপন্যাসের বিনির্মাণ উপন্যাসের যাদু’।