ভাই খসরু, যে বয়েসে ‘গরু চতুস্পদ জন্তু, ইহাদের দুইজোড়া পা ও একজোড়া শিং আছে, ইহারা খাস খায়–’ ইত্যাদি রচনা লিখতে বসে নম্বর তোলার চিন্তায় লোকে ভেবে ভেবে রোগা আধমরা হয়ে যায়, সে বয়েস আমার অনেক আগেই মেঘে মেঘে পার হয়ে গেছে। আমাদের এই পোড়াকপাল দেশের প্রতি বছর বিদেশী মুদ্রা অর্জনের যে সামান্য কোঠাটি আছে তার অর্ধেক জুড়ে রেখেছে পাট বলে যে সোনালী তন্তুটি, এবং লুণ্ঠিত সর্বস্বান্ত হাজার হাজার বিধস্ত গ্রামের প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ নাঙ্গাভূখা পরিবার যে চাষাবাদের সঙ্গে জলকাদার রক্তমাংসে একাকার, এমনকি সে সম্পর্কেও আমার সামান্যতম স্কুলপাঠ্য রচনা লেখার যোগ্যতা নেই। এ ব্যাপারে আমার ছেলেমেয়েদের কাছে অনেক আগেই আমি অপদার্থ ও হেয় প্রতিপন্ন হয়ে গেছি। তোমাকে নতুন করে আর কি বলবো। এই দীর্ঘ দুই যুগ ধরে এদেশে সুস্থ চলচ্চিত্র আন্দোলনের একজন ক্ষ্যাপা যোদ্ধার ভূমিকায় হাড়মাস কালি করে, তোমার সব জানা, সব অভিজ্ঞতা ও উপলদ্ধির ভেতর নিশ্চয়ই এই চরম সত্যটি তুমি অনেক আগেই আবিষ্কার করে ফেলেছ যে, কিছু না জানলেই অনেক কিছু বলা যায়, –অর্থাৎ লোকে বলে থাকে, কিছু না জানলেই অনেক কিছু করা যায়, –লোকে করে থাকে। একদিকে জানার সকল পথকেই হতে হবে রুদ্ধ, অন্যদিকে জানার ব্যাপারে নিজের ভেতরে গড়ে তুলতে হবে চরম অনীহা, নির্লজ্জ অনাসক্তি; এই হচ্ছে এদেশের কমবেশি প্রায় সকল শিল্প মাধ্যমে সৃষ্টিতত্বের জগদ্দলের মতো শেকড়গাড়া ভূমিকা। এখন এর পল্লবিত ডালপালায় নৈরাজ্যের বিষফল ছাড়া আর কি-ইবা ধরবে, কি এমন পাওয়া যাবে। জানা ও বোঝার এই ব্যাপারটাকে বড় পরিবারে একটা ইলিশ মাছ কিনে সহজে সমস্যা সমাধানের মতো ভাবতে আমরাও এখন বেশ পোক্ত হয়ে গেছি। ফলে যাদের মাথায় ছিটেফোঁটাও গুবরে পোকার কামড় ছিল, সেই অনড় নীরক্ত অনাসক্তির রাহু গ্রাসে অনিবার্যভাবে তারাও আজ ডোডা মেরে গেছে; সহজে করে খাওয়ার প্রবণতা একটি দেশ ও তার জাতিকে কতো নিঃশব্দে রসাতলের পিচ্ছিল গর্ভে নিক্ষেপ করে থাকে, আমাদের মতো তার এমন জ্বলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত পৃথিবীর সামনে আর কিছু আছে বলে অন্ততঃ আমার জানা নেই। এমন কি এই মুহূর্তে ‘সহজে করে খাওয়া’ কথাটাকে বাঁকা অক্ষরে ছাপুন লিখতেও আমার সাহসে কুলিয়ে উঠলো না, সহজে কম্পোজ করার পাউডার মাখা নরোম গোল গালে তাতে আদরের এক ফোঁটা টোকা পড়ে রইল। এদেশের চলচ্চিত্রের সমস্যাটাকে তাই আলাদাভাবে বিচার করে দেখবার চেষ্টা অযৌক্তিক হবে; সর্বক্ষেত্রেই যেখানে ভয়াবহ নৈরাজ্য সেখানে একা চলচ্চিত্রের ঘাড়ে দোষ চাপানোটা মোটেই সত্যনিষ্ঠ হবে না, আমার ধারণা কেবল আমরা উভয়েই নই, আমাদের মতো যারা সব পরিস্থিতিতে সত্য কথার ধার ঘেঁষে চলে তারাও এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী। কিন্তু এখানে একটা কথা আছে। চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এ ব্যাপারে তারা নিজেরা কতোটুকু মাথা ঘামিয়েছেন, কিংবা আদৌ মাথা ঘামানোর কোনো সত্যিকার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন কি না। এবং এই প্রশ্ন এই জন্যেই ওঠে যে পৃথিবীর সামনে খুব করুণ ভাবে বাংলাদেশের পরিচয় দরিদ্রতম দেশ হিসাবে, এবং মাথাপিছু আয়ের যে সর্বনিম্ন গড় দেখানো হয় তার পেছনেও আছে ন্যাক্কারজনক কারচুপির মামদোবাজি। এত কিছুর পরেও যেখানে প্রতি বছরে চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে তাদের কিছুটা ভাবতে হবে বৈকি। মাত্র এই কিছুদিন আগে আবদুস সামাদ নিঃসঙ্কোচে লিখেছেন “অদূর ভবিষ্যতে চলচ্চিত্রের মৌলিক প্রয়োজন নিষ্প্রভ হবার কারণে পঁচিশ বছরে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলি হয়তো বৈপ্লবিক সমাজ পরিবর্তনের সাথে সমন্বয় হারিয়ে গুদামজাত হয়ে পড়বে–”। বলা বাহুল্য এই শিল্পটির সঙ্গে দীর্ঘ কাল যাবৎ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত থাকার পর তিনি এই মন্তব্যটি করেছেন। অনুমান করতে পারি কতো সাবধানতার সঙ্গে তাঁকে এই ‘হয়তো’ শব্দটি বসাতে হয়েছে, কিংবা মন্তব্যটিকে চূড়ান্ত রূপ দেবার আগে তাঁকে কিভাবে আবার সবকিছু চুলচেরা বিচার করে নিতে হয়েছে, কেননা ঠিক সেই মুহূর্তটি থেকে তিনি যে এক তুমুল তাণ্ডবমুখর হট্টমালার ঝলমলে জগতে সম্পূর্ণ একা হয়ে যাচ্ছেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস তিনি তা জানতেন। অথচ এতোদিন আমরা উল্টোটাই শুনে এসেছি, পর্বত প্রমাণ সাফল্যের ন্যাকা ন্যাকা হাসি দেখতে দেখতেই তো আমাদের মাথার চুল পেকে গেল। কিন্তু এই ব্যর্থতা কেন? প্রতিভাধর শিল্পী, যোগ্য কলাকুশলী কিংবা আধুনিক যন্ত্রপাতি, অভাব কোনটির? এফ, ডি, সি, নিয়ে ছাতি ফাটানো অহংকারের কথা কে না শুনেছে। স্টুডির সংখ্যাও তো আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি। তাহলে? দেখা যাক সামাদ নিজে কি ভেবেছেন: “চলচ্চিত্রগুলো দর্শনমাত্রই আমাদের মনে হয় পুরাকালের মানুষের সামাজিক সমস্যা নিয়েই আমরা আজও ব্যস্ত। ফলে দর্শকের কল্পনাশক্তিকে আমরা পেছনে ঠেলে দিয়ে তাদের রক্ষণশীল করে তুলছি। বর্তমানকে তুচ্ছ করে অতীতের স্বপ্নে দর্শকগণ নিমজ্জিত। এতে সমাজের প্রগতিশীল উপকরণগুলো লুপ্ত হয়ে পড়ছে, বিস্মৃত হচ্ছে।” দীর্ঘ দুইযুগ ধরে এক নাগাড়ে যে সংলাপগুলি আমি তোমাদের অক্লান্ত শুনিয়ে এসেছি নিশ্চয়ই এই মুহূর্তে তোমার তা মনে পড়ছে। ‘কান খুল কর শুনলো’, ‘ইয়ে কভি নহি হো সকতা’- ‘ছেলেবেলায় মা বাবাকে হারিয়ে–’, ‘না না না, চৌধুরী বংশের এতবড় অসম্মান আমি কিছুতেই হতে দেবো না–’, ‘খোকা, তুই ফিরে আয়–’ আমার সংগ্রহের এহেন শতাধিক বৃটিশ আমলের সেই খসখসে শুকনো খড় চিবানো আজো হয়, আমরা বেরতে পারিনি, নতুন করে এই সমীক্ষাটি আবার তা’ মনে করিয়ে দিল। জানি তাঁর কিছু, হবে না। মনে হয় ঐ জগতের চারপাশের আর পঁচিজনের চেয়ে তাঁর চোখ কান বোধহয় একটু খোলা, কেননা প্রকারান্তরে তিন চলচ্চিত্র নির্মাণের নামে চরম স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগটিকেই অত্যন্ত ভদ্রতার সঙ্গে নরোম নিরীহভাবে তুলে ধরেছেন। বহু, নামীদামী পুরোহিতকুলের মতামতকে একপাশে ঠেলে ঐ সমীক্ষাটির ওপর এমন অপরিসম গুরুত্ব দেবার (আরোপ নয়) কারণ, প্রথমত আমি যা বলতে চাই তার সবটুকুর হুবহু প্রতিধ্বনি তাঁর সংক্ষিপ্ত অথচ নির্মমভাবে সত্য সমীক্ষাটির ভেতরে আমি খুঁজে পেয়েছি; দ্বিতীয়ত আমাদের চলচ্চিত্র জগতেরই তিনি একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি। আজ থেকে প্রায় একযুগ আগে এখনকার একজন নামজাদা পরিচালক এমনভাবে আমার বাথরুমে চেন টেনেছিলেন যে তাতে চার গ্যালন জল গেলা সিসটার্নের লোহার ঢাকনাটা গোটা বিশ্ব সংসারের ওপর প্রচণ্ড বজ্রাঘাতের মতো হুড়মুড় ক’রে আছড়ে পড়েছিল। দানব যে দানব শক্তি চট্টোপাধ্যায়, ‘কি কুচ্চিৎ কি কুচ্ছিৎ গো–’ বলতে বলতে সে-ও ভয়ে হামাগুড়ি দিয়ে খাটের তলায় লুকিয়ে গিয়েছিল। সেই দিনই বোঝা উচিৎ ছিল– তাঁর হবে; আমাদের কিছু হবে না। তাঁর হয়েছে। আমাদের কিছু, হয়নি। ভবিষ্যতে কখনো যে হবে, এমন আশা-ও নেই; কেননা ‘আশালতা কলমীলতা ভাসছে অগাধ জলেতে–’ এই গীতটি আমরা গাইতে গাইতে একেবারে ঝাঁঝরা এফোঁড়-ওফোঁড় ক’রে ফেলেছি। এখন নতুন কোনো ছবি মুক্তি পাবার কথা শুনলেই কেন জানিনা আমার বুক ধড়াস ক’রে ওঠে, এই বুঝি আবার বিশ্ব সংসারের মাথায় দড়াম করে ঢেঁকি-মুগুর-লোহাফোহা কিছু একটা আছড়ে পড়লো। আরো একটি ছোট্ট ঘটনার কথা তোমাকে বলি। কয়েক বছর আগে সৌভাগ্যবশতঃ এদেশের একজন কীর্তিমান পরিচালকের সঙ্গে দীর্ঘ সাতঘন্টা আলাপের আমার সুযোগ ঘটেছিল। একটি কাহিনীর খোঁজে তিনি নিজেই অনুগ্রহ করে আমার বাড়িতে এসেছিলেন। আমাদের এই দীর্ঘ আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল যোগ সাধনার উপকারিতা ও গাছ-গাছড়ার বিভিন্ন গুণাগুণ সম্পর্কিত। তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বুঝে নিয়েছিলেন তিনি যা চান আমার তা দেবার সাধ্য নেই, আমিও অনুমান ক’রে নিয়েছিলাম কোন পথে আমার চলা উচিত, কেননা আমরা উভয়েই ছিলাম ভদ্রলোক, সুতরাং সাত ঘন্টা ধ’রে ‘ঘৃতকুমারী থেকে মুসব্বর হয়’ ধরনের আলাপ আলোচনায় সেই ভদ্রতার মাশুল গুণতে হয়েছিল। চলচ্চিত্রের সঙ্গে যাঁরা বিশেষভাবে জড়িত ভালো ছবি সম্পর্কে তাঁদের নিবিড় কোনো আগ্রহ এ যাবৎ তৈরি হয়েছে ব’লে আমার মনে হয় না। ভালো ছবি দেখা কিংবা বোঝার ব্যাপারেও লজ্জাজনক নিরাসক্তি শুধু তাঁদের ভেতরের ঢ্যাবঢেবে অজ্ঞতাকেই তুলে ধরে। নিয়মিত এক বেবি ইসলাম ছাড়া অন্য কাউকে চলচ্চিত্র সংসদ প্রদর্শিত ছবিগুলোতে কখনো দেখা গেছে কি? গেলেও তা হিসেবের মধ্যে পড়ে না, মনে রাখবার মতোও নয়। অথচ আমরা সকলেই তো মেনে নিয়েছি কেবলমাত্র ভালো ছবি দেখেই ভালো ছবি তৈরি সম্ভব, এর চেয়ে বড় স্কুল আর কি আছে। নিছক ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে চলচ্চিত্র নামের এই মাধ্যমটিকে নিতে গেলেও মনে না রেখে কারো কোনো উপায় নেই যে এটি বিংশ শতাব্দীর শিল্প-মাধ্যম, যা সর্বভূক, সর্বগ্রাসী এবং শতকরা একশোভাগ অনুকম্পাহীন। ভাল ছবির প্রসঙ্গ উঠলেই এদের অনেকেই ‘আটফিল্ম আটফিল্ম ব’লে ঠাট্টা-মস্করার ইতর মুখোশ প’রে ভিতরের কুৎসিত দৈন্যদশাকে ঢাকতে চেষ্টা করেন; ভাবখানা এই, ইচ্ছে করলেই যে কোনো মুহূর্তে তাঁরা পকেট থেকে দু’দশখানা অমন আর্ট ফিল্ম ঝনাৎ ক’রে ছুঁড়ে দিতে পারেন। দেশের মানুষ সব সময় যা চেয়েছে তা আর কিছু, নয়, ভালো বাণিজ্যিক ছবি। সমাজের প্রগতিশীল উপকরণগুলি না হয় বাদ-ই দিলাম, কিন্তু যথার্থ বাণিজ্যিক ছবি নির্মাণের জন্যেও তো চাই মেধা। সফল বাণিজ্যিক ছবির ছদ্মনামে নকল ছবির তুলকালাম কাণ্ডে অনেকের পকেট ভরলেও আপামর জনসাধারণের কতখানি মন ভরেছে সে কথা সকলেই জানেন। চুরি-চামারির জেল্লায় জেল্লাদার হয়ে এ যাবৎ যারা পুঁজির পাহাড় গড়ে তুলেছে, তাঁদের ভবিষ্যত কোন আস্তাকুড়ে সে সম্পর্কে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই, কিন্তু নিছক ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার কারণে অপ-সংস্কৃতির এই যে তুমল তাণ্ডবলীলা, জঘন্য বিকৃতি, এর শেষ কোথায়? জামার তালিটিকেও যারা পুরোদস্তুর যথাযথ না রেখে নকল ছবি নির্মাণে অক্ষম তাঁদের কাছে চলচ্চিত্র-শিল্প তো দূরের কথা দেশের একটি ন্যাংটো নগন্য মানুষের-ও কোনো কিছু আশা করবার নেই। চলচ্চিত্রিক সততা অনেক বড় কথা, শৈল্পিক রুচিবোধও পোলার হাতের মোয়া নয়; এইসব ছবির ফ্যালনা উপাদান আর সেগুলির লজ্জাজনক পারস্পরিক সম্পর্কহীনতা দেখে বেহেড মাতালের মাতলামি ছাড়া আর কিছু মনে হয়না কখনো; এর সঙ্গে কারো পাণ্ডিত্যের কোনো সংস্রব নেই। আমাদের চিত্রনির্মাতাদের জগতে কমবেশি ‘আঁতেল’ শব্দটা ‘চাপিস’ ‘গে-লি’ কিংবা ‘আন্ডা পোল্লো, চিলে থাবা দিলে–’ এই সবের সমার্থক; পত্র-পত্রিকার বিভিন্ন ইন্টারভিউ কলামে প্রায়ই আমরা সুস্থ চলচ্চিত্র আন্দোলনের কর্মীদের উদ্দেশ্যে ঐ শব্দবাণটি লক্ষ্য ক’রে থাকি। নিবন্ধ রচনার দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে ইন্টারভিউয়ের সহজ পথে সিগ্রেটের ধোঁয়া উড়িয়ে হাতিঘোড়া মারার প্রবণতার দাসত্ব কখন ঘটে তা’ যাদের চোখকান খোলা তারা। ভালো ভাবেই বোঝেন। স্যাঁতসেতে ভোজবাজী আর যার যার নিজের অবদমিত লালসা-বিকৃতির দংগলমান ক্লেদ,– বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের আজকের রূপরেখা বলতে মোটামুটি আমি এইটুকুই বুঝি। এ হচ্ছে নৈতিকতা আদর্শ আর বাস্তবতার এক ভয়াবহ কবরখানা। এ কি নিছক অন্যমনস্কতা, না কি সুবিধাবাদ নির্দেশিত পথে পরিকল্পিত ধ্বংস-সাধন! প্রগতিশীলতা ও শৈল্পিক দৃষ্টিকোণের নামে অল্প-বিস্তর ভন্ডামীও আমাদের দেখা আছে। শিল্পবোধ কিংবা রুচি বলতে যার কিছুই জানা নেই, বাস্তববাদের এঁদো ডোবাতেও ন্যাংটো হয়ে ব্যাঙের মতো লাফিয়ে পড়লেও মূলত তার কিছুই করবার সাধ্য নেই, এর নাম নিছক নিজের গায়ে কাদা মাখা; এদের কেউ কখনো মনে রাখে না, কিংবা এ সম্পর্কে এদের স্পষ্ট কোনো ধারণাই নেই যে সমাজ সচেতনতা বাস্তববাদের প্রাথমিক শর্ত, নিছক বাপচাচার কেরামতিতে অথবা মাসল্ উচিয়ে মিস্টার ঢাকাও ইচ্ছে করলে বাস্তববাদী হতে পারে না। পাত পাওয়ার জন্য ঝলমলে পোষোকের অর্ডার দিলেই শেষরক্ষা হয়না, তার জন্যে সব দিক দিয়ে তৈরি করতে হয় নিজেকে। যেটি আশংকার কথা তা হলো এই, অপশাসনের সুযোগে একটি জাতির পায়ে কুড়ুল মারার কাজে এদের ভূমিকা আজ কতখানি তা কেউ ভেবে দেখছে না। বিশেষ ক’রে গত দশ বছরে তৈরি ছবির খতিয়ানে এইটুকু দিবালোকের মতোই স্পষ্ট, দেশের মানুষ এইসব ছবির কল্যাণে তাদের দেশ থেকে সম্পূর্ণ নির্বাসিত হয়েছে।
# পাঠ গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মুহম্মদ খসরু সম্পাদিত ধ্রুপদী (নির্মল চলচ্চিত্র আন্দোলনের মুখপত্র) পঞ্চম সংখ্যা আগস্ট ১৯৮৫ থেকে দেশলাই টিম কৃর্তক সংগৃহিত ।